Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিনিয়োগের করুণ হাল

প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এবি সিদ্দিক
গত ৫ বছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রায় অর্ধেকে কমে এসেছে। আর কমপক্ষে ২৫টি দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতো বা করছে এমন দেশের সংখ্যা ৫৩টি। বিনিয়োগে শীর্ষে ছিল সৌদি আরব। অথচ গত ৩ বছরে এক পয়সাও বিনিয়োগ করেনি। বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সৌদি বিনিয়োগ নিবন্ধিত হয়েছিল ১,৭৩২ দশমিক ৫৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০০-১০ অর্থবছরে কমে আসে ৪৭১ দশমিক ৮২০ মিলিয়ন ডলারে, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৮৬ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে মাত্র ২ দশমিক ৩৬৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এরপর থেকে সৌদি বিনিয়োগ বন্ধ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আমেরিকা। সেও বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। গত অর্থবছরে আমেরিকা বিনিয়োগ নিবন্ধন করেছে ১১৭ দশমিক ৯৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১০-১১ অর্থবছরে সর্বাধিক বিনিয়োগ ছিল ৮৬৪ দশমিক ৭০৭ মিলিয়ন ডলার। তৃতীয় বিনিয়োগকারী দেশ থাইল্যান্ড গত অর্থবছরে মাত্র ৮ দশমিক ৩৪৪ মিলিয়ন নিবন্ধিত করেছে। ভারত ২০১২-১৩ অর্থবছরে নিবন্ধিত করেছিল ২,১২০ দশমিক
৬৪৭ মিলিয়ন ডলার আর গত অর্থবছরে করেছে মাত্র ২৯ দশমিক ০৬৬ মিলিয়ন ডলার। দক্ষিণ কোরিয়া ২০১১-১২ অর্থবছরে নিবন্ধন করেছিল ২,৪৪৭ দশমিক ৯৮৪ মিলিয়ন আর গত অর্থবছরে করেছে ২ দশমিক ৬৪৫ মিলিয়ন ডলার। মালয়েশিয়া ২০১০-১১ অর্থবছরে করেছিল ১৩৭ দশমিক ১১৬ মিলিয়ন আর গত অর্থবছরে করেছে ৭ দশমিক ২৪৯ মিলিয়ন ডলার। একই সময়ের ব্যবধানে নেদারল্যান্ড ১১৩ দশমিক ৩৫২ থেকে কমিয়ে গত অর্থবছরে করেছে শূন্য দশমিক ৬০৮ মিলিয়ন ডলার। চীন ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যেখানে নিবন্ধন করেছিল ১,৬৮৩ দশমিক ৩২২ মিলিয়ন ডলার, গত অর্থবছরে সেখানে কমে আসে ১৫ দশমিক ২৫৬ মিলিয়ন ডলারে। পাকিস্তান প্রতিবছর কিছু না কিছু বিনিয়োগ করলেও গত অর্থবছরে শূন্যের কোটায় নেমে আসে। জাপান ২০১১-১২ অর্থবছরে নিবন্ধন করেছিল ৮১ দশমিক ৭৮৯ মিলিয়ন ডলার, গত অর্থবছরে করেছে ৫ দশমিক ৬৮০ মিলিয়ন ডলার। ডেনমার্ক প্রতিবছর কিছু না কিছু বিনিয়োগ নিবন্ধন করলেও গত অর্থবছরে শূন্যের কোটায় নেমে আসে। একই অবস্থা শ্রীলঙ্কার। দেশটি প্রতিবছর কিছু না কিছু বিনিয়োগ নিবন্ধন করলেও গত অর্থবছর ছিল শূন্য। কানাডা কিছুটা বাড়িয়ে গত অর্থবছরে নিবন্ধন করেছে ৭ দশমিক ১৮৯ মিলিয়ন ডলার। তাইওয়ান গত অর্থবছরে কিছ্টুা বাড়িয়ে ১০ দশমিক ০৭৮ মিলিয়ন নিবন্ধন করেছে। সিংগাপুর, তুরস্ক, ইতালি, হংকং একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। আফ্রিকা থেকে ৩ বছর পর গত অর্থবছরে নিবন্ধন হয় প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার। বিনিয়োগ গুটিয়ে নিয়েছে এমন ২৫টি দেশের মধ্যে আর্মেনিয়া ও রাশিয়া, বার্মুডা, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, লেবালন, মরিশাস, ফিলিপাইন, ফিনল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, পর্তুগাল, স্পেন, পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, মিশর, হাঙ্গেরি, নরওয়ে, ভিয়েতনাম, জর্দান, কুয়েত, অস্ট্রিয়া, মাল্টা, ইউএসই, গিনি, লিবিয়া, সার্বিয়া, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া। বিনিয়োগ বোর্ড সূত্রে আরো জানা যায়, গত অর্থবছরের সাময়িক হিসেবে বৈদেশিক বিনিয়োগ নিবন্ধন হয়েছে ৩১৯ দশমিক ৬৪৫ মিলিয়ন ডলারের। আগের অর্থবছরে ছিল ২,১২৮ দশমিক ৩২১ মিলিয়ন ডলার। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে নিবন্ধন হয়েছিল ৫,১১৫ দশমিক ৫৮২ মিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রস্তাব মূলতঃ প্রকৌশল খাতেই বেশি এসেছে যা মোট বিনিয়োগের ৫৭ শতাংশ। এছাড়া সেবা খাতে ১৫, কৃষিভিত্তিক শিল্পে ৫, বস্ত্র খাতে ২, চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পে ৫, রসায়ন ১৬ শতাংশ।
বেসরকারি বিনিয়োগের চিত্রটাও খুব একটা ভাল নয়। ২০০১-০২ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ খাতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাইনাস ২৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। পরের অর্থবছরে তাই প্লাস ৩০ দশমিক ১৭ শতাংশে উঠে আসে। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে বেড়ে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এখাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১২৪ দশমিক ৬২ শতাংশে যা বাংলাদেশে ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এরপর থেকে আবার কমতে থাকে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ছিল মাইনাস ২৪ শতাংশ। বিনিয়োগের এই নাজুক পরিস্থিতির জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বড় কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘নিষ্কণ্টক জমি পাওয়া, বিশেষ করে এখন গ্যাসের সংযোগের অপ্রতুলতা রয়েছে, প্রযুক্তির ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে না পারা এসব রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট না হওয়ার কারণ। সিপিডি বলেছে বর্তমানে দেশে স্থানীয় বিনিয়োগ জিডিপির ২১ ভাগের সমপরিমাণ এবং বিদেশি বিনিয়োগ আট মিলিয়ন ডলার যেটা বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা ও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বাংলাদেশে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ায় মানুষের মাথাপিছু আয় ১৩০০ ডলারের কিছু বেশি। উচ্চ মধ্যম আয় অর্থাৎ মাথা পিছু আয় তিন বা চার হাজার ডলারে নিতে হলে বিনিয়োগ আরো বাড়াতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগের করুণ হাল

১৪ মার্চ, ২০১৬
আরও পড়ুন