Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারকে প্রকাশ্য বিতর্কে আহ্বান

সুন্দরবন অভিমুখে জনযাত্রা শেষ

প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ‘তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’র সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘সুন্দরবন শুধু কিছু গাছ আর কিছু পশু-পাখি নয়। সুন্দরবন অসংখ্য প্রাণের সমষ্টি এক মহাপ্রাণ, অসাধারণ জীববৈচিত্র্যের আধার হিসেবে অতুলনীয় ইকোসিস্টেম ও প্রাকৃতিক রক্ষাবর্ম, বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। এই সুন্দরবন শুধু লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকার সংস্থান করেনা, সিডর-আইলার মতো প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায় চারকোটি মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা করে। দেশের সীমানায় এবং সীমানার বাইরে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল কার্যত সুন্দরবনের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত।’ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বাতিলের দাবিতে তিন দিনের সুন্দরবন অভিমুখে জনযাত্রার গতকাল সমাপনী সমাবেশে ‘সুন্দরবন ঘোষণা-২০১৬’ এ তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী ১৫ মে’র মধ্যে রামপাল-ওরিয়নসহ সুন্দরবন বিধ্বংসী প্রকল্প বাতিল করার দাবী জানানো হয়। ঘোষণায় সরকারের প্রতি প্রয়োজনে এই সময়ের মধ্যে প্রকাশ্য আলোচনা বা বিতর্কে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণায় বলা হয়, সরকার যদি এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য মহাবিপর্যয়ের প্রকল্প বাতিল করতে ব্যর্থ হয় তাহলে দেশের সকল পর্যায়ের মানুষকে সাথে নিয়ে ঢাকামুখী লংমার্চ, অবস্থান কর্মসূচী, ঘেরাও, হরতাল, অবরোধসহ আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
সুন্দরবন অভিমুখী জনযাত্রা গতকাল খুলনা থেকে বাগেরহাট হয়ে কাটাখালি পৌঁছে। সুন্দরবন রক্ষায় রামপাল ও ওরিয়ন বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল এবং জাতীয় কমিটি ঘোষিত সাত দফা বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশ থেকে সুন্দরবন অভিমুখী জনযাত্রার গতকাল ছিল শেষ দিন। কাটাখালিতে সুন্দরবন জনযাত্রার সমাপনী সমাবেশ থেকে সুন্দরবন ঘোষণাসহ আগামী দিনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।
সুন্দরবন জনযাত্রা গতকাল সকাল ১০টায় মিছিলসহ খুলনার বিভিন্ন পথ প্রদক্ষিণ করে। এরপর জনযাত্রা বাগেরহাটের উদ্দেশে যাত্রা করে। মিছিল করে বাগেরহাট শহর প্রদক্ষিণ শেষে রণজিৎ চ্যাটার্জির সভাপতিত্বে এবং ফররুখ হাসান জুয়েলের পরিচালনায় এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জনযাত্রা কাটাখালিতে পৌঁছে সুন্দরবন জনযাত্রার সমাপনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা থেকে বাগেরহাট হয়ে কাটাখালী যাত্রা পথের বিভিন্ন স্থানে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ জনযাত্রায় এসে সংহতি জানান এবং সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলনে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন। জনযাত্রায় দেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, বরগুনা, পিরোজপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট, দিনাজপুর, পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ এসে যোগদান করেন।
এসব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশীদ ফিরোজ, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি, কামরুল আহসান, মানস নন্দী, মোশারফ হোসেন নান্নু, শহীদুল ইসলাম সবুজ, ইয়াসিন মিয়া, শামসুল আলমসহ ছাত্র ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ভারতের এনটিপিসি’র সাথে বাংলাদেশের পিডিবি যৌথভাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে তা অসম, অস্বচ্ছ এবং বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী। বাংলাদেশের ওরিয়ন কোম্পানিকেও সব নিয়মনীতি উপেক্ষা করে একই ধরনের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মানুষ ও প্রকৃতির অপূরণীয় ক্ষতি ছাড়াও বাংলাদেশের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হবে। তারা এর বিরুদ্ধে জাতীয় জাগরণ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সুন্দরবন ঘোষণায় আরো বলা হয়, “মুনাফালোভী আগ্রাসনে এখন প্রতিদিনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবন। শীপইয়ার্ড, সাইলো, সিমেন্টকারখানাসহ নানা বাণিজ্যিক ও দখলদারী অপতৎপরতা বাড়ছে। দেশ বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চল যখন জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে, তখন রামপাল মাতারবাড়ীসহ উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে নেয়া বিভিন্ন অবিবেচক প্রকল্প এই ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে। রূপপুরেও ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হচ্ছে। আমরা দৃঢ়কন্ঠে বলতে চাই, রামপাল, রূপপুর ও মহেশখালী প্রকল্প নয়, জাতীয় কমিটির ৭ দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নেই দেশের বিদ্যুৎ সংকটের টেকসই সমাধান আছে।”
সুন্দরবন জনযাত্রার সমাপনী সমাবেশ থেকে আগামী ১৫ই মে’র মধ্যে রামপাল-ওরিয়নসহ সুন্দরবন বিধ্বংসী প্রকল্প বাতিল করার দাবী জানানো হয়। ঘোষণায় সরকারের প্রতি প্রয়োজনে এই সময়ের মধ্যে প্রকাশ্য আলোচনা বা বিতর্কে আসার জন্য আহবান জানানো হয়। ঘোষণায় বলা হয়, সরকার যদি এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য মহাবিপর্যয়ের প্রকল্প বাতিল করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশের সকল পর্যায়ের মানুষকে সাথে নিয়ে ঢাকামুখী লংমার্চ, অবস্থান কর্মসূচী, ঘেরাও, হরতাল, অবরোধসহ আন্দোলনের বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে ।
জনযাত্রায় অংশ নেয়া রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ (ইউসিবিএল), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, জাতীয় গণফ্রণ্ট, গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাসদ (মাহবুব), গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, শ্রমজীবী সংঘ। এছাড়া বিভিন্ন ছাত্র গণ সংগঠন যেমন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রণ্ট, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ অনেকে এই সমাবেশে অংশ নেয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকারকে প্রকাশ্য বিতর্কে আহ্বান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