পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ক্রিকেট খেলার প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না। বিশ্বক্রিকেটে বাংলাদেশের টাইগারদের পারফরমেন্স ও ধারাবাহিক সাফল্যে ক্রিকেটের প্রতি ক্রমান্বয়ে আগ্রহ বেড়ে যায়। বিশেষ করে বোলিং-এ এখন বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। বিশ্বক্রিকেটে যখন বাংলাদেশের ‘উদীয়মান শক্তি’ হিসেবে আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে তখন শকুনের শ্যেন দৃষ্টি পড়েছে টাইগার খ্যাত ক্রিকেটের ওপর। তারই অংশ ভারতে টি-২০ খেলার সময় দুই ক্রিকেটারের বোলিং এ্যাকশন নিয়ে বিতর্ক। এ ঘটনায় দেশের ক্রিকেট ভক্তরা প্রচ- ক্ষুব্ধ। শুধু দেশের দর্শক নয়, বিশ্বের যে সব ক্রীড়ামোদী ক্রিকেটের ভদ্র দর্শক হিসেবে পরিচিত তারাও ক্ষুব্ধ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, টুইটার, গুগল ও পাঠক মতামতে চলছে তীব্র প্রতিবাদ-বিতর্ক। আরাফাত সানি ও তাকসিনের বোলিং এ্যাকশন নিয়ে সন্দেহকে তারা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ বলছেন এটা ভারতের পরশ্রীকাতরতা। কারণ, বাংলাদেশ ক্রিকেটে ভাল করলে তাদের ক্রিকেট সংক্রান্ত একচেটিয়া ব্যবসা কমে যাবে।
রাজনৈতিক হানাহানি এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী জনগণের ভোটের অধিকার ভূলণ্ঠিত হওয়ায় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ইমেজ কার্যত তলানীতে। জাতিসংঘসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। কিন্তু ক্রিকেট সাফল্য বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা উড়ছে পত্ পত্ করে। বিশ্বের ১০টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট যখন বিশ্বক্রিকেটে উদীয়মান সূর্য হতে চলেছে তখন ভারতের ইন্ধনে ক্রিকেটের ওপর বিদেশী শকুনেরা কালো থাবা বসাচ্ছে। নখ দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করতে চাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে। ২০১৫ সালে অষ্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলার সময় এটা হয়েছে। এবার ভারতের মাটিতে চলমান টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা যখন ভাল করছে তখন সেই সাফল্য ঠেকিয়ে দিতে তথাকথিত ‘সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশন’ ইস্যু করা হচ্ছে। এর আগেও ক্রিকেটের তিন পরাশক্তি (মূলত সিন্ডিকেট ও কুচক্রী) অষ্ট্রেলিয়া, ইংল্যা-, ভারত ঈর্ষান্বিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অগ্রযাত্রা ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। বিশ্ব ক্রিকেটের বিতর্কিত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি শ্রীনীবাসনের চক্রান্তে আইসিসির সভাপতি পদ থেকে বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংগঠক আ হ ম মোস্তফা কামাল পদত্যাগ করেছেন। মোস্তফা কামাল ২০১৫ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলায় আম্পায়ারিং নিয়ে প্রতিবাদ করে পহেলা এপ্রিল পদত্যাগের সময় শ্রীনিবাসনের ‘ঔদ্ধত্য’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পরে সেই শ্রীনিবাসন নিজ দেশ ভারতেই প্রত্যাখ্যাত হয়ে এখন ঘৃণিত ব্যক্তি।
