Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইরাকে কুর্দী বিদ্রোহীদের অবস্থানে তুরস্কের বিমান আক্রমণ

প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২৬ এএম, ১৫ মার্চ, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক : রাজধানী আঙ্কারার কেন্দ্রস্থলে এক আত্মঘাতি গাড়িবোমা হামলার একদিন পর গতকাল তুরস্কের যুদ্ধবিমানগুলো ইরাকের উত্তরাঞ্চলে কুর্দী বিদ্রোহীদের ঘাঁটিগুলোতে বোমাবর্ষণ করেছে। আঙ্কারায় গাড়িবোমা হামলায় অন্তত ৩৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তুরস্কের রাজধানীতে ৫ মাসে এটা তৃতীয় হামলা।
আঙ্কারায় সর্বশেষ এই হামলার দায়িত্ব তাৎক্ষণিকভাবে কেউ স্বীকার করেনি। এতে ৩৬ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ১২০ জনের বেশি আহত হয়েছে। অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তবে একজন তুর্কী কর্মকর্তা বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, তারা বিশ্বাস করেন যে আত্মঘাতি বোমা হামলাকারীদের মধ্যে একজন মহিলা ছিলেন বেআইনী ঘোষিত কুর্দীস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)’র সঙ্গে যার সম্পর্ক রয়েছে। এই হামলায় অনেক যানবাহন বিস্ফোরিত হয় ও আগুন ধরে যায়।
রাজধানী আঙ্কারায় গাড়িবোমা হামলার কয়েকঘণ্টা পর তুর্কী জঙ্গীবিমানগুলি ইরাকের উত্তরাঞ্চলে পিকেকে’র ঘাঁটি ও অস্ত্র গুদামগুলোতে বোমা বর্ষণ করে। সেনাবাহিনীর উদ্বৃতি দিয়ে তুরস্কের সরকারি বার্তা সংস্থা আনাতোলিয়া এ খবর জানায়।
আঙ্কারায় গাড়িবোমা হামলায় আহতদের মধ্যে আরো তিনজন মারা গেছে সরকার এটা যখন ঘোষণা করে তখন উত্তর ইরাকে বিমান হামলার এই খবর আসলো। তুরস্কের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন নিহতের সংখ্যা ৩৭-এ উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত একজন হামলাকারীও রয়েছে।
সেনাবাহিনী বলেছে, পিকেকের অবস্থানে নির্ভূলভাবে আঘাত হানা হয়েছে। বিদ্রোহীদের একজন মুখপাত্রও তুর্কী বিমান হামলার কথা নিশ্চিত করেছে। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির সুস্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়নি।
রাজধানী আঙ্কারায় সর্বশেষ গাড়িবোমা হামলার সঙ্গে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি সামরিক বাসের বহরে আত্মঘাতি বোমা হামলার মিল রয়েছে। ওই হামলায় ২৯ জন নিহত হয়। তবে এবার বেসামরিক লোকদের টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে। পিকেকের সঙ্গে সম্পর্কিত কুর্দীস্তান ফ্রিডম ফ্যালকন (টিএকে) ফেব্রুয়ারি হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে তুর্কি সামরিক অভিযানের প্রতিশোধ নিতে এই হামলা চালানো হয়। টিএকে পর্যটন এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আরো হামলার হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছিল।
কুর্দীদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে পিকেকে ১৯৮৪ সালে হাতে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়ার পর থেকে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। পরে গ্রুপটি তাদের দাবি সংশোধন করে বৃহত্তর স্বায়ত্বশাসনের দাবি করছে।
এদিকে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগলু বলেছেন, তার দেশের কাছে সুস্পষ্ট তথ্য রয়েছে যে আঙ্কারায়  রোববারের এই হামলার পেছনে ছিল পিকেকে। তিনি বলেন, তদন্তের বিস্তারিত শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।
একজন তুর্কী কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারীদের একজন মহিলা ছিল যে পিকেকের সঙ্গে জড়িত। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম তার নাম শেহের কাগলা ডেমির বলে জানিয়েছে। আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে তাকে সনাক্ত করা হয়েছে। কর্মকর্তারা আরো বলছেন, ব্যস্ত বাণিজ্যিক ও পরিবহন কেন্দ্রস্থল কিজিল স্কোয়ারের কাছে বাসস্টপকে টার্গেট করে এই গাড়ি বোমা হামলা চালানো হয়ে। এর কাছাকাছি পার্লামেন্ট ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বিদেশী দূতাবাসগুলোর অবস্থান।
