Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হজ এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত

অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৮ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

হজ এক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের পাঁচ রুকন বা মূল স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম স্তম্ভ হজ। হজব্রত পালনের নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ, ওমরাহ পূর্ণ করো।” (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৯৬)।
উপরোক্ত আয়াতে হজ ও ওমরাহ একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। এ কথার গভীর তাৎপর্য রয়েছে। ইসলামের সকল ইবাদতের দু’টি প্রধান দিক। একটি হলো এক স্রষ্টায় দৃঢ় বিশ্বাস ও তাঁর প্রতি নিশংসয় আনুগত্য। দ্বিতীয়টি হলো মহান স্রষ্টার হুকুম-আহকাম বা আদেশ-নির্দেশানুযায়ী একমাত্র তাঁকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে যা কিছু করা হয়, ইসলামে তাই ইবাদত হিসেবে গণ্য। এ দু’টি মূল লক্ষ্য ও তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্ববহ এবং এর কোনোটিই বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান বা অনুভবযোগ্য নয়। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস কার কতটুকু তা একমাত্র আল্লাহই অবগত, অন্য কারো পক্ষে তা বোঝা সম্ভব নয়। কোন্ কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, কোন্ কাজ ভিন্ন উদ্দেশ্যে বা লোক দেখানোর জন্য, সেটাও একমাত্র আল্লাহই অবগত। অন্য কারো পক্ষে তা জানা-বোঝা বা উপলব্ধি করা কখনো সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে এটা সুস্পষ্ট যে, ইসলামে ইবাদতের প্রধান তাৎপর্য স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যকার একান্ত নিবিড় সম্পর্ক। এখানে অন্য কোনো মধ্যস্বত্ব ব্যবস্থা নেই। উপরোক্ত আয়াতেও হজ ও ওমরাহ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পালনের নির্দেশ রয়েছে। বান্দার নিয়ত কতটা সহিহ্ তার উপর ইবাদত কবুল হওয়া নির্ভর করে।
হজ এবং ওমরাহ দুনিয়ার কোনো স্বার্থ, লোভ-লালসা, মর্যাদা বা খ্যাতি লাভের উদ্দেশ্যে করলে আল্লাহর দরবারে তা কবুল হবে না, তা হতে হবে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে। আত্ম-বিশ্লেষণের দ্বারা ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যাতে সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয়, সে ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। পূর্বোক্ত আয়াতের পরবর্তী অংশে হজ ও ওমরাহ করার বিধিবিধান সম্পর্কে আল্লাহ বলেন :
“হজ হয় সুবিদিত মাসে। অতঃপর যে কেউ এ মাসগুলোতে হজ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তার জন্য হজের সময়ে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়। তোমরা উত্তম কাজের যা কিছু করো আল্লাহ সে সম্পর্কে অবগত এবং তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা করো, তবে আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ তোমরা আমাকে ভয় করো।” (সূরা বাকারা, আয়াত-১৯৭)।
