পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
১৩ জন ট্রাইব্যুনালে সাফাই সাক্ষী দিয়েছেন। দুই মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আজ ও কাল সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য রয়েছে : বর্তমানে ঢাকার ১নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে মামলা দুটি বিচারাধীন : সাবেক প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান দেখে যেতে পারেননি স্ত্রী হাত্যাকারীদের বিচার
সাবেক প্রেসিডন্টে জিল্লুর রহমান দেখে যেতে পারেনি স্ত্রী আইভি রহমান হত্যা মামলার রায়। যারা তাঁর স্ত্রীসহ ২৪ জনকে হত্যা করেছিল সেইসব ঘাতকদের শাস্তি কি হবে তা দেখার অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন তার পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীরা। কবে নাগাদ বিচারকার্য শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছেন না। ১৩ বছরেও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার বিচার শেষ না হওয়াতে নিহতদের পরিবারেও হতাশা দেখা দিয়েছে। রাজধানীর মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা দুটি দায়ের করা হয়। বিচারকাজ কবে শেষ হবে তাও জানে না রাষ্ট্রপক্ষ। মামলা দুটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন সাফাই সাক্ষী চলছে। ইতোমধ্যে ১৩ জন ট্রাইব্যুনালে সাফাই সাক্ষী দিয়েছেন। আর সাত-আটজনের সাফাই সাক্ষী নেয়া হবে। সাফাই সাক্ষীর পর মামলার যুক্তি উপস্থাপন হবে। এরপর মামলা দুটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য হবে। মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। ২২ ও ২৩ আগস্ট সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য রয়েছে। বর্তমানে ঢাকার ১নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে মামলা দুটি বিচারাধীন।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছেন, বিচারপ্রার্থীরা মামলার রায়ের জন্য আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাদের জন্য মামলা দুটির বিচার কার্যক্রম খুব দ্রুত শেষ করা উচিত। আমরা আশাবাদী খুব দ্রæতই মামলা দুটির বিচার শেষ হবে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার তদন্ত শেষ করতে সময় লেগেছে অনেক দিন। অপরদিকে মামলার সাক্ষীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করতে কিছুটা সময় লাগছে। মামলার বিচারপ্রার্থীরা রায়ের আশায় আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন। তাদের জন্য মামলা দুটির বিচার দ্রুত শেষ করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে মামলা দুটির বিচার কাজ শেষ করতে পারব। তবে কবে শেষ হবে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না।
সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, মামলা দুটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন সাফাই সাক্ষী চলছে। ইতোমধ্যে ১৩ জন ট্রাইব্যুনালে সাফাই সাক্ষী দিয়েছেন। আর সাত-আটজনের সাফাই সাক্ষী নেয়া হবে। সাফাই সাক্ষীর পর মামলার যুক্তি উপস্থাপন হবে। এরপর মামলা দুটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য হবে।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবা বলেন, বিএনপিকে সম্পূর্ণভাবে হয়রানি করার জন্য মামলা দুটি করা হয়েছে। মামলা স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিচ্ছে না সরকার। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সাফাই সাক্ষী দেয়া হয়েছে ১৩ জনের। ২২ ও ২৩ আগস্ট সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য রয়েছে। বর্তমানে ঢাকার ১নং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে মামলা দুটি বিচারাধীন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী।
ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে থানা পুলিশ। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরবর্তীতে মামলাটি যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি)। ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডির জ্যেষ্ঠ এএসপি ফজলুল কবির মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির পুলিশ সুপার আব্দুল কাহ্হার আখন্দ। তিনি ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনের নাম যুক্ত করে মোট ৫২ জনের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেন।
মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবি সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের নাম বাদ দেয়ায় এখন আসামির সংখ্যা ৪৯। এর মধ্যে তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। এছাড়া জামিনে আট এবং কারাগারে রয়েছেন ২৩ জন।
