Inqilab Logo

বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভোটের আগেই ভোট : মনোনয়ন দৌড়ে তৃণমূল আ’লীগে বাণিজ্য

প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : এ যেন ভোটের আগেই ভোট। ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের দৌড়ে একেকটি এলাকায় আছেন অনেকেই। এ নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা শুধুই জোরালো প্রতিযোগিতায় সীমিত নেই। বরং তৃণমূল আওয়ামী লীগে নজিরবিহীন মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রতিটি ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ মুহূর্তে চলছে কাড়ি কাড়ি টাকার খেলা। আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী তথা মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ‘টপ টু বটম’ পর্যায়ে প্রতিনিয়তই লাখ লাখ টাকা উড়াচ্ছেন। বিষয়টি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে অনেকটা ‘পুঁজি’ বিনিয়োগের মতোই। যা ওপেন সিক্রেট। ‘নৌকা’ প্রতীকে মনোনয়ন পাওয়া মানেই ভোটে জিতে যাওয়াÑ এ ধরনের মনোভাব নিয়ে তারা মাঠে নেমেছেন। মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে বাজির লড়াইয়ে হারজিতের মতোই ঢালছেন অকাতরে টাকা। ঘাটে ঘাটে কাড়ি কাড়ি টাকা বিলিয়েও মনোনয়ন না পেয়ে ‘ফতুর’ অবস্থা হওয়ার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউপি নির্বাচনে তৃণমূল থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নকে ঘিরে বৃহত্তর চট্টগ্রামের সর্বত্রই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বাণিজ্য তুঙ্গে উঠেছে। দেশে এবারই প্রথম সরাসরি দলীয় প্রতীক নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচন হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড এ ক্ষেত্রে যে নীতি অনুসরণ করছে তা হলো, তৃণমূল থেকেই দলীয় প্রার্থীর নাম মনোনয়ন চূড়ান্ত করে কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। এরজন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা গোপন ভোট দিয়ে একক ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। মনোনয়নের জন্য ভোট দিচ্ছেন এলাকাওয়ারি কাউন্সিলররা। প্রত্যেক ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা বা উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের তৃণমূল নেতারা নিজ নিজ এলাকায় আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রদান করছেন। তারা ভোট দিচ্ছেন যার যার পছন্দমাফিক প্রার্থীকে। তবে ‘পছন্দে’র সাথে আর্থিক ও বৈষয়িক স্বার্থের বিষয়টিই এখানে বেশিমাত্রায় প্রাধান্য পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী বা সম্ভাব্য প্রার্থীরা সাধারণ ভোটার-জনসাধারণের কাছে নয়; এখন তারা ছুটে চলেছেন দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত তাদের দুয়ারে দুয়ারে। কেননা তাদের প্রতিটি ভোট ‘মহামূল্যবান’। যে কোনভাবেই তাদেরকে ‘ম্যানেজ’ করতে হচ্ছে। দলীয় মনোনয়নের ভোটটি নিজের অনুকূলে আনতে মরিয়া হয়ে তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের হাতে আড়ালে-আবডালে তুলে দিচ্ছেন নগদ টাকার বান্ডিল এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা বা উপজেলা এবং জেলা পর্যায় পর্যন্ত তৃণমূলের অনেকেই মনোনয়ন বাণিজ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী একাধিক মনোনয়ন প্রার্থীর কাছ থেকে একেকজন অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তুণমূলের কে কাকে গোপন ভোটটি দিয়েছেন তা নিয়েও সন্দেহ-অবিশ্বাস জোরদার হয়ে উঠেছে। এমনকি ইউপি চেয়ারম্যান মনোনয়নে সরাসরি ভোটার না হলেও এলাকায় ‘প্রভাব’ রয়েছে এ ধরনের অনেক তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও সুযোগ বুঝে বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। আর নির্বাচনী লড়াইয়ে যারা নামছেন তাদের কেউ কেউ বলছেন, এভাবে ভোটের আগেই প্রচুর টাকা-কড়ি তাদের খরচ হয়ে গেছে। অতীতে কখনও এমনটি ঘটেনি। তৃণমূলের মনোনয়ন বাণিজ্য সম্পর্কে অনেকগুলো অভিযোগ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রে পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। কিন্তু এ নিয়ে দলীয় হাইকমান্ডের এ যাবত কার্যত নির্বিকার ভূমিকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
এ অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, একক দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় ‘ভোটের আগেই আরেক ভোটে’র জন্য টাকা উড়ছে গ্রাম-গ্রামান্তরে। শুধুই নগদ টাকার লেনদেনই নয়; টাকার বিনিময়ে ভোটটি নিজের মনোনয়নের পক্ষে নিশ্চিত করার জন্য অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী তৃণমূলের দলীয় কাউন্সিলরকে একান্তে ডেকে নিয়ে ওয়াদা কিংবা শপথ করানো, অন্যজনকে রেখে ‘সাক্ষী’ মানা ইত্যাদি ঘটনাও পর্দার আড়ালে ঘটছে। আবার একেকটি এলাকায় মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে দলীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মাঝে ঘরে ঘরে অশান্তি, সন্দেহ-সংশয়, অবিশ্বাস দানা বেঁধে উঠেছে।
এদিকে সারাদেশের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামেও চলছে আওয়ামী লীগের একক ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া। চট্টগ্রামে এবার মোট ১৮০টি ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার পর তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ দফা পর্যন্ত ইউপি নির্বাচনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলায় জোরদার প্রস্তুতি-প্রক্রিয়া চলছে। দ্বিতীয় দফায় আগামী ৩১ মার্চ সীতাকু-, মিরসরাই ও সন্দ্বীপ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ দফায় উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের মোট ১৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গোপন প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। আগামী ২৩ এপ্রিল তৃতীয় দফায় ফটিকছড়ি উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৪র্থ দফায় হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলায় ২৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ৪ জুন চট্টগ্রামে ১০৫টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভোটের আগেই ভোট : মনোনয়ন দৌড়ে তৃণমূল আ’লীগে বাণিজ্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