Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কাজের নামে দুর্নীতি

পাবনায় ২২৬ কোটি টাকার পদ্মা নদীর বাম তীর রক্ষা প্রকল্প

প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাখাওয়াত হোসেন বাদশা : নদী তীর সংরক্ষণ কাজের নামে চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতি। নিম্নমানের বালি ও জিওব্যাগ এবং অতি নিম্নমানের সিসি ব্লক ব্যবহার করে চলছে নদী তীর রক্ষার কাজ। টাস্কফোর্স কর্তৃক বাতিল করা মালও এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘পাবনার লালপুর হতে ঈশ্বরদী উপজেলার সারাঝাউদিয়া পর্যন্ত সাড়ে ৭ কিলোমিটার পদ্মা নদীর বাম তীর রক্ষা’ প্রকল্পটির এমন বেহালদশা। প্রায় ২২৬ কোটি টাকার প্রকল্প এটি।
রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকাতেও এই প্রকল্পটির অবস্থান। এরকম একটি প্রকল্পের কাজ নিয়ে যে ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা সংশ্লিষ্ট এসও, এসডি, নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক এবং প্রধান প্রকৌশলী অবগত হওয়ার পরও এ নিয়ে তারা নির্বিকার। সারাঝাউদিয়ার এই কাজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রভাবশালী একটি মহল এই কাজের সাথে জড়িত থাকার কারণে এ নিয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস দেখাচ্ছে না। নিম্নমানের এই কাজ নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বর্ষা এলেই এসব স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এখানকার কাজ নিয়ে নানা অনিয়ম ও অভিযোগে একাধিক তদন্ত কমিটিও হয়েছে। কিন্ত দায়ীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উচিত এই নিম্নমানের কাজের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অন্যথায় এ ধরনের কাজের মধ্যে দিয়ে যেমন সরকারের বিরাট অঙ্কের অর্থের অপচয় ঘটবে; তেমনি অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহ রক্ষায় গৃহিত এই প্রকল্প থেকে কোন সুফল আসবে না।
এদিকে, সুবিধাভোগিরা এই প্রকল্প থেকে আরও বেশি পরিমাণে সুযোগ গ্রহণের জন্য ‘পাবনার লালপুর হতে ঈশ্বরদী উপজেলার সারা ঝাউদিয়া পর্যন্ত সাড়ে ৭ কিলোমিটার পদ্মা নদীর বাম তীর রক্ষা’ কাজের সময় আরও দুই বছর বাড়িয়েও নিয়েছে। চলতি বছর এই কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও বর্ধিত সময় অনুযায়ী এখন এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১৯ সালে। বাংলাদেশের যে কোন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার সময় বৃদ্ধি করা হলে সেইসাথে ওই প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধিও ঘটে। এই প্রকল্পটির ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় হবে না বলেই মনে করছেন পাউবো’র অনেকেই।
নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারাটা ঠিকাদারের ব্যর্থতার মধ্যেই পড়ে। কিন্তু নানা অজুহাতে কাজের সময় বাড়ানোর প্রক্রিয়ার সাথে জড়িয়ে যান পাউবোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পর্যন্ত। প্রকল্পের সময় বাড়ানোর সুপারিশ থেকে শুরু করে তা অনুমোদন হওয়া পর্যন্ত নানা রকমের দেনদরবার হওয়ার হওয়ার অভিযোগ রয়েছে পাউবোর’র ক্ষেত্রে।
অনেকেই মনে করেন, এই প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করতে না পারার কারণে যেখানে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার কথা, সেখানে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির দায়ভার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মহাপডরচালক কোন ভাবেই এড়াতে পারে না।
প্রকল্পের ডিপিপি থেকে জানা যায়Ñ সারাঝাউদিয়ায় পদ্মা নদীর বাম তীর রক্ষা প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়Ñ পাকশি রপ্তানি প্রক্রিয়া অঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে, হার্ডিঞ্জ ব্রীজ, লালনশাহ সড়ক ও সেতু এবং স্পর্শকাতর ও অতিগুরুত্বপূর্ণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পকে রক্ষার স্বার্থে।
‘পাবনার লালপুর হতে ঈশ্বরদী উপজেলার সারাঝাউদিয়া পর্যন্ত সাড়ে ৭ কিলোমিটার পদ্মা নদীর বাম তীর রক্ষা’ প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাউবো’র রাজশাহীর অঞ্চলের প্রধান প্রধার প্রকৌশলী মো. মমতাজ উদ্দিন গতকাল রোববার ইনকিলাবকে বলেন, এখানে কোন অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে যেহেতু এ ধরনের অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ২৪ মার্চ ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। চীনের দুঃখ যেমন হোয়াংহো নদী, ঠিক তেমনি পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার কোমরপুর হতে সারাঝাউদিয়া এবং নাটোরের লালপুর উপজেলার তিলকপুর থেকে গৌরীপুর তথা পশ্চিমাঞ্চলের দুঃখ পদ্মা নদী। প্রতিবছরই নদী ভাঙনে সর্বস্ব হারান এই এলাকার বহু মানুষ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাজের নামে দুর্নীতি

১৪ মার্চ, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