পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শামসুল ইসলাম : মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নেয়ার চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল শনিবার এ ঘোষণা দেয়ার পর দেশটিতে অবস্থানরত অবৈধ কর্মীদের চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি আহমাদ জাহিদ হামিদী গতকাল কুয়ালালামপুরস্থ দলীয় কার্যালয়ে এ ঘোষণা দেন। কুয়ালালামপুর থেকে একাধিক সূত্র এতথ্য জানিয়েছে। দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মন্ত্রিসভা নতুন বিদেশি কর্মী নেয়ার চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে দেশের যেসব প্রতিষ্ঠানে অনুমতিপত্র ছাড়া বিদেশি কর্মী কাজ করছেন অথবা যাদের অনুমতিপত্রের মেয়াদ পার হয়ে গেছে তাঁদের বৈধতার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানকে আবেদন জানাতে হবে। আহমেদ জাহিদ আরও বলেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে চাকরিদাতাদের বিদেশি কর্মীদের বৈধতা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এর আগে এই সময়সীমা ছিল ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে তা বাড়ানো হয়। কর্মীদের বৈধ করার ব্যাপারে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক না হলে শুধু জরিমানা দিয়ে পার পাওয়া যাবে না বলে সতর্কতা জারি করেছেন আহমেদ জাহিদ। প্রয়োজনে সরকার আরও কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।
জি টু জি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের উদ্যোগ দারুণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় বহু কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় অনলাইনের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের জন্য উভয় দেশের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু একদিন পরেই পূর্ব মালয়েশিয়ার কোতাকিনাবালু মোয়ারা তুয়াং আর্মি ক্যাম্পে সেনা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো শ্রী ড. আহমদ জাহিদ হামিদী বাংলাদেশসহ অন্যান্য সোর্স কান্ট্রি থেকে অভিবাসী কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন। উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’র অভিবাসী কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাস্থ মালয়েশিয়ান হাইকমিশন জি টু জি’র কর্মীদের ভিসা দেয়াও আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। বিএমইটি’র মালয়েশিয়া সেল-এর একজন কর্মকর্তা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বায়রার সভাপতি মোঃ আবুল বাসার গতকাল ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে এ প্রসঙ্গে বলেন, যদি মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তা’ হলে এটা দুঃখজনক। এ ব্যাপারে সরকারকে ভেবে চিন্তে উদ্যোগ নিতে হবে বলেও বায়রা সভাপতি উল্লেখ করেন। বায়রা সভাপতি বলেন, বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের চুক্তি বাতিলের খবর প্রচার করছে। তবে মালয়েশিয়া সরকার কর্মী নিয়োগের চুক্তি বাতিল সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারকে লিখিতভাবে এখনো কিছু জানায়নি।
মালয়েশিয়া সরকার অভিবাসী কর্মী নিয়োগের চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করায় বাংলাদেশী কর্মী ও রিক্রুটিং এজেন্সি’র মালিকদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। দেশটিতে অবৈধ অভিবাসী কর্মীদের বৈধতা দেয়ার পাশাপাশি অবৈধদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। দেশটিতে এখন অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড়ও চলছে। এতে মালয়েশিয়ায় কর্মরত অবৈধ প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের মার্চ মাস থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। সরকারী সর্বোচ্চ কূটনৈতিক উদ্যোগের পর ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে মালয়েশিয়ায় সরকারী ব্যবস্থাপনায় শুধুমাত্র প্লানটেশন খাতে জিটুজি প্রক্রিয়ায় কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। জিটুজি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের লক্ষ্যে ঐ সময়ে তৎকালিন সরকার ডাকঢোল পিটিয়ে সারাদেশে থেকে প্রথম দফায় ১৪ লাখ কর্মীর নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে মালয়েশিয়ায় জিটুজি’র মাধ্যমে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী যাওয়া শুরু হয়। বিগত কয়েক বছরে জিটুজি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া থেকে ১১ হাজার ৪শ’ ৬৯ জন কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র এসেছে। সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারী পর্যন্ত স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে জিটুজি প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় ৯ হাজার ৮শ’ ৯২ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারী মাসে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনের মালয়েশিয়া সেল সারওয়ার্ক অঞ্চলের প্লানটেশন খাতে কর্মী নিয়োগের জন্য ৫ হাজার কর্মীর চাহিদাপত্র মালয়েশিয়ায় প্রেরণ করেছে। এ ব্যাপারে মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিপূর্বে মালয়েশিয়া সফরকালে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে প্রায় ১২ হাজার কর্মী নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। মালয়েশিয়ার সারওয়ার্ক অঞ্চলের প্লানটেশন খাতে এসব কর্মী প্রেরণের কথা ছিল। জিটুজি’র আওতায় গত ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিকে সারওয়ার্ক অঞ্চলে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার কর্মী যাওয়া শুরু হবে বলে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। আজও ১২ হাজার কর্মী নিয়োগের চুক্তিও আলোর মুখ দেখেনি।
বিএমইটি’র সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে বেসরকারী উদ্যোগে ২ লাখ ৭৩ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। ২০০৮ সালে ১ লাখ ৩১ হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়েছিল। ঐ সময়ে অনেক কর্মী কাজ না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় অনাহারে-অনিদ্রায় দিন কাটিয়েছিল। তবে পরবর্তীতে তাদের অনেকেই দেশে ফিরে এজেন্সি’র বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেছিল। আবার অনেকেই সেদেশে কর্মসংস্থান লাভ করে এখন ভালো অবস্থানে রয়েছে। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ ভেস্ট মাকের্টিং এসডিএনবি এইচডি-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর রুহুল আমিন গতকাল বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় প্রচুর বাংলাদেশী কর্মীর চাহিদা রয়েছে। মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশী দক্ষকর্মীদের দেশটিতে বৈধতা দেয়া এবং মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার দ্রুত উন্মুক্ত করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কারাগারে আটক অবৈধ বাংলাদেশীদের আইনী সহায়তা দিয়ে দেশটিতে বৈধতা লাভের সুযোগ সৃষ্টির জন্য উদ্যোগ নেয়ার জোর দাবী জানিয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।