ওমরহা বছরের যে কোনো সময় পালন করা যায়, এমনকি হজের সময়ও। কিন্তু হজ কেবল নির্দিষ্ট দিন বা দিনসমূহেই পালনের বিধান রয়েছে। হজ উপলক্ষে ধৈর্য, সহিষ্ণুতা ও আত্মসংযমের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হজের জন্য সফরের ক্লেশ সহ্য করতে হয়, পরিবার-পরিজনহীন অবস্থায় বিবিধ অজানা, অদেখা, অপ্রত্যাশিত অবস্থা, পরিবেশ ও পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এমতাবস্থায় একমাত্র আল্লাহর স্মরণ, তাঁর উপর একান্ত নির্ভরতা ও পবিত্র স্থানসমূহের ইজ্জত ও স্বীয় লক্ষ্যের কথা চিন্তা করে আত্মসংযমের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করা অত্যাবশ্যক।
ওই একই সূরার ১৯৮ নম্বর থেকে ২০৩ নম্বর আয়াতসমূহে হজের উদ্দেশ্য এবং কীভাবে তা পালন করতে হবে, হজের গন্তব্য স্থানসমূহের কোনটির কী গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর অন্য আর একটি সূরায় এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, “মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়, তা তো বাক্কায় (মক্কার অপর নাম বাক্কা) এটা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারি। এতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন আছে, (যেমন) মাকামে ইব্রাহীম এবং যে কেউ সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই গৃহের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য এবং কেউ প্রত্যাখ্যান করলে (সে জেনে রাখুক) আল্লাহ বিশ্বজগতের কারো মুখাপেক্ষী নন।” (সূরা আল ইমরান, আয়াত ৯৬-৯৭)।
উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কাবা গৃহের মর্যাদা, গুরুত্ব ও তার ইতিহাসের বিবরণ তুলে ধরেছেন। এখানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, মানবজাতির সর্বপ্রথম ইবাদতগৃহ কা’বা শরিফ নির্মাণ করেন আদি মানব আদম আ:। পরবর্তীকালে নূহ আ:-এর জমানায় সংঘটিত মহাপ্লাবনে এটা ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে আল্লাহর নির্দেশে মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইব্রাহীম আ: এবং তদ্বীয় পুত্র ঈসমাইল আ: এ পবিত্র গৃহ যথাস্থানে পুনঃনির্মাণ করেন। মাকামে ইব্রাহীম সে পবিত্র স্মৃতির স্মারক হিসেবে আজও কাবাগৃহের সামনে বিদ্যমান। পবিত্র কাবা অতি বরকতময় ও মর্যাদার প্রতীকÑ একথা উল্লেখ করে আল্লাহ এ পবিত্র গৃহকে বিশ্বজগতের দিশারি বলে অভিহিত করে প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তিকে এখানে এসে হজব্রত পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।
এখানে ‘বিশ্বজগতের দিশারি’ কথাটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, ভৌগোলিক দিক দিয়ে বিচার করলে কা’বা বা মক্কা নগরী পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু বা হৃদপিÐ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত, আদি মানব আদম আ: ও হাওয়া আ: জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হওয়ার পর এ পবিত্র স্থানেই বসতি গড়ে তোলেন। মানবজাতির আদি ও প্রাচীনতম