Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নাব্য সঙ্কটে দেশের প্রধান ফেরি সেক্টরে ভয়াবহ বিপর্যয়

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

১৪ ফেরি বন্ধ : বিকল্প রুট ব্যবহারের পরামর্শ
দেশের প্রধান ফেরি সেক্টরগুলোতে ঈদের আগে-পরে ৫৫হাজারেরও বেশী যানবাহন পারপার হলেও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের দুর্ভোগের লাঘব করা যায়নি। গতকাল থেকে ঈদ পরবর্তি কর্মস্থলমুখি জন স্রোত শুরু হলেও পাটুরিয়া-দৌলতিদয়া এবং মাওয়ার শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ীসহ দেশের সবগুলো ফেরি সেক্টরে জনদুর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে।
ঈদের আগের দিন পাটুরিয়াতে ১২-১৫ঘন্টা অপেক্ষা করে অনেক যানবাহনকে ফেরিতে উঠতে হয়েছে। উজানের ঢলের বালু মিশ্রত পদ্মার প্রবল স্রোত অতিক্রম করে ফেরিগুলো একপার থেকে অপর পাড়ে পৌছতে দ্বিগুনেরও বেশী সময় লাগায় যানবাহন পারপারে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। বিআইডবিøউটিসি তার ফেরি বহরের সর্বশক্তি নিয়োগ করে প্রকৃতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে গড়ে তুলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেনা।
গতকাল সকাল থেকে মাওয়া সেক্টরে ডাম্ব ফেরি সহ নুতন মডেলের কে-টাইপ ফেরিগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয় নাব্যতা সঙ্কটে। ফলে ২১টির মধ্যে মাত্র গতকাল ৭টি ফেরি চলাচল করছিল শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ী রুটে। বিআইডবিøউটিএ মাওয়া সেক্টর এড়িয়ে অন্য রুটে যানবাহন পরিচালনে সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। মাওয়া সেক্টরে নাব্যতা উন্নয়নে বিআইডবিøউটিএ জরুরী ভিত্তিতে ড্রেজিং শুরু করলেও পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে স্বাভাবিক হতে অন্তত এক সপ্তাহ লাগবে। তবে মাওয়া সেক্টরের একাধীক বেসরকারী লঞ্চ ও ফেরির চালকগন এ নাব্য সঙ্কটের জন্য বিঅইডবিøউটিএ’র উদাশীনতাকে দায়ী করেছেন। তাদের মতে, নদীর নব্য পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন করলে আরো একসপ্তাহ আগেই ড্রেজিং শুরু করা যেত। অপরদিকে বিআইডবিøউটিএ’র দাত্বিশীল মহলের মতে, ‘তাদের কোন ধরনের গাফিলতি ছিলনা। ৩৬ঘন্টার মধ্যে পদ্মায় নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারন করে এবং এ সংকট সৃষ্টি হবার ২৪ঘন্টা পরেই ড্রেজিং শুরুর করা গেছে। একটি ড্রেজার কাজ শুরু করার প্রস্তুতি নিতেও ৩৬ঘন্টা সময় লাগার কথা’ বলে কতৃপক্ষ জানিয়েছে। সেখানে ‘আগে থেকেই পলি অপসারনের প্রস্তুতি নিয়ে ড্রেজার স্ট্যান্ডবাই ছিল’ বলেও বিঅইডবিøউটিএ’র দায়িত্বশীল মহল জানিয়েছেন।
এবার মাত্র ৩৬ঘন্টার ব্যবধানে মাওয়া সেক্টরে পদ্মায় আকষ্মিক ভয়বহ নাব্য সঙ্কট সৃষ্টি হয়। মাওয়া সেক্টরের শিমুলিয়া থেকে কাঠালবাড়ী ফেরি রুটে ১সেপ্টেম্বর আকষ্মিকভাবেই পদ্মার গভীরতা কোন কোন স্থানে ৬ফুটেরও নিচে নেমে এসেছে। ৩সেপ্টেম্বর থেকে বিআইডবিøুউটিএ ঐ রুটে নাব্য উন্ননে ড্রেজার নিয়োগ করেছে। ড্রেজিং সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কতৃপক্ষ লৌহজং চ্যানেল দিয়ে ফেরি পরিচালনার অনুরোধ করেছে। তবে ঐ রুটে দুরত্ব বৃদ্ধির ফলে পারপারে সময়ও লাগছে বেশী। এমনকি নাব্য সঙ্কটে মাওয়া সেক্টরের ৪টি রো-রো ফেরি সহ কে-টাইপ ফেরিগুলোও বন্ধ রাখতে হয়েছে। ইতোমধ্যে ডুবো চড়ায় ধাক্কা লেগে কে-টাইপ ফেরি ‘ক্যমেলিয়া’র প্রপেলার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গতকাল সকালে আরো ২টি কে-টাইপ ফেরি ডুবো চড়ায় আটকা পরে।
