পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আকাশ চুম্ভি স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হয়েছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হওয়ার পর থাকার জায়গা হলো গণরুমে। এক সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকতাম প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী। রাত ১২টা থেকে চলতো সিনিয়র শিক্ষার্থীদের ব্যবহার শিখানোর নামে র্যাগ। যা কোনভাবেই সহ্য করতে পারতাম না। যার কারণে রাতে ঠিক ভাবে ঘুম হতোনা। মনে সব সময় হতাশা আর অশান্তি কাজ করতো। জীবনে কখনো সিগারেট মুখে দেয়নি, কিন্তু তখন একবিন্দু সুখের আশায় এক বন্ধুর পরামর্শে প্রথম সিগারেটে টান দেয়। যা আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। এখন গাঁজা না খেলে মাথায় কাজ করেনা। এভাবেই বলছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের এক মাদকাসক্ত শিক্ষার্থী। এমন শত শত শিক্ষার্থী ‘মাদকে’র ভয়াল থাবায় হারিয়ে পেলছে তাদের লালিত স্বপ্ন। যার কারণে তাদের মাঝে ঘটছে নৈতিকতার অবক্ষয়। জড়িয়ে যাচ্ছে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপকর্মে। যারফলে ধ্বংস হওয়ার পথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ। এ অবস্থা চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে বিশ^বিদ্যালয়টি মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তাই এখনই মাদকের বিরুদ্ধে দ্রæত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এ ক্যাম্পাসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মাদকের বিস্তীর্ণ জাল। হাত বাড়ালেই মিলছে মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ সব ধরনের মাদকদ্রব্য। জানাযায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ মাদক আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা ‘গেরুয়া, ইসলামনগর ও কলমা’ থেকে। কলমা এলাকার আনোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ইয়াবা, সরবতি খালা, সুফিয়া খালা, মর্জিনা খালা ও সুমনের কাছ থেকে গাঁজা ক্রয় করে থাকেন শিক্ষার্থীরা। আর এসব মাদক বাইরে থেকে ক্যাম্পাসে সরবরাহ করে থাকেন কয়েকজন অসাধু কর্মচারী। এমনকি এ কাজের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মী জড়িত আছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আর এসব মাদক নিয়ে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর, প্রকৌশল অফিস, টারজান পয়েন্ট, নিরাপত্তা অফিসের বারান্দা, কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ চত্বর, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, কলেজ মাঠ ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের বারান্দাসহ, প্রতিটি হলের ছাদে ছোট ছোট দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে মাদকের আসর বসে।
এ বিষয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে মাদকের ভয়াল থাবায় ঝরে পড়বে শত শত কমলমতি মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এ ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে এক যোগে কাজ করার আহŸান জানান তিনি।’
এদিকে কয়েকজন মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘বর্তমানে ক্যাম্পাসে গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হিরোইনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ক্যাম্পাসে প্রতি ১০ গ্রাম গাঁজা পাওয়া যায় ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়, একপিজ ইয়াবা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়, ফেনসিডিল ১২’শ থেকে ১৫’শ টাকায়। এছাড়া কমদামের মধ্যে এনার্জি ড্রিংক্স মিক্সড, ঘুমের ওষুধ, কাশির সিরাপও বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছেন শিক্ষার্থীরা।
ইদানিং ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদেরও একটি অংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রকাশ্যে বন্ধুদের সঙ্গে তাদেরকে সিগারেট-গাঁজা সেবন করতে দেখা যায়। প্রশাসনের নজরদারির অভাব, মাদকের সহজলভ্যতার কারণে এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে বলে মনে করেছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়,, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী কৌতূহল থেকে মাদক গ্রহণ করছে। এছাড়াও বন্ধুদের উৎসাহ, প্রেমে ব্যর্থতা ও হতাশা থেকে মাদকে জড়িয়ে যাচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, এই সব শিক্ষার্থীরা মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘দিন দিন মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।’
এদিকে বিশ^বিদ্যালয়ে মাদকের এ সহজলভ্যতার কারণে বহিরাগতরাও এ ক্যাম্পাসে মাদক সেবন করতে ছুটে আসছেন। তারাও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে মাদকের আসর বসাচ্ছেন। আর এদেরকে সেল্টার দিচ্ছে বিশ^বিদ্যালয়ের ক্ষমতাসীন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট রাতে ‘সরোয়ার ও সোনিয়া’ নামক এক বহিরাগত যুগলকে মাদক সেবন রত আটক করে নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তাদের কাছ থেকে থেকে দুই বোতল মদ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও গত ২৭ জুলাই দুপুরে মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশ থেকে গাঁজা সেবনকালে বহিরাগত মো. রবিউল ইসলাম রবি, হোসেন আলী ও শাকিল নামক তিনজনকে আটক করে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা। তাদের কাছ থেকে প্রায় ২৫ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্ত¡া কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন বলেন, ‘সবার সহযোগিতা পেলে মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস গড়া সম্ভব।’
বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা ইনকিলাবকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ সবসময় মাদকের বিরুদ্ধে। আমাদের কোন নেতাকর্মীর যদি মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীদের অবস্থা দেখে আমরাও উদ্বিগ্ন। কেউ যাতে মাদক সেবন করতে না পারে এ ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে প্রত্যেকটি হল প্রশাসন ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।