বসতি হিসেবে তাই এর গুরুত্ব অপরিসীম। তৃতীয়ত, কা’বা পৃথিবীর প্রাচীনতম ইবাদতগৃহ। সাত আসমানের শেষ প্রান্তে বাইতুল মা’মুর অবস্থিত, যেখানে অগণিত ফিরিশতা আল্লাহর আরশ ঘিরে সর্বক্ষণ ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল রয়েছেন, সে পবিত্র বায়তুল মা’মুরের ছায়ার নিচেই পবিত্র কা’বার অবস্থান। চতুর্থত, যুগে যুগে যত নবী-রাসূল পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন, তাঁরা সকলেই পবিত্র কা’বা তাওয়াফ করেছেন। পঞ্চমত, আখেরি নবী মুহাম্মদ সা:-এর জন্ম পবিত্র কা’বার সন্নিকটে, এর অনতিদূরে হেরা পর্বতের গুহায় তাঁর উপর প্রথম ওহি নাজিল হয়, এ মক্কা নগরীতেই তিনি প্রথম ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন এবং মক্কা বিজয়ের পর এক লক্ষ সাহাবা নিয়ে এখানেই তিনি জীবনের প্রথম ও শেষ হজ পালন করেন এবং মক্কার অদূরে আরাফাত ময়দানে ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণ প্রদান করেন। ষষ্ঠত, ভৌগলিক দিক থেকে পবিত্র কা’বা পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং এটা ইসলামের কিব্লা হিসেবে চিহ্নিত। কিব্লা অর্থেও কেন্দ্র বোঝায়। সমগ্র পৃথিবীর কেন্দ্র আল-কা’বা। মানবজাতির ইতিহাসের শুরু এখান থেকেই। এখানেই মানবজাতির প্রথম ইবাদতগৃহ নির্মিত হয়েছে। কা’বাকে উদ্দেশ্য করেই দুনিয়ার সকল প্রান্ত থেকে আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দাগণ মহান স্রষ্টার উদ্দেশ্যে সিজ্দায় রত হন। তাই এটা শুধু পৃথিবীর কেন্দ্রভ‚মি নয়, মানবজাতির প্রাণকেন্দ্রÑ মানবজাতির আরাধনার মূল কেন্দ্রভ‚মি। সপ্ত আসমানে অবস্থিত বায়তুল মা’মুরে মহান স্রষ্টার কুদরতি কুরছির ছায়াতলে কা’বা শরিফের অলৌকিক অবস্থান। সপ্ত আসমান বা সুবিশাল সৌরজগৎ যে মধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা এক ও অবিচ্ছিন্ন সত্তা হিসেবে স্থিতি লাভ করেছে, তার সাথে পবিত্র কা’বা এক অলৌকিক আকর্ষণে দৃঢ় সংবদ্ধ। সপ্তমত, প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে মু’মিনেরা হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে এ পবিত্র নগরীতে উপনীত হন এবং মুসলিম উম্মাহর নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য শ্রবণ করেন। মুসলিম নেতৃবৃন্দ মুসলিম উম্মাহর সমস্যা-সম্ভাবনা ও ভবিষ্যত করণীয় সম্পর্কে আলোচনা-পর্যালোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাই মক্কানগরী যে মুসলিম মিল্লাতের নিকট এক অভ্রান্ত দিশারি তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই।
এ ছাড়াও হয়তো মক্কার আরো অনেক মর্যাদা ও গুরুত্ব রয়েছে, যে সম্পর্কে মহান রাব্বুল আ’লামিনই সম্যক অবগত। কা’বার গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে কুরআন শরিফের অন্যত্র আরো বলা হয়েছে : “ওরা কি দেখে না আমি হারামকে (কা’বার চারপাশে নির্ধারিত এলাকাকে হারাম বা সংরক্ষিত পবিত্র এলাকা বলা হয়) নিরাপদ স্থান করেছি, অথচ এর চতুরপাশ্বে যেসব মানুষ আছে তাদের উপর হামলা করা হয়, তবে কি তারা অসত্যেই বিশ্বাস করবে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?” (সূরা আন্কাবুত, আয়াত-৬৭)।
