Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তিন বছরে ছয় কোটি টাকার মালিক কাস্টমস কর্মকর্তা!

দুদকের অনুসন্ধান

মালেক মল্লিক : | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

তিন বছরে ৬ কোটির বেশি টাকার মালিক হয়েছেন সহকরী কমিশনার (কাস্টমস) এর এক কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তার নাম শরিফ আল আমীন। তিনি বর্তমানে সুনামগঞ্জের বিভাগীয় ভ্যাট কার্যালয়ে কমর্রত। সরকারি এ কর্মকর্তার বিভিন্ন নামে-বেনামে ব্যাংক হিসাবে ৬ কোটি ২৬ লাখ ১১ হাজার ২২২ টাকা সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি যেন রাতারাতি বড় লোক হতে বসেছেন। এসব টাকার বৈধ কোনো উৎস খুঁজে না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক। গতকাল রোববার কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এ মামলার অনুমোদন দেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। শিগগিরই শরিফ মো. আল আমীনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
এ বিষযে জানতে চাইলে দুদক উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য ইনকিলাবকে বলেন, সরকারি একজন কর্মকর্তা অল্প সময়ের মধ্যে এত টাকার মালিক হলেন এটা নিয়ে দুদক অনুসন্ধানে নামে। এসব টাকার বৈধ কোনো উৎস খুঁজে না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। অতি দ্রæত সময়ের মধ্যে মামলা করা হবে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, দুদকের একজন সহকারী পরিচালক এ ঘটনা অনুসন্ধান করেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, আসামি কাস্টমসের সহকারী কমিশনার শরীফ মোঃ আল আমীন ৩১তম বিসিএস (কাস্টমস) এর একজন কর্মকর্তা। তিনি ৩১তম বিসিএস (কাস্টমস) ক্যাডারে সহকারী কমিশনার পদে গত ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি যোগদান করেন। একজন নবীন কর্মকর্তা হওয়া সত্তে¡ও সোনালী ব্যাংক লিঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর নিজ নামে একটি ৮০ লাখ টাকার এফডিআর করেন তিনি। এরপর একই বছরের নভেম্বর মাসের ৪ তারিখ ও ১৬ তারিখে তার মা শরীফ হাসিনা আজিম ও তার বোন শরীফা খানমের নামে ৭৫ লাখ টাকা করে ২টি এফডিআর করেন। এসব এফডিআরে শতভাগ নমিনি কাস্টমসের সহকারী কমিশনার নিজেকে রেখেছেন। দুদক সূত্রে আরো জানা গেছে, শরীফ মোঃ আল-আমীন অবৈধ উপায়ে দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে অর্জিত মোট ৬ কোটি ২৬ লাখ ১১ হাজার ২২২ টাকা তার নিজের ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। জমা করা অর্থের মধ্যে তিনি ৪ কোটি ১২ লাখ ৫১ হাজার টাকা নগদ তুলে নেন। এরপর বিষয়টি দুদকের অনুসন্ধানে চলে এলে বাকি ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৭ টাকা আর তুলতে পারেননি। দুদকের নির্দেশে এ টাকা ফ্রিজ করে রেখেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। দুদকের অনুসন্ধানে আরো বেরিয়ে আসে, শরীফ মোঃ আল-আমীন পরিবারের জন্য ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকায় গাড়ি কেনেন। এ অপকর্মে সহযোগিতা করায় তার মা, বোনসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলার অনুমোদন দেয়া হয়। দুদকের সহকারী পরিচালক একেএম ইসমাইল আহম্মেদ এ ঘটনা অনুসন্ধান করেন।
দুদকের মামলায় ফাঁসছেন স্ত্রীসহ পুলিশ কর্মকর্তা: এদিকে প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশ পরিদর্শক ফিরোজ আলম ও তার স্ত্রী সাবরিনা আহমেদ ইভার বিরুদ্ধে মামলা অনুমোদন দিয়েছে দুদক। অবৈধ সম্পদের মধ্েয ফিরোজ আলম দম্পতির নামে চারটি ফ্ল্যাট আছে। এসব ফ্ল্যাটের দলিলমূল্য ৮৩ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। তাদের একটি গাড়ির মূল্য ৯ লাখ টাকা। তাদের নামে ৬৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ২৭ লাখ টাকার টার্ম ডিপোজিট, ৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকার ডিপিএস ও সঞ্চয়ী হিসাবে ৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা আছে। ফিরোজ আলম বর্তমানে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে কমর্রত। তাদের অবৈধ সম্পদের মধ্েয ফিরোজ আলমের নামে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৯ হাজার টাকা ও তার স্ত্রী সাবরিনার নামে ৭০ লাখ ৮ হাজার ৭৭৩ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ আছে। দুদক সূত্র জানায়, দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আহমার উজ্জামানের অনুসন্ধানে স্ত্রীসহ পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৭৩ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের প্রমাণ মিলেছে। যা তারা সম্পদ বিবরণীতে প্রদর্শন করেননি। তবে তাদের উভয়ের নামে ঋণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা বাদ দিয়ে নিট ২ কোটি ১৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৭৩ টাকা সম্পদ দেখিয়ে মামলা অনুমোদন দেয় কমিশন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