দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রশ্ন : অপচয়কারী কি শয়তানের ভাই?
উত্তর : অপচয়। আরবীতে বলে ইসরাফ। ‘বৈধ কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করাকে অপচয় বলে’। এই দুনিয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা যা কিছু হালাল করে দিয়েছেন তা প্রয়োজনের তাগিদে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ভক্ষণ করতে হবে, তার বেশী গ্রহণ করা সমীচিন নয়। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পানাহার করা আবশ্যক। সামর্থ থাকা সত্তে¡ও যদি কেউ পানাহার বর্জন করে, ফলে মৃত্যুমুখের যাত্রী হলে বা দূর্বল হয়ে পড়লে, যাতে ফরজ কার্যাবলী সম্পাদন করতে অক্ষম হয় তাহলে সে পাপী হবে। আবার ক্ষুধা ও প্রয়োজনের চাহিদার বেশী পানাহার ইসরাফের মধ্যে গণ্য।
অপচয় করা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। বরং আল্লাহ তা’য়ালা অপচয় করতে নিষেধ করেছেন। অপচয় ছাড়া পানাহার বা স্বাচ্ছন্দে জীবন-যাপন করতে কোন অপরাধ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা খাও ও পান কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালবাসেন না’ -(সুরা আল আ’রাফ ঃ ৩১)। অপচয় ছাড়া সকল কাজে মধ্যম পন্থা অবলম্বনের ব্যপারে ইসলাম নির্দেশ প্রদান করেছে। অপচয় দারিদ্র্য আনে, আর দারিদ্র্য মানুষকে কুফুরির দিকে ধাবিত করে। তাই অপচয় নয়, নয় কৃপণতা। যারা অপচয় এবং কৃপণতা করেনা তাদেরকে আল্লাহ তা’য়ালা রহমানের বান্দা হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের গুণাবলী বর্ণনা করেছেন। এদের গুণাবলীর একটি হলো, আল্লাহ পাকের বাণী, ‘এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না। আর কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা এতদুভয়ের মধ্যবর্তী’ -(সুরা আল ফুরকান ঃ ৬৭)। আমাদেরকে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে চলতে হবে। সর্বদা অপচয় কে বর্জন করতে হবে। আর অপচয় বর্জন করা হবে ঈমানদার আর প্রকৃত মুসলমানের কাজ। অপচয় করা মুসলমানের কাম্য নয়। তাই সর্বক্ষেত্রে অপচয়কে বিসর্জন দিতে হবে। অপচয়কে রোধ করে সমাজ জাতির কল্যাণে এগিয়ে আসলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সহজতর হবে।
অপচয় করা জায়েজ নেই। অপচয়কারী শয়তানের ভাই। মহান রাব্বুল আলামীন অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই উল্লেখ করে অপচয় না করার জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ’ -(সুরা আল ইসরা ঃ ২৬, ২৭)। অপচয়কারী কারো প্রিয় হতে পারে না। কেননা, শয়তান মানবজাতির বন্ধু নয়, শত্রæ। আর শত্রæ কখনো প্রিয় হয় না। আর অপচয়কারী তো শয়তানেরই ভাই।
খলিফাতুল মুসলীমিন হজরত উমর (রা.) বলেন, ‘বেশী পানাহার থেকে বেঁেচ থাক। কারণ, অধিক পানাহার দেহকে, শরীরকে নষ্ট করে দেয়। রোগের জন্ম দেয় এবং কাজে অলসতা সৃষ্টি করে। পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন কর। এটা দৈহিক সুস্থতার পক্ষে উপকারী এবং অপব্যয় থেকে দূরবর্তী’ -(রুহুল মা’য়ানী)।
আমাদের সমাজের লোকজন অপচয়ে কোন অংশে কম নয়। খানা-পিনা, সাজ-সজ্জা, বিয়ে-শাদী, ওয়াজ-মাহফিল সর্বত্রই অপচয় হচ্ছে। বিয়ে করতে বা ওয়াজে গমণে আমরা হেলিকপ্টারে চড়ে যেতে দ্বিধাবোধ করি না। কেনাকাটায় আমরা কোন অংশে কম করি না। অথচ আমাদের প্রতিবেশীরা অনাহারে অর্ধাহারে দিন-রাত অতিবাহিত করছে। কাপড় বিহীন বা ছেড়াঁ কাপড় পরে জীবন-যাপন করে অতিষ্ট। এতে আমাদের কোন ভ্রæক্ষেপও নেই। অপচয়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত সম্পদ, জাতীয় সম্পদসহ অনেক কিছুই নষ্ট করে যাচ্ছি। যা কখনো কারো কাম্য নয়। যেভাবে সম্পদকে নষ্ট করছি তেমনিভাবে পাপকে গ্রহণ করছি সাদরে। তা কি আমরা উপলদ্ধি করছি? আমরা যদি আমাদের চাহিদা মিটিয়ে মিতব্যয়ী হতে চেষ্ঠা করি তাহলে আমাদের সমাজে শয়তানের ভাইদের সংখ্যা শুন্যের কোঠায় চলে আসবে। সমাজ হবে অপচয়বিহীন এক আদর্শ সমাজ। আমরা কি পারি না অপচয় রোধ করে সমাজের সর্বক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে? আসুন আমরা অপচয় রোধ করে সমাজকে এগিয়ে নেই।
উত্তর দিচ্ছেন : মাহফুজ আল মাদানী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।