জাহিলি যুগে কাফির-মুশরিকগণের নিকটও কা’বার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এর পবিত্রতা ও মর্যাদা সম্পর্কে তারা সচেতন ছিল। আপন পিতৃ-হন্তাকেও হারামের মধ্যে ফেলে কেউ প্রতিশোধ নেয়ার কথা চিন্তা করত না। পৃথিবীর এ বরকতময় পবিত্রতম স্থানে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলমানরা এসে প্রতি বছর হজব্রত পালনের মাধ্যমে নিজেকে যেমন পূত-পবিত্র-পরিশুদ্ধ করে, সামগ্রিকভাবে বিশ্ব মুসলিমের কল্যাণ-চিন্তা, ঐক্য-ভ্রাতৃত্ব, সহমর্মিতা, পারস্পারিক সহযোগিতা ও সর্বোপরি সারা পৃথিবীতে ইসলামের প্রচার, প্রসার ও বিজয়কে সুনিশ্চিত করার জন্যও তেমনি সম্মিলিত পরামর্শ গ্রহণ ও কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের সুযোগ পায়। রাসূলুল্লাহ্ সা: বিদায় হজে যে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেছিলেন, তা শুধু সেখানে উপস্থিত মুসলমানদের জন্যই নয়; উপস্থিত-অনুপস্থিত-আগত-অনাগত সকল মুসলিম তথা সমগ্র মানবজাতির জন্য দিক-দিশারি স্বরূপ ও অপরিসীম গুরুত্ববহ এক মহামূল্যবান চিরন্তন দলিল। পাশ্চাত্য জগতে ১০৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ঘোষিত ম্যাগনা কার্টা, যেটাকে ‘স্বাধীনতা সনদ’ বা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক রূপে গণ্য করা হয়, তার চেয়ে বিদায় হজের ভাষণ ছিল বহুগুণে উত্তম, মানুষের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনন্যতুল্য। আরাফাতের ময়দানে আজও সে একই স্থানে দাঁড়িয়ে খুতবা পেশ করার রীতি প্রচলিত আছে। বিভিন্ন দেশের মুসলিম মনীষীগণ সেখানে আধুনিক যুগ-জিজ্ঞাসা, প্রয়োজন ও প্রেক্ষিত অনুযায়ী মুসলিম উম্মাহর দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দিয়ে থাকেন।
মুসলিম মিল্লাতের পিতা ইব্রাহীম আ: কর্তৃক কা’বা পুনঃনির্মাণ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, “এবং স্মরণ করো যখন আমি ইব্রাহিমের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সে গৃহের স্থান, তখন বলেছিলাম আমার সাথে কোনো শরিক স্থির করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রেখো তাদের জন্য যারা তাওয়াফ করে এবং যারা দাঁড়ায়, রুকু করে ও সিজদা করে এবং মানুষের নিকট হজের ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার নিকট আসবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণকায় উটসমূহের পিঠে, এরা আসবে দূর-দূরান্ত থেকে, যাতে তারা এ কল্যাণময় স্থানসমূহে উপস্থিত হতে পারে।” (সূরা হজ, আয়াত : ২৬-২৮)।
এরপর আল্লাহ বলেন, “অতঃপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাদের মানত পূর্ণ করে এবং তাওয়াফ করে প্রাচীন গৃহের। এটাই বিধান এবং কেউ আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত পবিত্র অনুষ্ঠানাদির সম্মান করলে তার প্রতিপালকের নিকট তার জন্য এটাই উত্তম।” (সূরা হজ, আয়াত : ২৯-৩০)।