বাংলাদেশের ক্রিকেট দল নেদারল্যান্ড ম্যাচের জয় দিয়ে বিশ্বকাপের শুভ সূচনা করেছে। বৃষ্টির কারণে আয়ারল্যা-ের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে। কিন্তু হঠাৎ করে তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানির বোলিং নিয়ে সন্দেহ করছেন আম্পায়াররা! বছর জুড়ে দেশে-বিদেশে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ওই সব ম্যাচে বোলারদের কেউ হাত বাঁকা করে, কেউ হাত সোজা করে বল করছেন। বাঁ হাতি বোলাররা নিজস্ব স্টাইলে বল করছেন। এ বোলিং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল-আইসিসি’র চোখে পড়ছে না! ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ ভাল করায় তারা বোলিং নিয়ে সন্দেহ শুরু করলেন? ভারতের শকুনের তীরের নিশানা বাংলাদেশ ক্রিকেট? যার জন্যই বিশ্বক্রিকেটে শকুনদের এজেন্ট আম্পায়ারদের শিকার হলেন বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানি। হঠাৎ করে আইসিসির এই আচরণ কি সন্দেহজনক নয়? ভারত, অষ্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের বোলিং নিয়ে কখনো তাদের সন্দেহ হয় না? অথচ অন্যান্য দেশের বোলিং নিয়ে খেলার সময় সন্দেহ হয়? নাকি আম্পায়াররা ওই তিন দেশের ক্রীড়নক! আম্পায়ারদের হঠাৎ এই আচরণে শাস্তির ভয়ে অন্যান্য দেশগুলো মন্তব্য না করলেও বাংলাদেশের কোচ হাতুরেসিংহ সাহস করে বলেছেন, ‘তাদের যদি আমার বোলারদের নিয়ে সন্দেহ থাকে, আমারও তাদের (আইসিসির) অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ আছে।’ শাবাশ হাতুরেসিংহ! শাবাশ!!
ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভাল। ধীরে ধীরে খেলার উন্নতি হচ্ছে। বছর দ্ইুয়েক থেকে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ নতুন এক শক্তি হয়ে উঠেছে। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে সিরিজ হারানো বা এশিয়া কাপের ফাইনালে চলে আসার মতো ঘটনায় বদলে গেছে টাইগারদের শরীরী ভাষা। এতোদিন টি-২০তে কিছুটা দুর্বল থাকলেও এখন সেটাও কাটিয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে খেলোয়াড়দের মনোবল ও পারফরম্যান্সেই বদলে যাচ্ছে ক্রিকেট কেন্দ্রিক বাণিজ্যের সমীকরণ। বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলায় লগ্নি করছে দেশী-বিদেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভারতে যেমন ক্রিকেট নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়; বাংলাদেশও সে পথে হাঁটতে শুরু করায় কি তাদের ঈর্ষার কারণে পরিণত হয়েছে? বিশ্বক্রিকেটে আইসিসির বিরুদ্ধে সন্দেহ ঝড় উঠেছিল ২০১৫ আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরুর পূর্বে। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ওই সময় পাকিস্তানের সাঈদ আজমল, বাংলাদেশের সোহাগ গাজী, শ্রীলঙ্কার সচিত্র সেনানায়েকে, নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসনের নিষিদ্ধ হওয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারিন ও পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজের বোলিং অ্যাকশনকে সন্দেহজনক বলা হয়। সন্দেহ এই কারণে যে, বোলাররা দীর্ঘদিন ধরে বল করলেও এ সব সন্দেহ করার সময় বেছে নেয়া হচ্ছে কোনো না কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের আগে; যাতে ওই বোলারের বিশ্বকাপে খেলতে না পারে। শেষ পর্যন্ত খেলতে পারলেও মনোবল যাতে নষ্ট হয়। যে সব বোলারকে সন্দেহ করা হয়; তারা অনেকেই বোলিং ্এ্যাকশন বৈধ বলে পরে স্বীকৃতি পাচ্ছেন; অথচ তারা দেশের হয়ে বিশ্বকাপে খেলতে পারেন না। প্রশ্ন হলো আইসিসির ‘বিগ থ্রি’ সি-িকেট ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের কোনো বোলারকে পরীক্ষার জন্য