পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পরেও ঢাকাসহ সারাদেশের দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকে বাজছে হাইড্রোলিক হর্ন। বিকট আওয়াজ সৃষ্টিকারী হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে চলেছে বাস ও ট্রাকসহ বড় আকারের যানবাহনগুলো। এমনকি হাইড্রোলিক হর্ন বিক্রিও বন্ধ হয়নি। তবে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পর গত ২৫ আগস্ট মাগুড়ায় শতাধিক যানবাহন থেকে হাইড্রোলিক হর্ন অপসারণ করে ট্রাফিক পুলিশ। গত ২৩ আগস্ট রাজধানীতে চলাচলকারী সকল যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। ২৭ অগাস্টের পর কোনো গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হলে সেই গাড়ি জব্দের নির্দেশ দেয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে চলাচলকারী মিনিবাস, বড় বাস, দুরপাল্লার বাস ও ট্রাকে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার হচ্ছে বহুদিন ধরেই। বিকট আওয়াজ সৃষ্টিকারী এ হর্ন বাজিয়ে ছুটছে বড় বাস ও দূরপাল্লার বাসগুলো। পুলিশের অভিযানকে ফাঁকি দিতে একই বাসে দুই রকম হর্ন লাগানো থাকে। পরীক্ষার সময় চালকরা সাধারণ হর্ন বাজায়। ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পর মালিকপক্ষ নিজেরাই গাড়ি থেকে হাইড্রোলিক হর্ন খুলে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন। এরপরও কেউ যদি তা ব্যবহার করে থাকে তবে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পর রাজধানীতে কোনো অভিযান চালানো হয়নি জানিয়ে ট্রাফিক পুলিশের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, হাইকোর্টের আদেশ হাতে পাওয়ার পর আমরা অভিযানে নামবো।
আলাপকালে বেশ কয়েকজন ট্রাফিক সার্জেন্ট জানান, দূরপাল্লার বাস ও ট্রাকে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। এর আগেও আদালত হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। তখন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রায় ১০ হাজার হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করে ধ্বংস করেছিল। এক ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, এবার হাইকোর্ট গাড়ি জব্দ করার আদেশ দিয়েছেন। এবার আমরা কঠোর হতে পারবো। এর কারন হিসাবে তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালের মোটরযান আইন অনুযায়ী হাইড্রোলিক হর্ন বাজানোর সর্বোচ্চ জরিমানা মাত্র একশ’ টাকা। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্টের গাড়ি জব্দের নির্দেশনা হর্ন বন্ধে সহায়ক হবে।
রাজধানীতে গত দুদিনে বহু বাস, মিনিবাস ও দূরপাল্লার বাসে উচ্চ শব্দের হাইড্রোলিক হর্ন বাজাতে দেখা গেছে। মহাখালীর এক বাসিন্দা জানান, তিনি গতকালও টার্মিনালের বাইরে এনা ট্রান্সপোর্টের এক দূরপাল্লার বাসে হাইড্রোলিক হর্ন শুনেছেন। মতিঝিল থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বেশিরভাগ বড় বাসে (৬নম্বর) হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করা হয়। গুলিস্তান থেকে নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বড় বাসগুলোতেও হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো। ভুক্তভোগিরা ভাষায়, রাস্তায় এ বাসগুলো চলার সময় এমনভাবে সিংহের মতো গর্জন করে, যাতে কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। পুলিশের সামনে বিকট শব্দের হর্ন বাজলেও পুলিশ কিছুই বলে না।
সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে গেলে বোঝা যায় বেশিরভাগ দূরপাল্লার বাসেই হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো। ফুলবাড়ীয়া টার্মিনাল থেকে সাভার, ধামরাই, মিরপুর থেকে সাভার, গাবতলী থেকে মানিকগঞ্জ, মতিঝিল থেকে সাভার, সদরঘাট থেকে গাজীপুর, গুলিস্তান থেকে তারাবো, সিরাজদীখান, নরসিংদী রুটের বেশিরভাগ বাসেই হাইড্রোলিক হর্ন লাগানো। হাইকোর্টের নির্দেশের পর এসব বাস থেকে হাইড্রোলিক হর্ন অপসারণ করা হয়নি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে ১২ কোটি ৬৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭৫ টাকার মোটরসাইকেল ও গাড়ির হর্ন আমদানি হয়েছে। তবে শুধু হাইড্রোলিক হর্ন কী পরিমাণে এসেছে তার আলাদা কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। যশোরের বেনাপোল সীমান্ত এবং চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে হাইড্রোলিক হর্নগুলো আসে। রাজধানীর বাংলাবাজারে মোটর পার্টসের কিছু ব্যবসায়ী এই হর্নগুলোর মূল আমদানিকারক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পর কিছুটা গোপনীয়তা রক্ষা করে হাইড্রোলিক হর্ন বিক্রি হচ্ছে। কেউ হাইড্রোলিক হর্ন কিনতে গেলে খানিকক্ষণ যাচাই বাছাই করে তারপর বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা বাজারে হর্নের মূল্য ৪৮০ টাকা থেকে৫২০ এবং আরেক রকমের ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার পর গত ২৫ আগস্ট মাগুরায় শতাধিক বাস-ট্রাকের হাইড্রোলিক হর্ন অপসারণ করেছে জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহারের অপরাধে ৫০টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
গত ২৩ আগস্ট রাজধানীতে চলাচলকারী সকল যানবাহনের হাইড্রোলিক হর্ন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ২৭ অগাস্টের পর কোনো গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হলে সেই গাড়ি জব্দের নির্দেশ দেন। এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্নের ব্যবহার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এ বিষয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে হবে। পুলিশ প্রধান, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি (হাইওয়ে), যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) এবং বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানকে হর্ন আমদানি বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও বাজারে থাকা সব হর্ন আগামী সাত দিনের মধ্যে জব্দ করে চার সপ্তাহের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
২৭ অগাস্টের পর যদি ঢাকার রাস্তায় কোনো গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো হয়, ওই গাড়িও জব্দ করতে পুলিশ কমিশনার, যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) ও ডিএমপি, মহানগরীর চার বিভাগের ট্রাফিকের ডেপুটি কমিশনারসহ ঢাকার ২০ থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।