কা’বা গৃহ নির্মাণ সম্পন্ন হলে আল্লাহ তায়ালা ইব্রাহীমকে আ: সেখানে হজের আহŸান জানানোর নির্দেশ দেন। সে আহŸান মহান স্রষ্টার কুদরতে দুনিয়ার সকল আগত-অনাগত মুসলিম হৃদয়ে সাড়া জাগায়। সে আহŸানে সাড়া দিয়েই মুসলিম মিল্লাত দেশ-দেশান্তর থেকে যুগ যুগ ধরে হজব্রত পালন করে আসছে। এখানে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহর বান্দারা এ পবিত্র গৃহ তাওয়াফ করবে, এখানে নামাজ পড়বে এবং আল্লাহ পাকের মহিমা ও একত্ববাদ ঘোষণা করবে। পূত-পবিত্র দেহ-মন নিয়ে এখানে এসে যারা হজের নির্দিষ্ট বিধানাদি পালন করে আল্লাহর নিকট রয়েছে তাদের জন্য উত্তম পুরস্কার। এভাবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর কালামে পাকে হজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আল-কুরআনে বিভিন্ন আয়াত নাজিল করেছেন। উপরে উদ্ধৃত আয়াতসমূহ থেকে আমরা তা সম্যক উপলব্ধি করতে পারি।
এরপর হজ সম্পর্কে কতিপয় মশহুর হাদিসের উল্লেখ করতে চাই। উদ্ধৃত প্রথম হাদিসটির বর্ণনাকারী সাহাবা আবু হুরায়রা রা: তিনি বলেন, “আমি নবী করিমকে সা:কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহরই জন্য হজ করল এবং এ সময় স্ত্রী সহবাস ও কোনোরূপ ফাসেকি কাজ করল না, সে তার মা কর্তৃক ভ‚মিষ্ঠ হওয়ার দিনের মতোই নিষ্পাপ হয়ে গেল।”
দ্বিতীয় হাদিসটির বর্ণনাকারী সাহাবা ইবনে আব্বাস রা: তিনি বলেন : “নবী করিম সা: বলেন, ‘হে লোক সকল! নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি হজ ফরজ করেছেন।’ তখন আকরা ইবনে হাবিস দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে রাসুল সা:! প্রত্যেক বছরই কি হজ ফরজ?’ নবী করিম সা: বললেন, ‘আমি যদি এর জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলি তবে তাই ওয়াজিব হয়ে যাবে, আর যদি তা ওয়াজিব হয়ে যেত, তবে তোমরা সে অনুযায়ী আমল করতে না আর তোমাদের জন্য সেটা করা সম্ভবও নয়। হজ মূলত একবারই ফরজ, যদি কেউ এর অধিক করে, তবে তা নফল।” (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, নাসায়ি, দারেমি)।
তৃতীয় হাদিসটির বর্ণনাকারী সাহাবা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: তিনি বলেন, “রাসূলে করিম সা: বলেন, তোমরা হজ ও ওমরাহ পরপর সঙ্গে সঙ্গে পালন কর। কেননা এ দু’টি কাজ দারিদ্র্য ও গুনাহখাতা নিশ্চিহ্ন করে দেয়, যেমন রেত লোহার মরিচা ও সোনা-রূপার জঞ্জাল দূর করে দেয় আর কবুল হওয়া হজের সওয়াব জান্নাত ছাড়া আর কিছুই না।” (তিরমিজি, আবু দাউদ)।
উপরোক্ত হাদিসসমূহ থেকে সুস্পষ্ট হয় যে, হজ সমর্থ ব্যক্তির (পুরুষ এবং নারী উভয়ের) জন্য ফরজ। অর্থাৎ হজে যাওয়া এবং আসার যাবতীয় খরচ নির্বাহ করার সঙ্গতি যার রয়েছে, তার উপরই হজ ফরজ। প্রয়োজনীয় শর্তাদি পূরণ করে হজ আদায় করলে তার একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত। এ থেকে আরো জানা যায়, হজ এবং ওমরাহ একই সাথে করা বাঞ্ছনীয় অর্থাৎ হজের আগে অথবা পরে উভয় ক্ষেত্রেই ওমরা পালন অতিরিক্ত সওয়াব।