সন্দেহের তালিকায় আনা হচ্ছে না কেন? আইসিসির আম্পায়াররা কি তাদের কেনা গোলাম? পত্রিকায় খবর বের হয়েছে আইসিসি বাংলাদেশসহ অনেক দেশের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে। সংগঠনটির প্রতি মানুষের এ সন্দেহ বাড়িয়ে দিয়েছে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ২০ বছর ধরে আইসিসির বোলিং অ্যাকশন বিষয়ক ব্যাপারাদি দেখভাল করা প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার (ইউডব্লিউএ)। ওই প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আইসিসি বর্তমানে যে পদ্ধতিতে এবং অস্বচ্ছতার সঙ্গে বিভিন্ন পরীক্ষাগারে বোলিং এ্যাকশন পরীক্ষা করছে তা হাস্যকর, সন্দেহজনক ও ত্রুটিপূর্ণ! এ নিয়ে ইউডব্লিউএ সঙ্গে বেশ কিছুদিন আইসিসির টানাপোড়েন চলে। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে ২০১৫ সালের মার্চে। ইউডব্লিউএ আইসিসির পাশ থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এরপর আইসিসি বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষার দায়িত্ব দেয় কার্ডিফ, ব্রিসবেন ও চেন্নাইয়ের তিন ল্যাবরেটরিকে। এই চেন্নাইয়ে গেছেন আরাফাত সানি এবং পরে যাবেন তাকসিন। ইউডব্লিউএ দাবি এই তিনটি পরীক্ষাগারে তাদের পুরানো পদ্ধতি নিয়ে যেভাবে বোলিং পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাতে সঠিক ফলাফল পাওয়া অসম্ভব।
যখন টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ ভাল করছে; তখন আরাফাত সানি ও তাকসিনের বোলিং নিয়ে সন্দেহ করে বিতর্কের জন্ম দেয়া হলো। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ঠেকানোর জন্যই কি এ ষড়যন্ত্র! কারণ, মাঝে মাঝেই বিশ্বের অনেক দেশের নামকরা বোলারের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ অ্যাকশনে’র খড়গ চাপিয়ে তাদের খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার ধ্বংস করা হলেও আইসিসির বিগ থ্রির সি-িকেট অষ্ট্রেলিয়া-ইংল্যা--ভারতের কোনো বোলারের বোলিং নিয়ে সন্দেহ করা হয়নি-হয়না। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে ভারতের বর্তমান দলেরও ২/৩ জন বোলারের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু আম্পায়াররা তাদের বোলিং নিয়ে সন্দেহ করছে না। ভারতের বোলাররা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন না। ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি বিস্ময়করভাবে তাদের ব্যাপারে নীরব! অথচ ক্রিকেট সম্ভাবনার বাংলাদেশের ক্রিকেটের ধারাবাহিক সাফল্যকে ঠেকিয়ে দেয়ার জন্য দুই বোলারের বোলিং নিয়ে বিতর্ক তুলে তাদের বোলিং পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। আসলেই কি আরাফাত সানি ও তাকসিনের বোলিং সন্দেহজনক! নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য এই চক্রান্ত? দুই বোলারের বোলিং নিয়ে সন্দেহ হলে আগে তাদের বোলিং এ্যাকশন পরীক্ষা করা হয়নি কেন? টি-২০ বিশ্বকাপের সময় কেন সেই অভিযোগ তোলা হলো? শ্রীনি আইসিসি ছাড়লেও তার পেতাত্মারা কি এখনো আইসিসি নিয়ন্ত্রণ করছে? ষড়যন্ত্র করে কি বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ঠেকানো যাবে? এক মোস্তাফিজের ভয়েই ভারতের ক্রিকেটাঙ্গন প্রকম্পিত। ভারতীয় ষড়যন্ত্র কি বাংলাদেশের টাইগারদের সাফল্য ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না এমন প্রত্যাশা করছে দেশের কোটি ক্রিকেট ভক্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।