Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৪৮ ঘণ্টায় ফেরি সেক্টরে অপেক্ষমাণ এক হাজার যানবাহন

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মাওয়া ফেরি সেক্টরের অবস্থা নাজুক
রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের পূর্বাংশের সাথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের মাওয়া সেক্টরে পদ্মায় ভয়াবহ নাব্য সঙ্কটে ঈদ পরবর্তি কর্মস্থলমুখি মানুসেল দুর্ভোগের শেষ নেই। এসেক্টরের শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী রুটে ২১টি ফেরির মধ্যে এখন মাত্র ৫টি ফেরি যানবাহন পারপার করছে। নাব্যতা উন্নয়নে বিআইডবিøউটিএ ৫টি ড্রেজার দিয়ে দিনরাত পরিল অপসারন করলেও আগামী শনিবারের আগে ফেরি চলাচল স্বভাবিক হচ্ছে না। গতকাল সকালে পূর্ববর্তি ৪৮ঘন্টা দেশের প্রধান ফেরি সেক্টরগুলোতে সাড়ে ১৫হাজারেও বেশী যানবাহন পারপারের পরেও প্রতিদিনই সহশ্রাধীক গাড়ী অপেক্ষমান ছিল। এরমধ্যে পাটুরিয়া সেক্টরেই গত ৪৮ঘন্টায় প্রায় ১০হাজার যানবাহন পারপার করার পরেও মঙ্গলবার সকালে প্রায় ৫শ ও গতকাল সকালে আরো ৪শ যানবাহন আটকে ছিল। অপরদিকে ক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশেরও কম ফেরি দিয়ে শুধুমাত্র হালকা যানবাহন পারাপার চলছে মাওয়া সেক্টরে। এখানে পদ্মায় গভীরতা এখন ৫ফুট থেকে সাড়ে ৫ফুট। গত দুদিনে এ সেক্টরে এ মেসক্টরে যানবাহন পারাপার হয়েছে ৩হাজারেরও কম। এরপরেও গতকাল সকালে অপেক্ষমান ছিল আরো ৪শতাধীক যানবাহন।
প্রকৃতির সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে রাজধানী ছাড়াও পূর্বাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ টিকিয়ে রাখছে বিআইডবিøউটিসি। পদ্মায় আকষ্মিক পানির উচ্চতা হৃাসের ফলে মাওয়া সেক্টরে শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী রুটে ফেরি পারপার স্মরনকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ের কবলে। এ সেক্টরে ২১টির মধ্যে মাত্র ৫টি ছোট ও মাঝারী ফেরি দিয়ে রোগীবাহী এ্যম্বুলেন্স সহ হালকা যানবাহন পারাপার চলছে। তবে এর পরেও কাঠালবাড়ীতে ও শিমুলিয়া ঘাটে প্রতিনিয়ত যানযট অব্যাহত রয়েছে। বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে রাজধানী ঢাকা এবং দেশের পূর্বাংশের সংক্ষিপ্ত সড়ক পথ মাওয়া ফেরি সেক্টরের ওপরই নির্ভরশীল। সে রুটে এবিপর্যয় ঈদ পরবর্তি কর্মস্থলমুখি মানুষকে অবর্ণনীয় দূর্ভোগে ফেলেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও বেশীরভাগ যানবাহনই ফেরিতে উঠতে পারছে না। কারন পদ্মায় নাব্যতা সংকেট বেশীরভাগ ফেরি চলাচল বন্ধ গত ৪দিন ধরে।
গতকাল সকালের পূবর্বর্তি ২৪ঘন্টায় বিআইডবিøউটিসি তার ফেরি সেক্টরে সাড়ে ৭হাজারেরও বেশী সহস্রাধীক যানবাহন পারাপার করলেও অপেক্ষমান ছিল আরো সহস্রাধীক। সংস্থাটির ফেরি সেক্টরের কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপড়তায় দিনরাত কাজ করলেও প্রকৃতির বিরূপ আচরনের কাছে সকলেই অসহায়। যানবাহনেরর চালক ও মালিকদের মাওয়া সেক্টর পরিহার করে অন্যরুট ব্যবহারের পরমর্শ দিয়েছে বিআইডবিøউটিসি ও আইডবিøউটিএ। ঈদ পরবর্তি কর্মস্থলমুখি মানুষের ভীড় ক্রমশ বাড়ছে। মাওয়া’র