ইবাদতের পাঁচ ফরজের মধ্যে কালেমা, সালাত ও সওম ইত্যাদি ইবাদত নিজ নিজ স্থানে অবস্থান করে আদায় করা সম্ভব। কিন্তু হজ ব্যক্তিগত ইবাদত হওয়া সত্তে¡ও তা পালিত হয় বিশ্বজনীনভাবে। বিশ্বের সব দেশ, ভাষা, বর্ণ, গোত্রের সমর্থ মুসলিম নর-নারী এক স্রষ্টার উদ্দেশ্যে একটি মাত্র কেন্দ্রের দিকে একই সময়ে একটি মাত্র পবিত্র আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে সমবেত হয় আল্লাহর ঘরে। সে অগণিত মানুষের ব্যাকুল চিত্তের একটি মাত্র আওয়াজ মুখরিত হয় হেরেম শরিফের চতুর্দিকে : “লাব্বাইকা আলাহুম্মা লাব্বাইকা। লাব্বাইকা লা শারিকালাকা, লাব্বাইকা। ইন্নাল হাম্দা ওয়ান্নিয়ামাতা লাকা ওয়াল মূলক্, লা-শারিকালাকা।” অর্থাৎ তোমার ডাকেই হাজির হয়েছি, হে আল্লাহ! আমি এসেছি, তোমার কোনো শরিক নেই, আমি তোমার নিকট হাজির হয়েছি। সকল তারিফ-প্রশংসা একমাত্র তোমারই, সব নিয়ামত তোমারই দান, রাজত্ব আর প্রভুত্ব সবই তোমার। তুমি এককÑ তোমার কোনো শরিক নেই।
বিশ্বের কেন্দ্রভ‚মিতে রাষ্ট্র-গোত্র, ভাষা-বর্ণ নির্বিশেষে তৌহিদবাদের এই যে সমবেত সবল সুস্পষ্ট ঘোষণা, স্রষ্টা ও বান্দার সম্পর্কের এই যে বিশ্বজনীন নিসঃঙ্কোচ আবেগাকুল উচ্চকণ্ঠ উচ্চারণের ফলে মানবজাতির এক ও নির্বিশেষ ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সত্তার সর্বজনীন প্রকাশ ঘটে। বিশ্বজনীনতা ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব উপলব্ধির ক্ষেত্রে এর তাৎপর্য সীমাহীন ও অনন্য মহিমায় সমুজ্জ্বল। তাই হজ ব্যক্তিগত ইবাদত হওয়া সত্তে¡ও তা মুসলিম মিল্লাতের আন্তর্জাতিক বার্ষিক সম্মেলন; বিশ্ব মুসলিমের তথা মুসলিম মিল্লাতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরও আন্তর্জাতিক মহাসম্মেলন। এ উদ্দেশ্য ও অনুভ‚তি সামনে রেখে হজব্রত উদ্যাপন করলে একদিকে যেমন ব্যক্তিগতভাবে নিষ্কলুষ চরিত্রের মানুষ হওয়া যায়, অন্যদিকে তেমনি মুসলিম উম্মাহর ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক দৃঢ় ও অটুট হওয়ার সাথে সাথে সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠার কার্যকর কর্মসূচি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন সহজ হয়। এর দ্বারা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, পরাকাষ্ঠা ও সর্বোপরি আল্লাহর মহত্ব¡, শ্রেষ্ঠত্ব ও ইসলামের শক্তিমত্তার এক অনন্য প্রকাশ ঘটে।
হজের ব্যক্তিগত ও আন্তর্জাতিক এ দু’টি দিকই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। দুটো দিকের তাৎপর্য গভীরভাবে প্রণিধানযোগ্য। ইসলামের অন্যান্য ফরজ ইবাদত নিজের ঘরে বসে, দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অব্যাহত রেখে, পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন পরিবৃত অবস্থায় পালন করা সম্ভব। কিন্তু হজ এ সবকিছুর ব্যতিক্রম। হজের উদ্দেশ্যে নিজের ঘর-সংসার, সাংসারিক-জাগতিক সকল কাজ এবং আত্মীয়স্বজন প্রতিবেশী সবকিছু পরিত্যাগ করে আল্লাহর মেহমান হিসেবে সফরে বের হতে হয়। সারা জীবন ধরে নিজের কষ্টার্জিত অর্থে যে আরামের আশ্রয় গড়ে তোলা হয়, আনন্দ-ভালোবাসা, স্নেহ-মমতায় স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-নিকটাত্মীয়দের সঙ্গে যে অচ্ছেদ্য নিবিড় সম্পর্ক সৃষ্টি হয়, একমাত্র আল্লাহর মহব্বতে সে সবকিছুর মায়া-বন্ধন ছিন্ন করে ‘লাব্বাইক’