ঈদ পরবর্তি ফেরি সেক্টরের এবিপর্যয় চরম ভোগান্তিতে ফেলছে বরিশাল ও খুলনা বিভাগসহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলার কয়েক লাখ কর্মস্থলমুখি মানুষকে। তবে বিঅইডবিøউটিসি মাওয়া সেক্টর থেকে আজকের মধ্যেই ২টি রো-রো ও ২টি কে-টাইপ ফেরি পাটুরিয়া সেক্টরে সরিয়ে নিচ্ছে সেখানের বাড়তি ভীড় সামাল দিতে।
এদিকে গত ৩০আগষ্ট থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত বিআইডবিøউটিসি দেশের প্রধান দুটি ফেরি সেক্টর পটুরিয়া ও মাওয়া ছাড়াও চাঁদপুর-শরিয়তপুর, ভোলা-ল²ীপুর ও ভোলা-বরিশালের মধ্যবর্তি ভেদুরিয়া-লাহারহাট রুটে ৫৫হাজার ১৯২টি যানবাহন পারাপার করেছে। তবে এসময়কালে ফেরি ঘাটগুলোতে আরো প্রায় ৫হাজার যানবাহন আটকে ছিল। গতকাল দপুর থেকে রাত অবধী মাওয়া সেক্টরের শিমুলিয়া ও কাঠালবাড়ী ঘাটে বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকে ছিল। বিআইডবিøউটিএ পারাপারের ভোগান্তি এড়াতে মাওয়া সেক্টরের পরিবর্তে বিকল্প রুট ব্যবহারেরও পরমর্শ দিয়েছে। এক হিসেবে দেখা গেছে গত ৩০আগষ্ট সকাল ৬টার পূর্ববর্তি ২৪ঘন্টায় রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডবিøউটিসি তার ফেরি সেক্টরগুলোতে ১০হাজার ১৩টি যানবাহন পারপার করে। এসময় অপেক্ষমান যানবাহনের সংখ্যা ছিল আরো প্রায় ১হাজার। পরের দিন, ৩১আগষ্ট পারাপারকৃত যানবাহনের সংখ্যা সাড়ে ৮শ বেড়ে ১০হাজারন ৮৭৭হলেও অপেক্ষমান ছিল আরো প্রায় সাড়ে ১১শ। ঈদ উল আজহার আগের দিন গত ১সেপ্টেম্বর বিআইডবিøউটিসি’র ফেরি বহর এযাবতকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক ১২হাজার ২৮৪টি যানবাহন পারাপার করলেও এসময় অপেক্ষমান ছিল আরো প্রায় ১হাজার। এমনকি ঈদের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ঘন্টায় ফেরি সেক্টরগুলোতে সাড়ে ১০হাজারেরও বেশী যানবাহন পারাপার করা হলেও ৯শতাধীক গাড়ী অপেক্ষায় ছিল। ঈদের দিন সকাল থেকে ৩সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত প্রায় ৫হাজার যানবাহন পারাপার হলেও অপেক্ষমান ছিল আরো ৯শতাধীক। গতকাল(সোমবার) সকালের পূর্ববর্তি ২৪ঘন্টায় ফেরি সেক্টরগুলোতে আরো সাড়ে ৬হাজার যানবাহন পারাপারের পরে অপেক্ষমান ছিল ৫শতাধীক যানবাহন।
তবে গতকাল থেকেই ঈদ পরবর্তি কর্মস্থলমুখি জন স্রোত শুরু হওয়ার পাশাপাশি মওয়া সেক্টরে নাব্য সঙ্কটে ফেরি পারপারে চরম বিপর্যয় নেমে আসায় মানুষের ভোগান্তি ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এ সেক্টরে ২১টি ফেরির মধ্যে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ৭-৮টি ফেরি চলাচল করছিল। ঈদ পরবর্তি রাজধানী ও সন্নিহিত এলাকামুখি মূল জন¯্রােতের সময়ই দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সংক্ষিপ্ত সড়ক পথের একমাত্র ফেরি সেক্টরে এ বিপর্যয় দেশের এক-চত’র্থাংশ এলাকার বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে ভয়বহ বিপর্যরে মুখে ঠেলে দিয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফেরি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