Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীতে মহাযানজট

দুই উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি

| প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মো ওমর ফারুক, ফেনী থেকে : ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর ফতেহপুর ও মহিপালে প্রতিদিন মহাযানজটের শিকার হাজার হাজার যাত্রীবাহী ও মালবাহী গাড়ি। দেশের অর্থনীতির লাইফলাইনখ্যাত এ মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি রফতানি হয়।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ১ম দফা বিজয় লাভের পরই এ মহাসড়কটিকে ওয়ানওয়ে করার কাজ শুরু করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধিন বর্তমান সরকার। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন না হলেও মহাসড়কের কাজ প্রায় শেষ। প্রায় একই সময় ৪ লেন প্রকল্পের অংশ হিসেবে ফেনীর ফতেহপুরে একটি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়।
প্রথম দিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দ্রæতবেগে নির্মাণকাজ চালিয়ে গেলেও হঠাৎ তাদের কাজে ধীরগতি চলে আসে। এদিকে মহাসড়কের ৪ লেনে চলাচলকারী গাড়ির জন্য ১০/১২ ফুটের সরু ডাইভারশন সড়ক নির্মাণ করে রেলওয়ে ওভারপাসের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিনিয়ত চারলেনের গাড়ি এখানে এসে একলেনে চলাচল করে।
এতে মহাযানজটে পড়ে নাকাল হতে হয় দুরপাল্লার যাত্রী ও পরিবহনকে। এদিকে নির্ধারিত সময়ের পরও মাত্র ৩০% কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পালিয়ে যায়। ফলে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে রেলওয়ে ওভারপাসের কাজ ঝুলে থাকার পর বর্তমানে সেনাবাহিনীর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ১৯ ইঞ্জিনিয়ার্স কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়নকে বাকি কাজ বুঝিয়ে দেয়া হয়।
বর্তমানে ডাইভারশন সড়ক কিছুটা বড় করা হলেও পাশাপাশি ২টি গাড়ি ক্রসিং করা কষ্টকর হয়ে যায়। ফলে সড়কের দু’পাশে মহাযানজটের সৃষ্টি হয়। কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে থাকে যানজট। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ধারণা যে গতিতে কাজ চলছে তাতে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণে আরো কমপক্ষে ২ বছর সময় লেগে যেতে পারে। ফলে যানজট এবং যাত্রী দুর্ভোগ কমাতে অবিলম্বে ওয়ানওয়ে ডাইভারশন সড়ক নির্মাণ না করা হলে দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে মনে করেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ফেনীর মহিপালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ফেনী-নোয়াখালী চার রাস্তার মাথায় যানজট নিরসনে ১৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ। প্রথমদিকে ছয়লেনের ফ্লাইওভার নির্মাণ করার কথা থাকলেও পরে শুধুমাত্র হাইওয়ে অংশে নির্মাণের ঘোষণা দেয়া হয়। শুধুমাত্র হাইওয়ে নিয়ে এ প্রকল্প করা হলে তা ফ্লাইওভার না হয়ে হাইওয়ে ওভারপাস হিসেবে গন্য হবে বলে জানা গেছে।
ফেনী সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে ফেনীর দূরত্ব ১৭৯ কি.মি. আর চট্টগ্রাম থেকে ৯৩ কি.মি.। ঢাকা বা চট্টগ্রামমুখী যানবাহন দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ফেনীতে এসে পৌঁছার পরই থামতে বাধ্য হয়। মহাযানজটে গাড়ির চাকা আর ঘোরে না। রাতের অবস্থা আরও খারাপ; চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ফেনীতে হয়ে যায় এক লেন। কোনো কোনো স্থানে তা আবার গলির মতো! গাড়ির দীর্ঘ লাইন মাঝে মাঝে কয়েক কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। ফেনী পার হতেই লেগে যায় কয়েক ঘণ্টা।
যাত্রীদের অভিযোগ, ছয় লেন ওভারব্রিজ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও মালামাল সড়কের ওপর রেখে ব্যবহার,বিশৃঙ্খলভাবে যানবাহন রাখা,দুরপাল্লার গাড়ির স্ট্যান্ড না থাকায় যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণে প্রায়ই দুই থেকে তিন লেন বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল অংশে বৃহস্পতি ও শুক্রবার সরেজমিন এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে। রাত ৯টায় দেখা যায়, ঢাকামুখী বাস ট্রাকের দীর্ঘ লাইন। একমুখী গাড়িও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। চট্টগ্রামগামী যানবাহন গেল কই-সেই প্রশ্নের উত্তর দিলেন একজন চালক। তিনি জানান, রাতে চট্টগ্রামমুখী যানবাহন ফেনী শহরের ওপর দিয়ে চলাচল করে। তা না হলে মহিপালে যানজটের লাইন আরও দীর্ঘ হয়।
মহিপাল বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় ফেনী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দিন বাবলুর সঙ্গে। তিনি জানান, রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ির চাপ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। এ রুটে রাতে ট্রাক বেশি চলাচল করে।
দিনের বেলায় ঢাকা শহরে ট্রাক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাতের মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্যবাহী ট্রাককে ঢাকায় পৌঁছতে হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন পরিবহনের দূরপাল্লার বাস চট্টগ্রাম থেকে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় যায়।
জেলা পুলিশ জানায়, রাতে যানবাহনের চাপ কমাতে চট্টগ্রামমুখী যানবাহনকে ফতেহপুর এলাকা দিয়ে পুরান ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড ধরে ফেনী শহরের ওপর দিয়ে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়। ফেনী শহর অতিক্রম করে ওইসব যানবাহন লালপুল এলাকায় গিয়ে পুনরায় মহাসড়কে ওঠে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মহিপালে অ্যাপ্রোচ রোড খুব সরু করা হয়েছে। এর ওপরই আবার বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। যাত্রী ওঠা-নামার জন্য সবসময় ১০ থেকে ১২টি বাস রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। এ ছাড়া রাস্তার ওপর বিভিন্ন পরিবহনের টিকিট কাউন্টার রয়েছে। তাদের অভিযোগ, রাস্তার দু’পাশে স্ট্যান্ড করার মতো যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বাসস্ট্যান্ড সরানো হয় না। স্ট্যান্ড সরানো হলেই যানজট অনেকাংশে কমবে বলে মনে করেন তারা।
বাস মালিক সমিতি সূত্র জানায়, মহিপালে ওভারব্রিজ অ্যাপ্রোচ সড়কের দু’পাশে সড়ক বিভাগের আরও অন্তত দশ ফুট জায়গা খালি পড়ে রয়েছে। অজ্ঞাত কারণে ওই জায়গাকে বাইরে রেখে স্থায়ীভাবে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে রাস্তা প্রশস্ত করার পথও বন্ধ। ফতেহপুর রেল ক্রসিংয়ের কারণেও এই রুটে চলাচলকারীরা ভোগান্তির শিকার হন।
জানতে চাইলে ফেনী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ করিম বলেন,মহিপালের ফ্লাইওভার প্রকল্পের সড়ক ও ড্রেন নির্মাণ করেছে সেনাবাহিনী। যতদুর সম্ভব মানুষের দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনা অপসারণ করে দু‘পাশে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ফতেহপুুর রেলওয়ে ওভারপাসের ডাইভারশন সড়ক আপাতত বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নেই বলে জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মহাযানজট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