অর্থাৎ ‘আমি হাজির’ একথা বলে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয়। দীর্ঘ পথের ক্লান্তি, সফরের সীমাহীন তকলিফ সহ্য করে আল্লাহর ঘরে উপনীত হয়ে নিজেকে একান্তভাবে মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট পেশ করতে হয়।
হজের সময় পবিত্র কা’বা, মিনা, আরাফাহ্, মুজদালিফা এ সমগ্র এলাকায় এক অপার্থিব দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেখানে ধনী-দরিদ্র, আমির-নফর সকলের পরনে মাত্র দুই ফর্দ শ্বেতশুভ্র অকাট সেলাইবিহীন সাধারণ কাপড়। জীবন-সংসারের সকল বন্ধন ছিন্ন করে, আপনজনদেরকে শোক-সাগরে ভাসিয়ে মানুষ যে অবস্থায় পরকালের পথে যাত্রা করে, ঠিক সে একই অবস্থায় সমবেত হতে হয় পবিত্র ক’াবার ঘরে, মিনা, আরাফাত ও মুজদালিফার ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থানে। সে অবস্থায় প্রত্যেকের মনে যে ভাবান্তর ঘটে তা কেবল প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার দ্বারাই সম্যক উপলব্ধি করা সম্ভব।
হজব্রত সমাপন করে রাসূলুল্লাহর সা: পবিত্র রওজা মোবারক জিয়ারত করে যখন কেউ ঘরে ফিরে আসে, তখন তার অবস্থা সদ্যজাত একজন মাসুম শিশুর মতোই হয়। দুনিয়ার লোভলালসা, স্বার্থপরতা, আবিলতা তাকে স্পর্শ করার কথা নয়। এভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে হজের দ্বারা যে চারিত্রিক উৎকর্ষ ও আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটে, মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাতের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তার চেয়ে কার্যকর আর কিছু আছে বলে মনে হয় না। আন্তর্জাতিক বা সর্বজনীন বিষয়টি প্রসঙ্গে বলা যায় যে, ইহরাম বেঁধে, লাব্বাইক বলে হেরেম শরিফের চতুর্দিক থেকে মানুষ ছুটে এসে যখন বায়তুল্লাহ শরিফ তাওয়াফ করতে থাকে তখন সেখানে বর্ণ-গোত্র, ভাষা, অঞ্চল, ধনী-দরিদ্র, আমির-মিসকিন সব ভেদাভেদ লোপ পায়। যে মহান স্রষ্টা আসমান-জমিন, জিন-ইনসান তথা সমস্ত জগৎ ও সকল মাখলুকাতের স্রষ্টা, যিনি আমাদের ইহ-পরকালের একমাত্র প্রভু তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর দুনিয়ার প্রচলিত, মানুষের মনগড়া কৃত্রিম ভেদাভেদের কথা কখনো মনে স্থান পায় না। এমন অকৃত্রিম সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও মানবতাবোধের বিকাশ পৃথিবীতে আর কোনোভাবেই কল্পনা করা যায় না।
মিনা ও আরাফাতে হাজীদের মনে যে অনুভ‚তির সৃষ্টি হয়, তা বর্ণনা করে বোঝানো মুশকিল। মিনার ময়দানে যেখানে ইব্রাহীম আ: তাঁর প্রাণাধিক পুত্র ঈসমাইল আ:কে আল্লাহর নির্দেশে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন এবং কিশোর ঈসমাইল আল্লাহর হুকুম পালনার্থে পরম স্নেহবৎসল পিতার উদ্যত ছুরির সামনে সাগ্রহে নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন, সে মহান আত্মত্যাগের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত পুণ্যভ‚মিতে সর্বকালীন মানুষের জন্য যে শিক্ষা ও সুমহান আত্মত্যাগের যে সমুজ্জ্বল আদর্শ বিদ্যমান তা চোখের সামনে জ্বাজল্যমান হয়ে ওঠে। সে ঐতিহাসিক আত্মত্যগের কথা স্মরণ করেই ইব্রাহীম আ:-এর সুন্নত হিসেবে সেখানে কোরবানি করতে হয়। এ মিনার ময়দানেই কুমন্ত্রণাদায়ী শয়তানের উদ্দেশ্যে বারবার পাথর নিক্ষেপ করে নফসের সমস্ত শয়তানি ওয়াসওয়াসা থেকে নিজেকে মুক্ত ও নিষ্পাপ করতে হয়।
