পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রায় চার বছর আগে গুম হওয়া বাবাকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে পারভেজ হোসেনের মেয়ে হৃদি’র আকুতি, ‘হাসিনা আন্টি, বাবাকে ফিরিয়ে দাও,বাবার সাথে ঈদ করবো’ । হৃদি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে, আম্মু আমার নতুন ড্রেস কিনে দেয়নি। পাপার সঙ্গে কেনাকাটা করবো। এ আকুতি গুম হওয়া পারভেজ হোসেনের ছোট্র মেয়ের।
একই আকুতি জানিয়ে খালেদ হাসান সোহেলের ছেলে আরিয়ান বলছিল,আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দিন। আব্বুকে অনেক মিস করি। আব্বুর সঙ্গে ঈদ করবো।
গুম হয়ে যাওয়া পারভেজ হোসেনের ছোট্ট মেয়ে হৃদি কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,আমি বাবার সঙ্গে ঈদ করতে চাই! প্লিজ, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন!’ ওর কান্নায় পুরো পরিবেশ তখন ভারী হয়ে ওঠে। উপস্থিত সকলের চোখ তখন ভিজে ওঠে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে স্বজনদের আয়োজিত ‘মায়ের ডাক’ অনুষ্ঠানে এ আকুতি জানান গুম হওয়া মানুষের স্বজনেরা। জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘আন্তর্জাতিক গুম দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় নিজেদের দুঃসহ কষ্টের কথা তুলে ধরেন গুম হয়ে যাওয়া মানুষের পরিবারের সদস্যরা।
‘মায়ের ডাক’ ঈদের আগে গুম হওয়া সন্তানদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিন’ ব্যানারে গুম হওয়া ২৯টি পরিবারের সদস্যরা এক হয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করেন।
এসময় অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমরা সবাই অসহায় হয়ে গেছি। আমরা কার কাছে যাব? আমাদের কারও কাছে যাওয়ার জায়গা নেই। গুম হওয়াদের স্বজনেরা বলেন, ঈদের আগে আমরা আমাদের প্রিয় মানুষটিকে ফিরে পেতে চাই।
আহাদ, হৃদি, আরিয়ান, লামিয়া আক্তার মিম। কারো বয়স ৮, আবার কারো বয়স ১০ থেকে ১২ বছরের কাছাকাছি। সবাই যার যার বাবাকে ফিরে পেতে চায়। মা তার ছেলেকে,সন্তান তার বাবাকে, স্ত্রী তার স্বামীকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
গুম হওয়া তিতুমীর কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুমের মা আয়েশা আক্তার কাঁদো কাঁদো স্বরে বলছিলেন, আমার ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। তিন বছর ৮ মাস হয়ে গেল। আমরা হৃদয়ে ব্যথা, কষ্ট, যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছি। আপনারা বলুন, এটাকে কি বেঁচে থাকা বলে?’
তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি চাইলে আমাদের সন্তানরা ফিরে আসবে। আপনাকে আমরা দেখেছি স্বজনহারাদের জন্য কান্না করতে। কথা বলতে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন রেদওয়ানের মাসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে গুম হওয়া মানুষদের ফিরিয়ে দিতে ও অপরাধীদের বিচারের দাবিতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানান পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলেন, দ্রæত এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আগামী ডিসেম্বর থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। অনুষ্ঠানজুড়ে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা কাঁদতে থাকেন। একটি শোক বিহŸল পরিবেশ তৈরি হয় সেখানে।
গুম হওয়া এসব মানুষকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুল আহ্বান জানান নিখোঁজ সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন। তিনি বলেন, আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমাদের এ কান্না, এই দুঃসহ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিন।
২০১১ সালে নিখোঁজ হন কে এম শামীম আখতার। তাঁর স্ত্রী ঝরনা খানম বলেন, আর এক মাস পরেই শামীমের নিখোঁজের ছয় বছর হবে। বিচার তো দূরের কথা, এখনো সন্ধানই পাওয়া গেল না। রাষ্ট্র তার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেনি। তিনি সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
বঙ্গবন্ধুর দেহরক্ষী ছিলেন কাজী মতিন। কাজী মতিনের ছেলে কাজী রকিবুল হাসান শাওন নিখোঁজ হন ২০১৪ সালে। শাওন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। কাজী মতিন বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর দেহরক্ষী ছিলাম। চৌকস সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলাম। আমি প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে এমন কেউ নেই, যাঁর কাছে যাইনি। সবার দ্বারে ঘুরেছি। এখন আমার হতাশ লাগে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অধিকারের পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, নারীপক্ষের সদস্য শিরীন হক প্রমুখ।
নাসির উদ্দিন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন গুম বলে কোনো শব্দ নেই। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দলের সাধারণ মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার কি কখনো বাধা দিয়েছে?
অনুষ্ঠানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, গুম হওয়া ব্যক্তিরা যত দিন ফিরে না আসবে, তত দিন মনে করব প্রধানমন্ত্রীর কানে এ কান্না যাচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন তিনি রাখেন, আপনি গুম হতে রাজি আছেন?
শিরীন হক বলেন, আমরা সবাই অসহায় হয়ে গেছি। আমরা কার কাছে যাব? আমাদের কারও কাছে যাওয়ার জায়গা নেই।
এ সময় নূর খান লিটন বলেন, সরকার যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁরা কি অন্ধ, না বধির? তারা কি কিছু দেখতে পান না?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।