Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নায়ক রাজের দাফন আজ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শহীদ মিনারে সর্ব সাধারণের শেষ শ্রদ্ধা : বাবার ওপর আপনারা কোনো অভিমান রাখবেন না -বাপ্পারাজ

এফডিসিতে গতকাল সকালে জানাজা শেষে নায়ক রাজের লাশ নেয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে রাজনৈতিক, সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ সর্বস্তরের জনগণ শেষবারের মতো নায়করাজ রাজ্জাককে শ্রদ্ধা জানান। শহীদ মিনার থেকে গুলশানের আজাদ মসজিদে নেওয়া হয় তার লাশ। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আজ দাফন করা হবে নায়ক রাজকে।
রাজ্জাকের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, নায়করাজকে আজ দাফন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রাজ্জাকের মেজ ছেলে বাপ্পি নিশ্চিত করেছে আজ ভোরে সে ঢাকায় পৌঁছাবে। সব কিছু ঠিক থাকালে বুধবার সকাল ১০টায় বনানী বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে রাজ্জাকে। গুলশান আজাদ মসজিদে নায়ক রাজের জানাজা পর লাশ হিমঘরে রাখা হয়েছে।
নায়ক রাজের জানাযায় আসা শিল্পী ও কলাকুশলীদের উদ্দেশে নায়করাজের বড় ছেলে বাপ্পারাজ বলেন, আমার বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন। বাবার ওপর আপনারা কোনো অভিমান রাখবেন না। তিনি জীবনের পুরোটা সময় আপনাদের সঙ্গে কাজ করেছেন, এর মধ্যে যদি কারো সঙ্গে কোনো লেনদেন থেকে থাকে, তাহলে আমার বা আমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমরা তা অবশ্যই পরিশোধ করে দেবো।
মরহুম নায়কের লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে আসেন তার ছেলে চিত্রনায়ক বাপ্পারাজ ও সম্রাট। রাজ্জাকের লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িটি যখন এফডিসিতে পৌঁছে, তখন বেলা ১১টা। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন চলচ্চিত্র জগতের অনেকেই। নায়ক রাজের কফিনে শ্রদ্ধা জানায় তথ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার, সিনেম্যাক্স মুভি পরিবার, বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক লীগ, বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাব, চলচ্চিত্র গ্রাহক সংস্থা, চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, সিনে স্থিরচিত্র গ্রাহক সমিতি, জাসাসসহ বিভিন্ন সংগঠন।
রাজ্জাককে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম, চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও গীতিকার মাজহারুল আনোয়ার, অভিনেতা আলমগীর, চিত্রনায়িকা ববিতা, শাবনূর, নায়ক শাকিব খান, অভিনেতা সুব্রত, আলীরাজ, রুবেল, ফেরদৌস, আহম্মদ শরিফ, ওমর সানি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি অভিনেতা মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক নায়ক জায়েদ খানসহ আরও অনেকে।
অভিনেত্রী ববিতা বলেন, আমার জীবনের সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি রাজ্জাকের সঙ্গে। রাজ্জাকের পর্দা উপস্থিতি, অভিব্যক্তি এখনকার নায়করা অনুসরণ করেন। রাজ্জাকের একসময়ের আরেক পর্দাসঙ্গী অভিনেত্রী সুচন্দা বলেন, রাজ্জাক নায়কের মতো রূপালী পর্দায় এসেছিলেন। তার চলে যাওয়া নায়কের মতোই হল। তিনি কখনও কারও কাছে কিছু চেয়ে ছোট হননি। রিয়েল লাইফে তিনি মহানায়ক ছিলেন। নায়ক আলমগীর বলেন, আমার বলার কিছুই নাই। পিতা হারালে সস্তানের যেমন লাগে আমারও তেমন লাগছে।
শাকিব খান বলেন, এখনকার প্রজন্ম এবং আগামী যত প্রজন্ম আসবে তাদের কাছে নায়করাজ রাজ্জাক প্রেরণা হয়ে থাকবেন। আমরা একজন আইডল হারালাম। শাবনূর বলেন, বিশ্বাস হচ্ছে না রাজ্জাক আঙ্কেল আর নেই। পর্দা থেকে পেছনের নায়ক রাজ্জাক আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
এফডিসি থেকে বেলা সোয়া ১২টার দিকে রাজ্জাকের লাশ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে সেখানে সর্বস্তরের মানুষ নায়করাজের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায়। প্রথমে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নায়করাজের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ফুল দেন মন্ত্রী আসাদুজ্জাসান নূর। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ফুল দেন তার দল জাসদের পক্ষ থেকে। রাজ্জাকের কফিনে শ্রদ্ধা জানানোর পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলা চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন তিনি। তার চলে যাওয়ায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। এ শূন্যস্থান কখনও পূরণ হওয়ার নয়। তিনি ঢাকাই চলচ্চিত্রের উত্তম কুমার।
বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ার, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক সহ আরো অনেকে।
অভিনেত্রী রোজিনা বলেন, আমার জীবনের প্রথম ছবি ‘আয়না’তে নায়ক হিসেবে পেয়েছিলাম রাজ্জাক ভাইকে। তার সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে তখন আমার হাত-পা কাঁপছিল। সেটা বুঝে তিনি আমাকে সাহস দিয়ে বললেন, তোমার অভিনয় ভালো হচ্ছে। অভিনয়ের অনেক কিছু শিখেছি তার কাছ থেকে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তিনি নিজেই ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান।
বেশ কিছুদিন ধরে নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন ৭৫ বছর বয়সী রাজ্জাক। সোমবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে তাকে নেওয়া হয় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে। চিকিৎসকরা সন্ধ্যায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পাঁচশর বেশি চলচ্চিত্রের অভিনেতা আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশের মানুষের কাছে খ্যাত ছিলেন নায়করাজ নামেই। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে সাদা কালো যুগ থেকে শুরু করে রঙিন যুগ পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে গেছেন তিনি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে ২৫ বছর প্রায় একাই টেনে নিয়ে গেছেন এই চিত্রনায়ক। শেষ দিকে অন্য চরিত্রে অভিনয় করলেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গন তাকে চিরসবুজ নায়ক হিসেবেই দেখে।



 

Show all comments
  • Md Nuruzzaman ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১:৩৩ পিএম says : 0
    বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের খ্যাতিমান অভিনেতা নায়ক রাজ রাজ্জাকের ইন্তেকালে (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন) গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত। নায়ক রাজ রাজ্জাকের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং তাঁর রূহের মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহপাক তাঁকে জান্নাতবাসি করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • নীলাদ্রী নীল ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১:৩৪ পিএম says : 0
    এই মানুষটা মারা গেছে! বিশ্বাস করতে খুব কস্ট হয়!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নায়ক রাজ্জাক

২৩ আগস্ট, ২০১৭
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