আরাফাতের ময়দান এক ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত মহান পুণ্যভ‚মি। প্রথম মানব-মানবী বেহেশতচ্যুত আদম আ: ও মা হাওয়া আ: দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর পৃথিবীর কেন্দ্রভ‚মি এ আরাফাতের ময়দানেই প্রথম মিলিত হয়েছিলেন এবং অনুতপ্তচিত্তে, অশ্রæসিক্ত নয়নে প্রার্থনা করে এখানেই তাদের কৃত গুনাহখাতা মাফ করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। আদি মানব আদমের আ: সঙ্গে মা হাওয়ার আ: পৃথিবীতে প্রথম পরিচয় ঘটেছিল এখানেই। তাই এর নাম হয়েছে ‘আরাফাত’ অর্থাৎ পরিচয়। আদম-হাওয়ার আ: উত্তর পুরুষেরা আজো সাশ্রæনয়নে, বিগলিত চিত্তে মহান স্রষ্টার নিকট এখানে প্রার্থনায় রত হয়ে নিজেদের গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করে। এটা গুনাহ মাফের এক ঐতিহাসিক পুণ্যভ‚মি।
এ ছাড়াও আরো অনেক ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত রয়েছে এ পুণ্যভ‚মিকে কেন্দ্র করে। আরাফাত পর্বতের পাদদেশে দাঁড়িয়ে বিশ্ব মানবতার মহান মুক্তিদূত, মানবতার সুউজ্জ্বল আদর্শ সরওয়ারে কায়েনাত, মহানবী মুহাম্মদ সা:-এর দরাজ কণ্ঠে বিশ্ব মানবের নিকট সর্বশেষ ও সর্বোত্তম শিক্ষারূপে পরিগণিত বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেছিলেন। একদিকে তা যেমন সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, মানবাধিকার, শান্তি, কল্যাণ ও মানবতার সর্বোত্তম শিক্ষা, অন্যদিকে তেমনি আল্লাহ্-ভীতি, হক-পরস্তি, উচ্চ নৈতিকতাবোধ ও জীবনের সঠিক দিশারি হিসেবে তা মহামূল্যবান, অনন্য ঐতিহাসিক দলিলরূপে চিহ্নিত। আরাফাতের গাত্রে খোদিত স্মৃতিফলকের দিকে (যেখানে দাঁড়িয়ে মহানবী সা: বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন) তাকালে সে মহাবিপ্লবীর কণ্ঠ যেন আজও মু’মিনের কর্ণকুহরে অনুরণিত হয়ে হৃদয়কে আলোড়িত, মথিত, উচ্চকিত, বিগলিত করে। আরাফাতের সে দোয়া কবুলের স্থানে দাঁড়িয়ে হাজীগণ ইমামের খুতবা শোনেন এবং বিগলিত চিত্তে ক্রন্দনরত অবস্থায় নাজাত ও মাগফিরাতের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনারত হন।
এ ছাড়া, পবিত্র মক্কায় মহানবীর সা:-এর জন্মস্থান, পবিত্র মদিনায় তাঁর বাসস্থান, সাহাবায়ে কেরাম ও ইসলামের সংগ্রাম-যুগের অসংখ্য ঘটনা ও ঐতিহাসিক পুণ্য স্মৃতিবিজড়িত স্থানসমূহ জিয়ারত করার সময় আদি মানব আদম আ: থেকে মহানবী সা: ও সাহাবাদের সংগ্রামী জীবনের সব ঘটনা ও কাহিনীই যেন জীবন্ত হয়ে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। বিশ্বজগৎ তথা মানব-ইতিহাসের এ যেন এক বিস্তীর্ণ, উন্মুক্ত জাদুঘর। জাদুঘরে যেমন বিভিন্ন প্রাচীন স্মৃতিচিহ্ন সযতেœ সংরক্ষিত থাকে, এ পবিত্র স্থানসমূহে যেন তেমনি কুদরতি কৌশলে পৃথিবীর আদি মানব-মানবী থেকে আখেরি নবী পর্যন্ত বিশ্বের এক সুদীর্ঘ ইতিহাসকে সযতেœ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে।
লেখক : গবেষক।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন