পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1719365801](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষজ্ঞ মহল বলছেন সিলেটের জন্য একটি দুর্যোগ হলো বন্যা। একদিকে উজানের (ভারত থেকে আসা) পাহাড়ী ঢল। অপরদিকে অঝোর বৃষ্টিপাত, যার মূলে দায়ী প্রকৃতি বিনাশী বিশ্বায়ন। সারা দেশের ন্যায় এ দুটোর কারণে চরম হুমকিতে গোটা সিলেট। বিস্তীর্ণ অঞ্চল আজ পানির নিচে। ফসলহানী খাদ্য পানি সঙ্কটে হাহাকার সর্বত্র। বাস্তবতা হয়ে গেছে নীরব দুর্ভিক্ষ। চলতি মৌসুমে ৩ দফা বন্যায় আজ সিলেট বিপর্যস্ত। ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান তো দীর্ঘ। প্রকৃত হিসাব অনেক বেশি, তাও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র জানিয়েছে, চলতি বছরে প্রথম দফা বন্যায় সুনামগঞ্জের বুরো ফসল সম্পূর্ণরূপে তলিয়ে যায়। সিলেট ও মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরপাড়ের মানুষের স্বপ্নের ফসল কেড়ে নেয়। হাওরপাড়ের কৃষকের এই মাতম যখন চলছে, তখন দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে সিলেট ও কুশিয়ার পরবর্তী বিভিন্ন উপজেলায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এবার ৩য় দফা বন্যার কবলে পড়ল সিলেট সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলা। সিলেট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো: মফজুলের রহমান জানান, চলমান বন্যায় সুনামগঞ্জ বেশিরভাগ উপজেলা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিলেট জেলার ৮টি উপজেলায় ৪৩টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর রোপণ আমন ও বীজতলা। পানিবন্দি রয়েছেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। তবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণসহ নানামুখী পদক্ষেপ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু বন্যা আর ত্রাণে কি সমাধান এ দুর্যোগ মোকাবেলায়, সেই প্রশ্ন এখন বাস্তবতা।
উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা থেকে রক্ষায় ভারতের সাথে গ্রহণযোগ্য মীমাংসার একটি দিক থাকলেও সিলেটের অভ্যন্তরীণ চিত্র খুবই ভয়াবহ। সিলেট অঞ্চলের প্রধানতম সুরমা নদী দীর্ঘ ২১৭ মাইল ব্যাপ্তি। সেই সুরমায় শুকনো মৌসুমে প্রাণ থাকে না। ধু-ধু চরই এখন সুরমার বাস্তবতা। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২৯৬ বর্গকিলোমিটার এলাকার বাসিন্দারা ধলাই ও পিয়াইন নদীর উপর নির্ভরশীল। সেই খরস্রোতা ধলাই নদী এখন প্রায় অস্তিত্বহীন। পাহাড়, নদী, ছড়া, ঝর্ণা আর সবুজে ভরা পর্যটন এলাকা জৈন্তার তার রূপ বিগড়ে যাচ্ছে সারি নদী বিরূপ প্রভাবে। সিলেট অঞ্চলে কেবল বন্যা নয়, নদী তার গতিপথ পরিবর্তন ছাড়াও নাব্যতা হারাচ্ছে। ফলে নদী ভাঙন ব্যাপক হচ্ছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রধান নদী সুরমা, মৌলভীবাজারের প্রধান নদী মনু, ধলাই এবং হবিগঞ্জের খোয়াইসহ ২৪টি নদীর অস্তিত্ব এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই, মনু, ধলাই, পিয়াইন, সারি, সুতাং, রত্মা, সোনাই, করাঙ্গী, ঝিংড়ী, ভেড়ামোহনা, রক্তি, কালনী, বৌলাইসহ অসংখ্য নদী নাব্যতা হারিয়ে স্থানে স্থানে ভরাট হয়ে গেছে। বেসরকারি প্রেক্ষিত এর জরিপ অনুযায়ী মৌলভীবাজার জেলার হাকালুকি হাওরের ২৮১টি বিলের মধ্যে ভরাট হয়ে গেছে ১৩৩টি। এই পরিস্থিতিতে সিলেটে নদীর তীরবর্তী জনপদের জীবন-জীবিকা বদলে যাচ্ছে। বিলীন হচ্ছে জীব-বৈচিত্র। অভ্যন্তরীণ এ বাস্তবতা থেকে উত্তরণ স্থানীয়ভাবে জরুরী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। নদী খননের বিকল্প নেই, পানির ধারণা ক্ষমতা না বাড়ালে পানির ভয়াবহতা থেকেই যাবে, আশঙ্কার কথা হচ্ছে এভাবে উপায়হীন হয়ে বসে থাকলে ডুবেই মরবো আমরা।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল বিভাগের প্রফেসর ড. জহির বিন আলম সুরমা নদীর উপর তার গবেষণা রিপোর্টে বলেছেন, সিলেটের নদ নদীগুলো ভরাট হয়ে এর গভীরতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে পানি ধারণ করতে পারছে না। এতে করে বর্ষা মৌসুমে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার শুকনো মৌসুমে নদীতে চর জাগছে। আগামীতে বর্ষা মৌসুমে বন্যা আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। ড. জহির বলেন, সুরমা নদীকে বাঁচাতে হলে নদী খননের পাশাপাশি এর দু’পাড়ে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। নদী খনন করতে হবে। তবেই বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও স্থায়িত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণভাবে বন্যা থেকে রক্ষার এ ব্যবস্থার পাশাপাশি ভারতের সাথে জোরালো কূটনৈতিক সমাধান জরুরী। অন্যাথ্যায় উজানের ঢলের তান্ডবে আমরা অস্তিত্বহীন হয়ে যাবো। সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সিলেটের প্রেসিডেন্ট ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বন্যার নিকট অসহায় আত্মসমর্পণ করে যাচ্ছি আমরা, রুখে না দাঁড়ালে আমাদের মানচিত্র বদলে যাবে, হারিয়ে যাবে অস্তিত্ব। প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ, ত্রাণে সমাধান নয়, অভ্যন্তরীণ পানি ধারণ ব্যবস্থা গড়তে সংশ্লিষ্টদের সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ আমরা বন্যার সাথে যুদ্ধে এখন অবতীর্ণ। কিন্তু সেই যুদ্ধে জয়ের বাস্তবিক কৌশল নির্ধারণ করে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে প্রকৃতি বান্ধব ব্যবস্থাই বাঁচার একমাত্র উপায়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কীম বলেন, সিলেটের অধিকাংশ বড় নদীর উৎস উত্তর-পূর্ব ভারতের খাসিয়া-জৈন্তিয়াহিল ও ত্রিপুরা রাজ্যে। সেখান থেকে প্রবাহিত পানি নিয়েই সিলেট অঞ্চলের নদীগুলোর ছুটে চলা। তাই উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ে বৃষ্টি হলে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল হয়ে নেমে আসে সেই পানি, সেই সাথে আসা লাখ লাখ টন বালি ও মাটি। আর এই বালি ও মাটি বছরের পর বছর ধরে সিলেট বিভাগের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওরকে ভরাট করতে করতে এমন অবস্থায় নিয়ে এসেছে যে, এখন অতিরিক্ত পানি দ্রæত নামতে পারে না। ফলে নতুন নতুন ফসলের জমি ও গ্রামাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে। তিনি বলেন, পাহাড়ি ঢলের সাথে ও আন্তঃসীমান্ত নদী দিয়ে বালি ও মাটি আসার পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আব্দুল করিম কীম বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সোচ্ছার ও সিলেটের নদ-নদী রক্ষায় নদী খননসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে কেবল পরিবেশ রক্ষা নয়, ঘন ঘন বন্যা থেকেও রক্ষা পেতে পারি আমরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম জানান, সিলেট অঞ্চলের জন্য বন্যাও একটি দুর্যোগ। অভ্যন্তরীণভাবে নদী খনন করলেই বন্যা থেকে রক্ষার একমাত্র সমাধান হবে না। বিশেষ করে সুরমা কুশিয়ারা উৎপত্তিস্থলের খনন করতে হবে। সেকারণে সুরমা-কুশিয়ারার উৎপত্তিস্থলে খনন করার জন্য ঢাকা থেকে দু’দেশে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। এছাড়া সিলেট অঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রণে তেমন বড় কোন প্রকল্প নেই বলে সিরাজুল ইসলাম জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।