১৩ বছর আগে ২০০৪ সালের এই দিনেই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নৃশংসতম বর্বরোচিত হামলা চালায় জঙ্গিরা। জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজিবি) আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালায়। ওই দিন সৌভাগ্যক্রমে শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন ২৪ জন। তাদের মধ্যে ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান। আহত হন শতাধিক। দীর্ঘ সময় ধরে বিচারের প্রতীক্ষায় হামলায় আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা।
ঘটনার শুরু ২১ আগস্ট বিকেল ৫টা ২২ মিনিট। বক্তব্য শেষ করে শেখ হাসিনা যখন সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রার উদ্বোধন ঘোষণা করবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে গ্রেনেড বিস্ফোরণের প্রচন্ড শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও এর আশপাশের এলাকা। চারদিক থেকে গ্রেনেড এসে পড়তে থাকে সভাস্থলে। মুহূর্তের মধ্যে শান্তি সমাবেশ রক্ত স্রোতে ভেসে যায়। সমাবেশস্থল পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে। শত শত মানুষের চিৎকার, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা ছিন্নভিন্ন দেহ, রক্ত আর বারুদের পোড়া গন্ধে বীভৎস এক নারকীয় পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা সেই গ্রেনেড হামলা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রিয় নেতাকে বাঁচাতে মরিয়া নেতাকর্মীরা দ্রুত তাকে গাড়িতে তুলে দেন। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তার পিছু ছাড়েনি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে বের হওয়ার পথে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতেও ঘাতকরা অবিরাম গুলিবর্ষণ করে।
অন্যদিকে গ্রেনেড হামলায় ২১ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আইভি রহমান সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে মৃত্যুবরণ করেন।
নিহতরা হলেন- মোস্তাক আহমেদ সেন্টু, ল্যান্স কর্পোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, রফিকুল ইসলাম আদা চাচা, সুফিয়া বেগম, হাসিনা মমতাজ রীনা, লিটন মুন্সী ওরফে লিটু, রতন সিকদার, মো. হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, মামুন মৃধা, বেলাল হোসেন, আমিনুল ইসলাম, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারী, আতিক সরকার, নাসিরউদ্দিন সরদার, রেজিয়া বেগম, আবুল কাসেম, জাহেদ আলী, মমিন আলী, শামসুদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, ইছহাক মিয়া এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো দুজন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মোট ৪৯১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়েছে। বাকি সাক্ষী কাটছাঁট করা হয়েছে। সরকারি কৌঁসুলিরা মনে করছেন, যাদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে অপরাধের সব তথ্য উঠে এসেছে। তাই আর সাক্ষ্য নেওয়ার প্রয়োজন নেই। সর্বশেষ এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এখন চলছে আসামিপক্ষের সাফাই সাক্ষী। এর পর উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের তারিখ ধার্য হবে।
২০০৫ সালে নোয়াখালীর সেনবাগের বাসিন্দা জজ মিয়া নামে এক নিরীহ যুবককে আটক করে ১৭ দিন হেফাজতে রেখে সাজানো জবানবন্দি আদায় করা হয়। জজ মিয়াকে আটকের পর তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য মাসে মাসে টাকা দিতেন সিআইডির কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে তাকে রাজসাক্ষী করতে সিআইডির অপচেষ্টা ফাঁস করে দেন তার পরিবারের সদস্যরা। বাবরের নির্দেশনায় এ হামলায় জজ মিয়াকে সামনে এনে তদন্তের নামে ‹আষাঢ়ে গল্প› প্রকাশ করতে থাকেন সিআইডির তৎকালীন এএসপি আবদুর রশীদ, বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন ও মুন্সী আতিকুর রহমান। সেই জজ মিয়া এখন প্রাইভেটকার চালক।
২০০৭ সালে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে এ মামলার পুনঃতদন্ত শুরু হলে বেরিয়ে আসতে থাকে অনেক অজানা তথ্য। ২০০৮ সালের ১১ জুন অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজিবি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ওই সময় জানা যায়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করতেই হামলার ছক করা হয়েছিল। আর পাকিস্তান থেকে এসেছিল হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের আমলে হামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়। এতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমান, জোট সরকারের মন্ত্রী ও জামায়াত নেতা যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দেয় সিআইডি। এ নিয়ে মামলায় মোট আসামির সংখ্যা হয় ৫২। আসামিদের মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদন্ড হয় অন্য মামলায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) এআইজি মাহবুবুর রহমান বলেন, পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তাজউদ্দিনের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।