ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। শিক্ষার হার বাড়ার সাথে সাথে উন্নয়নের গতিশীলতাও বাড়ার কথা। আমাদের দেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে প্রথম যে ভিত্তি তা এই শিক্ষাকেই ধরা হয়। কিন্তু এখনও অনেক মানুষই সাক্ষরতার মানদÐে পৌঁছাতে পারেনি। নব্বই দশকের শেষ দিকে এসে একটি জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিলো। গ্রামে গ্রামে সাক্ষরতার আওতায় মানুষকে আনার জন্য গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছিল। দালিলিক কাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজে টিপ সই দেয়া থেকে সাধারণ মানুষকে বের করে নিয়ে আসার লক্ষ্যে সে কার্যক্রম যথেষ্ঠ সফলতার মুখ দেখেছিল। সন্ধ্যা নামলেই গ্রামের মুরব্বিরা হারিকেন হাতে নিয়ে বের হয়ে যেতেন বিদ্যা অর্জনের উদ্দেশ্যে। একটি অন্যরকম আনন্দঘন পরিবেশ দেখতাম তখন তাদের মধ্যে। তিনমাসের মধ্যে অনেকেই সাক্ষরতার আলোয় চলে আসেন। সে সময়টায় এক বৃদ্ধা আমাকে এসে তার অভিব্যক্তি জানায়। তিনি আমাকে বলেছিলেন, বাবা আমিও কি লিখতে পারবো যদি তুমি আমাকে পড়াও! আমি খুব আশ্চর্য হতাম তাদের এ আত্ম অনুভ‚তি দেখে।
এখন প্রায় প্রতি ঘরেই শিক্ষিত মানুষ রয়েছে। তারপরও নিরক্ষর মানুষও কিন্তু কম নয়। সেদিন একটি কো¤পানির কাজের জন্য লেবারের বিল দেওয়ার সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। দেখলাম, অনেকেই টিপসই দিয়ে বিল নিচ্ছে। খুব অবাক হলাম এখনও মানুষ নিরক্ষর আছে বলে! এরকম দেখলাম সেদিন বন্যা কবলিত চরাঞ্চলে গিয়েও। অনেক তরুণও সেখানে নিরক্ষর। কিন্তু সাংবিধানিক অধিকারে ¯পষ্ট উল্লেখ আছে, এই সাক্ষরতা ও শিক্ষার মৌলিক অধিকারের ব্যাপারে। মানুষের নিরক্ষরতা আমাদের এ দেশের উন্নয়ন কতটা প্রসারিত করবে? সাক্ষরতার ব্যাপারটি ১৯০১ সালের দিকে প্রথম এলেও এখন সাক্ষরতা বলতে শুধুমাত্র নাম লেখাকে বোঝায় না। লিখতে পড়তে পারা, দাপ্তরিক কিছু কাজ করা, হিসেব-নিকেশ সবই সাক্ষরতার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার ৬২.২% বলা হলেও এ নিয়ে যথেষ্ঠ মতপার্থক্য থেকেই যাচ্ছে, কারণ সাক্ষরতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম কতটা পালন করা হচ্ছে তা অনেকটাই ধোঁয়াশার মধ্যে ঘুরপাক খায়। এবার যে প্রতিপাদ্যে সাক্ষরতা দিবস পালিত হলো, তাহলো, ‘সাক্ষরতা অর্জন করি ডিজিটাল বিশ্ব গড়ি’। এই ¯ে¬াগানে ¯পষ্ট যে নিরক্ষর মানুষ দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বর্তমানে কতটা কঠিন হয়ে পড়বে সামনের দিনগুলোতে। প্রতিটি ক্ষেত্রে যখন তথ্যপ্রযুক্তির জয়জয়কার, ঠিক সে সময়ে একজন নিরক্ষর মানুষ জাতির জন্য রীতিমত বোঝা স্বরূপ।
অবাককরা তথ্য হলো, শুধুমাত্র নিরক্ষর মানুষেরা যে দেশের নি¤œ আয়ের মানুষ তাও নয়। আমাদের দেশের অনেক মানুষ এমন রয়েছে যাদের শিক্ষা নেই কিন্তু অর্থনৈতিক দিক থেকে খুব স্বাবলম্বী এবং এ কারণে সামাজিকভাবেও তারা যথেষ্ঠ সম্মানিত। এখানে হতাশার জায়গা হলো এই নিরক্ষর মানুষগুলোই কখনও কখনও স্কুল কলেজের কমিটির সভাপতির মত পদে বহাল রয়েছেন। এখন একজন নিরক্ষর মানুষ যতই বিদ্যানুরাগী হোন না কেন তিনি তো ডিজিটালাইজেশনে ভ‚মিকা রাখতে পারবেন না। তবে যে প্রতিপাদ্য নিয়ে এই দিবস এবার পালন হলো তার সাথে আসলে আমরা কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ?
আমাদের দেশে স্কুল-কলেজেরে কমিটির সদস্যদের কোন মাপকাঠি নির্ণায়ক শিক্ষাগত যোগ্যতাও দেওয়া নেই! এই বিষয়গুলো নিয়ে এখন চিন্তার সময় এসেছে। যারা নিরক্ষর মানুষ তাদের যেমন সাক্ষরতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে, তেমনি নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় শিক্ষিত মানুষের স্থান নিশ্চিত করতে হবে। নইলে সাক্ষরতা দিয়ে ডিজিটালাইজেশন আদৌ সম্ভব হবে কি?
গণ সাক্ষরতার অভিযান আবার শুরু করতে হবে। প্রতিটি পরিবার বা এলাকার একজন শিক্ষিত মানুষকে চিহ্নিত করে তাকে সরকার কর্তৃক দায়িত্ব দিয়ে এই কাজটি সহজে করা যেতে পারে। চরাঞ্চলের মত দুর্গম এলাকায় সাক্ষরতার অধিকার পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ গতিশীল করতে হবে। একটি দেশের সামগ্রিক পরিবর্তনের জন্য সামগ্রিক শিক্ষা প্রসার প্রয়োজন। নইলে সাক্ষরতা দিয়ে ডিজিটালাইজেশন অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। আশা করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সকলে এই বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে ভাববেন।
লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও রসায়নবিদ, শ্রীপুর, গাজীপুর
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।