পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিজ্ঞানের বদৌলতে বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজ। ইন্টারনেট, ফেসবুক, ব্লগ, টুইটারে ব্যস্ত নাগরিক জীবন। নগরজীবন-গ্রামীণ জীবন কোথাও নেই প্রাকৃতির ছোঁয়া। যান্ত্রিক জীবন চুকিয়ে দিয়েছে শরতের অপার রুপ-সৌন্দর্য্য উপভোগের বাসনা; হৃদয়ের লেনাদেনা। ঋতু আসে ঋতু যায়; খোঁজ রাখিনা ষড়ঋতুর। অথচ প্রতিটি ঋতুর নৈসর্গিত দৃশ্য দিতে পারে মানুষের জীবনে অনাবিল আনন্দ।
আকাশে দিকে তাকালে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর নদ-নদী তীরের সাদা কাশফুল দেখলেই বোঝা যায় এখন শরৎকাল। কাশফুল শরতের আগমনের প্রতীক। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-ব্রক্ষèপুত্র-তিস্তার তীরে বাতাসে কাশফুল দোলে মোহনীয় ভঙ্গিমায়। শরৎকে বলা হয় ঋতুরানী। শরতে প্রকৃতি হেসে ওঠেছে। সেদিকে কারোই ভ্রæক্ষেপ নেই। শরৎকালের প্রকৃতি হয় কোমল-শান্ত-স্নিগ্ধ-উদার। অপার সৌন্দর্য নিয়ে ঋতুর রাণী শরতে রকমারী ফুলে ফুলে ভরে গেছে দেশের প্রকৃতি-নদীর চর-বনাঞ্চল। নদ-নদী কিনারে বালির চরে হেসে ওঠেছে সাদা কাশবন। প্রকৃতিতে শাপলা-শালুক-পদ্ম-জুঁই-কেয়া-কাশফুল-শিউলি-জবা-কামিনী-মালতি-মল্লিকা-মাধবি-ছাতিম ফুল-বড়ই ফুল-দোলনচাঁপা-বেলি-জারুল-নয়নতারা-ধুতরা-ঝিঙে-জয়ন্ত্রী-রাধুচূড়া-স্থলপদ্মাসহ নাম না জানা নানান ফুলে হেসে ওঠেছে নদী তীর শহর বন্দর গ্রাম গঞ্জ বন বাদারে। কিন্তু শহুরে নাগরিকরা কতজন খোঁজ রেখেছি শরতের এই অপার সৌন্দর্য্যরে! বিজ্ঞানের শ্রোতে ভাসতে ভাসতে ভুলতে বসেছি শরতের রুপ-রস হৃদয়ঙ্গমের মানসিকতা। ব্যস্ত জীবনে চলার পথে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে জর্জরিত এবং আধুনিকতা ও বিজ্ঞানের গহবরে ডুবে থাকায় শরতের সৌন্দর্যের রুপের মুগ্ধতা থেকে হয়ে যাচ্ছি বঞ্ছিত।
শরৎ নিয়ে বাংলা ভাষাভাষি কবিরা হাজারো কবিতা লিখেছেন। ‘ওগো ও কাজল মেয়ে/ উদাস-আকাশ ছলছল চোখে তব মুখে আছে চেয়ে/ কাশফুল-সম শুভ্র ধবল রাশ রাঙা শ্বেত মেঘে/ তোমার তরীর উড়িতেছে পাল উদাস বাতাস লেগে’ (কাজী নজরুল ইসলাম); ‘এখানে আকাশ নীল-নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুল/ ফুটে থাকে হিম শাদা রং তার আশ্বিনের আলোর মতন’ (জীবনানন্দ দাশ); ‘এবার শরৎ রাত্রি স্বপ্ন নয় এনেছে সঙিন/ লণ্ঠিত স্বর্ণের শীষে সে স্বপ্ন রঙিন/ কেঁদে মরে-মৃত্তিকায় মিশে যায় ধীরে/ এবার শরৎ রাত্রি উদযাপিত হবে আঁখি নীরে’ (আহসান হাবীব); ‘সবে তো এই বর্ষা গেল/ শরৎ এলো মাত্র/ এরই মধ্যে শুভ্র কাশে/ ভরলো তোমার গাত্র/ ক্ষেতের আলে মুখ নামিয়ে/ পুকুরের ঐ পাড়টায়/ হঠাৎ দেখি কাশ ফুটেছে/ বাঁশবনের ঐ ধারটায়/ আকাশ থেকে মুখ নামিয়ে/ মাটির দিকে নুয়ে/ দেখি ভোরের বাতাসে কাশ/ দুলছে মাটি ছুঁয়ে/ পুচ্ছ তোলা পাখির মতো/ কাশবনে এক কন্যে/ তুলছে কাশের ময়ূর চূড়া/ কালো খোঁপার জন্যে/--/ ইচ্ছে করে ডেকে বলি/ ওগো কাশের মেয়ে/ আজকে আমার চোখ জুড়ালো/ তোমার দেখা পেয়ে/ তোমার হাতে বন্দী আমার/ ভালোবাসার কাশ/ তাই তো আমি এই শরতে/ তোমার ক্রীতদাস’ (নির্মলেন্দু গুণ)।
রূপবৈচিত্রের দিক থেকে প্রতিটি ঋতুই স্বমহিমায় উজ্জ্বল। তবে শরতের প্রকৃতি অধিক শান্ত-স্নিগ্ধ-মায়াময়। প্রকৃতিপ্রেমী কবিদের কবিতা পাঠ করলেই বোঝা যায় বৈচিত্রের দিক দিয়ে শরৎ কত মায়াবী। শরতের রুপ বৈচিত্র মানব জীবনে কত উপভোগ্য। তাই তো কবিরা কত ঢঙে শরতের রূপ তুলে ধরেছেন বাংলা সাহিত্যে। অঝোরে বর্ষা বিদায় নিয়েছে কিন্তু কিশোরী মেঘবালিকাদের আসা যাওয়া পুরোপুরি থামেনি। প্রকৃতি এখন বর্ষার বৃষ্টি ধোয়া নির্মল শিশুর মতো স্বচ্ছ। নীলাকাশজুড়ে খন্ড খন্ড অলস মেঘের অবাধ বিচরণ। মেঘ আর রোদের কানামাছি-লুকোচুরি খেলা চলছে। নদীমার্তৃক দেশের নদীর তীরগুলো ঘেঁষে কাশফুলের অপূর্ব সমারোহ। বাতাসে দোল খাওয়া সে অপরুপ দৃশ্য মন ভরিয়ে দেয়। দখিনা বাতাসে সাদা কাশফুলের ঢেউ খেলা শ্রোত, ফুলের প্রস্ফুটিত রূপ-লাবণ্য প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে মনের মধুরী মিশিয়ে। ঋতুর রানীর শরৎ এমেছে অপার ঐশ্বর্য নিয়ে। অথচ সেই সৌরভের মুগ্ধতা থেকে আমরা বঞ্ছিত। ফেসবুকে ডুবে থাকায় এখন আর শরতের ভরা জোছনায় চাঁদ দেখিনা। কাশবনের নয়নাভিরাম দৃশ্যে মুগ্ধ হওয়ার সময় পাইনা। শরতের রূপ লাবণ্য যাই থাকুক না কেন, ষড়ঋতুর দেশে শরৎ ঋতু আমাদের কাছে রয়ে যাচ্ছে যেন অনাদৃতই। চলুন না নগর জীবনের ক্লান্তি দূর করতে কিছুক্ষণের জন্য হলেও শরতে হারিয়ে যাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো ‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে/ মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে/ তেপান্তরের পাথার পেরোই রূপ-কথার/ পথ ভুলে যাই দূর পারে সেই চুপ্-কথার/ পারুলবনের চম্পারে --------’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।