বিপর্যয়ের কারনে পাটুরিয়া সেক্টরে যানবাহনের ভীড় ক্রমশ বাড়ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১টি রো-রো এবং দুটি কে-টাইপ ফেরি প্রত্যাহার করে পাটুরিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এদিকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিআইডবিøউটিএ ইতোমধ্যেই ৫টি ড্রেজারের সাহায্যে মাওয়া সেক্টরের শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী রুটে দিনরাত পলি অপসারন অব্যাহত রেখেছে। আগামী শুক্রবার রাতের মধ্যে এফেরি রুটটি সব ধরনের নৌযান চলাচলের জন্য উন্মূক্ত করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন কতৃপক্ষের ড্রেজিং ইউনিটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। প্রয়োজনে আরো ড্রেজার এখানে নিয়োজিত করে এ রুটটি উন্মূক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
তবে এখনো মাওয়া সেক্টরের শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী নৌপথের অবস্থা এখনো যথেষ্ঠ নাজুক এবং ঝুকিপূর্ণ। এরুটের মূল চ্যানেলে গতকাল পর্যন্ত ৫ফুট থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ফুট নাব্যতা ছিল। অথচ কে-টাইপ ফেরির জন্য সর্বনিম্ন ৭ফুট এবং রো-রো ফেরির জন্য সাড়ে দশফুট গভীরতার নৌপথ প্রয়োজন। বিআইডবিøউটিএ’র দায়িত্বশীল মহল আগামী শুক্রবার সন্ধা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে উন্নীত করার কথা জানালেও তা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে এখনো সন্দেহ রয়েছে ফেরির চালকদের মধ্যে।
গত শনিবার সকাল থেকেই মওয়া সেক্টরে পদ্মার পানি আকষ্মিকভাবে দ্রæত হ্রাস পেতে থাকে। ৩সেপ্টম্বর দুপুরের পর থেকে শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী নৌপথে পদ্মার গভীরতা মাত্র ৬-৭ফুটে হৃাস পায়। পানি হৃাসের এ প্রবনতা অব্যাহত থাকার মধ্যেই ঐ সেক্টরে সবগুলো রো-রো ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ঐরাতের মধ্যে নতুন নির্মিত কে-টাইপ ফেরিগুলোও বন্ধ করে দিতে হয় নাব্যতা সঙ্কটে। তবে বিআইডবিøউটিএ পরিস্থিতি আগাম আঁচ করতে পেরে কয়েকটি ড্রেজার আগেই মাওয়াতে নিয়ে রেখেছিল। অতি দ্রুত হাইড্রোগ্রাফী সার্ভে করে ৩সেপ্টেম্বর রাতের মধ্যেই ৩টি ড্রেজার এবং ৪তারিখে আরো একটি ড্রেজার পলি অপসারন শুরু করে। মঙ্গলবারে আরো একটি ড্রেজিং শুরু করেছে। আজকারের মধ্যে প্রয়োজনে আরো ২টি ড্রেজার এ রুটে নিয়োজিত করা হতে পারে।
সীমান্তের ওপারে এবং উত্তবঙ্গের অনেক এলাকায় বণ্যার পানি দ্রুত হৃাস পাবার সাথে পদ্মার গভীরতাও সংকটে পড়ে। পাশাপাশি এবার উজান থেকে বণ্যার ঢলের সাথে অস্বাভাবিক বালু মিশ্রিত পানি এসে পদ্মার তলদেশ যথেষ্ঠ ভড়াট করে ফেলায় প্রবাহ হৃাসের সাথে আকস্মিকভাবেই নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হয় বলে জানা গেছে। আগামী শুক্রবার রাতের মধ্যে মাওয়া সেক্টরের ফেরি রুটটির নাব্যতা উন্নয়ন সম্ভব হলেও এনৌপথটি সারা বছর সচল রাখতে আরো দীর্ঘদিন ধরে পলি অপসারন করতে হতে পারে বলে মনে করছেন ড্রেজিং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেরি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