সংবাদদাতারা বলছেন, ফেব্রুয়ারিতে হামলা চালানোর পর এত তাড়তাড়ি চরমপন্থীরা রাজধানীতে আবারও হামলা চালানোর সামর্থ রাখে এবং তারা গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ভবনসমুহের এত কাছাকাছি হামলা চালানোর ফলে এখন যে প্রশ্নটি সামনে চলে আসছে তাহলো কুর্দী বিদ্রোহী ও আইএসের হুমকি মোকাবেলায় তুরস্কের সামর্থ কতটুকু।
গত বছরের মাঝামাঝি থেকে তুরস্কে বেশ কয়েকটি বড় ধরণের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলার বেশিরভাগই আইএস ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। আঙ্কারায় তিনটি টার্গেটেও হামলা চালানো হয়। এরমধ্যে গত অক্টোবরে জোড়া আত্মঘাতি বোমা হামলায় ১০৩ জন নিহত হয়।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেব এরদোগানের পার্টি ৪ মাস আগের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়লাভ করে। তার দলের প্রচারণার মুখ্য ইস্যূ ছিল ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেয়া। তবে তুরস্কে এখন যেভাবে রক্তক্ষয় ঘটছে তা লোকজনের ক্ষোভের কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে সংবাদদাতারা মনে করছেন।
নিহতের এক আত্মীয় নিহাত গোরগুলু এএফপি’র কাছে অভিযোগ করেন, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে লোকজন বলাবলি করছিলো যে রাজধানীতে আরো হামলা হতে পারে কিন্তুু সরকার তাতে গুরুত্ব দেয়নি এবং কোন সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নেয়নি। তিনি বলেন, সরকার জনগণের নিরাপত্তার দিকে গুরুত্ব না দেয়ায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি।
অতি সম্প্রতি শুক্রবার মার্কিন দূতাবাস রোববারের বোমা হামলার কাছাকাছি আঙ্কারার কোন একটি কেন্দ্রস্থলে হামলার চক্রান্ত সম্পর্কে সতর্কতা বার্তা প্রকাশ করে মার্কিন নাগরিকদের সেসব এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়।
এক ব্যক্তি এএফপিকে বলেন, তিনি তার গাড়ি থেকে লাফ দেয়ায় প্রাণে বেঁচে গেছেন। তিনি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে বলেন, প্রচ- বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে আগুনের শিখা জ্বলে উঠে। বিস্ফোরণ এতই শক্তিশালী ছিল যে তার গাড়িটি পেছনে আছড়ে পড়ে। সে তখন গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসেন এরপর তার আর কিছু মনে নেই।
আঙ্কারা ফেব্রুয়ারি হামলায় টিএকে’র দাবি প্রত্যাখ্যান করে জোর দিয়ে বলেছে যে এটা সিরিয় কুর্দীস পিপলস প্রোটেকশন ইউনিট (ওয়াইপিজি)’র কাজ। এই গ্রুপটি পিকেকে’র একটি শাখা হিসেবে পরিচিত। ওয়াইপিজি ও পিকেকে উভয় সংগঠনই এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত বছরের মাঝামাঝিতে একটি অস্ত্রবিরতি ভেঙ্গে পড়ার পর ডিসেম্বর থেকে তুর্কী নিরাপত্তাবাহিনী পিকেকে’র বিরুদ্ধে বড় ধরণের অভিযান চালাচ্ছে।
তুর্কী থিঙ্কট্যাংক এসইটিএ’র বিশ্লেষক কান আকুন এএফপিকে বলেন, পিকেকে’র সশস্ত্র বিদ্রোহ এখন আর কাজ করছে না। এমনকি কুর্দী জনগণও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতে পিকেকে’র অপারেশন থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখছে। তার মতে, পিকেকে হতাশ হয়ে পড়ছে এবং এই হতাশা থেকে তারা আরো ভয়াবহ হামলার পথ বেছে নিতে পারে।
তুরস্ক ও তার পশ্চিমা মিত্ররা পিকেকে’কে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে শ্রেণীভূক্ত করেছে। আঙ্কারা পিকেকে’কে নির্মূলের সংকল্প ঘোষণা করেছে। প্রেসিডেন্ট এরদোগান রোববার দিনের শেষে বলেন, সরকার সন্ত্রাসীদের কোন ধরণের ছাড় দেবেনা এবং সন্ত্রাসী আতঙ্ক ছড়ানোর বিরুদ্ধে বৈধ প্রতিরক্ষার অধিকার কখনো পরিত্যাগ করবেনা। তিনি বলেন, সন্ত্রাসীরা এখন সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে কারণ তুর্কী নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে তার চরমভাবে মার খাচ্ছে। Ñসুত্র : এএফপি









 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরাকে কুর্দী বিদ্রোহীদের অবস্থানে তুরস্কের বিমান আক্রমণ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