পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সরাদেশে পালিত হয়েছে শুভ মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের শুরু। একই সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্নেরও শুরু হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার থকে। মহালয়ার মাধ্যমে দেবী দুর্গা গতকাল পা রেখেছেন মর্ত্যলোকে। বছর ঘুরে আবারও উমা দেবী আসছেন তার বাপের বাড়ি। পুরাণমতে, অশুভ অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হওয়ার পর চারদিকে শুরু হয় অশুভ শক্তির প্রতাপ। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা। তখন দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। মহালয়ার সময় ঘোর অমাবস্যা থাকে। তখন দুর্গা দেবীর মহাতেজের আলোয় সেই অমাবস্যা দূর হয়। প্রতিষ্ঠা পায় শুভশক্তি।
শাস্ত্রমতে, হিমালয়ের কৈলাশ থেকে সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিবছর দুর্গা দেবী আসেন সমতল ভূমির এই বাংলায়। সঙ্গে নিয়ে আসেন গণেশ, কার্তিক, ল²ী আর সরস্বতীকে। প্রতিবছরের শরৎকালে দেবী দুর্গার এই আগমন হয় নিজ ভূমিতে। বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, এবার দুর্গা দেবী আসছেন নৌকায় চড়ে। আর গমন করবেন ঘোড়ায় চড়ে। ফল-ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে। হিন্দু শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। মহালয়া দুর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত গতকাল থেকেই পূজারীরা দুর্গা মায়ের আগমন ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। হিন্দু ধর্মমতে, মহালয়ার দিনে দেব-দেবীকুল দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। শাস্ত্রীয় বিধান মতে, মহালয়ার দু’টি পর্ব রয়েছে, একটি পিতৃপক্ষ, অন্যটি দেবীপক্ষ। অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের শেষ হয়, আর প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয় দেবী পক্ষের। গতকাল মহালয়া দিয়ে আরম্ভ হচ্ছে সেই দেবীপক্ষ। এদিন গঙ্গাতীরে প্রার্থনা করে ভক্তরা মৃত আত্মীয়স্বজন ও পূর্বপুরুষদের আত্মার মঙ্গল কামনা করেন। গতকাল ভোর থেকে সারাদেশে স্থায়ী অস্থায়ী দুর্গা মন্ডপগুলোতে চন্ডীপাঠ ও পূজা অর্চনার মাধ্যমে দুর্গা দেবীকে আহŸান করা হয়।
সাড়ম্বরে দেশব্যাপী চলছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন। শুরু হয়েছে কেনাকাটাও। রাজধানীর মার্কেটগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়। তেমনি ফ্যাশন হাউসগুলোতে আসছে উৎসবের রকমারি পোশাক। ঋতুবৈচিত্র্যের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক-আশাকে বাহারি রং ঢংয়ের খেল। গত বছরের চেয়ে এবার পূজার সংখ্যা বেড়েছে। দেশের ৩০ হাজারের বেশি মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকায় এবার পূজা হবে ২৩১টি মন্ডপে। সব মিলিয়ে সনাতন স¤প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে এখন দেশজুড়ে সাজসাজ রব।
এবারের দুর্গোৎসব উপলক্ষে সারাদেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দ উৎসব সফলভাবে সমাপ্ত করতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও মূলত গতকাল মহালয়া থেকেই পুজারীরা দুর্গা মায়ের আগমন ধ্বনি শুনতে পান। ২৬ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী। এর মধ্যে দিয়ে পাঁচদিনব্যাপী উৎসবের শুরু। ২৭ সেপ্টেম্বর সপ্তমী। দশমী পূজা ও বিসর্জনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।
পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপু বলেন, এ বছরও সারাদেশে পূজামন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। তবে আগাম বন্যার কারণে বন্যাকবলিত এলাকায় পূজামন্ডপের সংখ্যা কমেছে। এ বছর সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ এলাকায় পূজামন্ডপের সংখ্যা কমেছে। চলতি বছর দেশের পূর্বাঞ্চলে ২ হাজার ৩৫৩টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৬ সালে সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৪৪০টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
পরিষদের তথ্য মতে; এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ৭৭টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। গত বছর ২৯ হাজার ৩৯৫টি, ২০১৫ সালে ২৯ হাজার ৭১টি। ২০১৪ সালে সারাদেশে ২৮ হাজার ৩৫৮টি, ২০১৩ সালে ২৮ হাজার ২০০টি, ২০১২ সালে ২৭ হাজার ৮০০টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবারের মতো এ বছরও রাজধানীতে মন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর ২২৬টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বছর এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩১টি। প্রথমবারের মতো তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা, পল্টন এবং রাজাবাজারে একটি করে মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা পরিষদের তথ্য মতে, বিভাগ অনুযায়ী ঢাকা বিভাগে এবং জেলা অনুযায়ী চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতি বছর পূজামন্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন হিন্দু স¤প্রদায়ের নেতারা। সারাদেশে উৎসবের আঙ্গিকে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের মাধ্যমে সা¤প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিরোধ এবং স¤প্রীতির আহŸান জানিয়েছে তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।