পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাসপোর্ট করতে গিয়ে সেবাগ্রহীতারা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হন পুলিশি ছাড়পত্রের (ভেরিফিকেশন) ক্ষেত্রে। পুলিশি তদন্তে সেবাগ্রহীতাদের ৭৬ দশমিক ২ শতাংশ অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন এবং ৭০ দশমিক ৩ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে পুলিশকে ঘুষ বা নিয়মবহিভর্‚ত অর্থ দিতে হয়েছে। পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পুলিশি ছাড়পত্র এবং সত্যায়ন ও প্রত্যয়ন বিধান বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি’র কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন : চ্যালেঞ্জ ও করণীয় শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত এই গবেষণা কার্যক্রম চালায়। প্রতিটি বিভাগে জেলা পর্যায়ে মোট এক হাজার ৪৫৩ জন জরিপে অংশ নেন। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই জরিপে অংশ নেয়া সেবাগ্রহীতাদের ৫৫ দশমিক ২ শতাংশ অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। আর পাসপোর্ট অফিসে ঘুষ বা নিময়বহির্ভূত অর্থ দেয়ার পরিমাণ দুই হাজার ২২১ টাকা।
জরিপে দেখা গেছে, পাসপোর্ট অফিস থেকে দেয়া সিøপে উল্লেখ করা নির্ধারিত সময়ে অনেকেই পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। ২৭ শতাংশ বলেছে, তাদের ১২ দিন বেশি সময় লেগেছ। আর সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ পাসপোর্ট করার সময় দালাল বা অন্যান্যের সাহায্য নিয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ দালালের সহযোগিতা নিয়েছে। এই সহযোগিতা নেয়ার হার সবচেয়ে বেশি সিলেটে। এই সংখ্যা ৬০ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম রাজশাহীতে ২০ শতাংশ। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালের তুলনায় দুর্নীতি কিছুটা কমেছে। কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে পুলিশি ছাড়পত্র এবং সত্যায়ন ও প্রত্যয়ন বিধান বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।
দেশব্যাপী মোট এক হাজার ৪৫৩ জন সেবাগ্রহীতার ওপর পরিচালিত একটি প্রতিনিধিত্বশীল জরিপ ছাড়াও, মুখ্য তথ্যদাতার সাক্ষাৎকার, নিবিড় সাক্ষাৎকার, দলগত আলোচনা, কেস স্টাডি ও পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিসহ পাসপোর্ট সেবা বিষয়ক প্রবন্ধ, গবেষণা প্রতিবেদন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ ও সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে মে ২০১৭ সময়ের মধ্যে এই গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালিত হয়। সেবাগ্রহীতা জরিপটি ৮ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে সম্পাদিত হয়। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী পাসপোর্ট সেবাকে জনমুখী ও সহজীকরণে সাম্প্রতিককালে (২০১৫-১৬) অধিদফতর বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : পাসপোর্ট অফিসগুলোর একাংশের হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে সেবা প্রদান, সেবাগ্রহীতাদের অভিযোগ নিরসনে ও সেবার মান বৃদ্ধিকরণে আঞ্চলিক অফিসসমূহে গণশুনানির ব্যবস্থা গ্রহণ, অভিযোগ বাক্স স্থাপন, কয়েকটি পাসপোর্ট অফিসে সেবাগ্রহীতাদের সুপারিশ ও সন্তুষ্টি জানতে ক্লায়েন্ট স্যাটিসফেকশন রেজিস্টার প্রবর্তন, পাসপোর্ট বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ উদযাপন, উন্নত সেবা প্রদানে উৎসাহিত করার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারী পুরস্কারের ব্যবস্থা, কয়েকটি অফিসে স্বতন্ত্র ফেসবুক আইডি খোলা এবং ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ ও তা নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া চালুকরণ উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, সিলেট কর্তৃক গৃহীত কিছু উদ্যোগ সকল পাসপোর্ট অফিসের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাসপোর্ট সেবায় বিদ্যমান অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতি চিহ্নিত করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় যে, জরিপের অন্তর্ভুক্ত সেবাগ্রহীতাদের ৫৫.২ শতাংশ পাসপোর্ট সেবায় অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে (অনিয়ম ও দুর্নীতিসমূহ পাসপোর্ট সেবার যে সকল স্তরে সংগঠিত হয় তার মধ্যে রয়েছে- আবেদনপত্র উত্তোলন, আবেদনপত্র জমাদান ও প্রি-এনরোলমেন্ট, বায়ো-এনরোলমেন্ট, পাসপোর্ট বিতরণ এবং দালালের সাথে চুক্তি)। পাসপোর্ট অফিসের সেবায় ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ দেয়ার গড় পরিমাণ দুই হাজার ২২১ টাকা। নতুন পাসপোর্ট আবেদনে সেবাগ্রহীতাদের ৭৬.২ শতাংশ পুলিশি তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার এবং ৭৫.৩ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভ‚ত অর্থ দিতে হয়েছে। এ ছাড়া, ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ হিসেবে গড়ে ৭৯৭ টাকা দিতে হয়েছে। পুলিশ প্রতিবেদন প্রণয়নে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) কর্তৃক আবেদনপত্রে অযথা ত্রুটি খুঁজে বের করার চেষ্টা, জঙ্গি কার্যক্রম বা অন্য রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততার ভয় দেখানো, বাড়িতে না এসে চায়ের দোকান বা থানায় ডেকে পাঠানো, নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ বা ঘুষ দাবি করা এবং ক্ষেত্রবিশেষে তা বিকাশে পাঠাতে বলার মাধ্যমে আবেদনকারীদের হয়রানি করার বিভিন্ন অভিযোগ উঠে এসেছে গবেষণা প্রতিবেদনে। এ ছাড়া, পাসপোর্ট বিতরণে অফিস নির্ধারিত সময়ের পর গড়ে ১২ দিন, সর্বোচ্চ ৪৪.৮ দিন এবং সর্বনিম্ন ৪.৪ দিন বিলম্ব হয়।
গবেষণা অনুযায়ী জরিপের আওতাভুক্ত প্রায় সকল পাসপোর্ট অফিসেই (অভ্যন্তরে ও বাইরে) দালালের উপস্থিতি লক্ষণীয়। দালালদের একাংশ এসবি পুলিশ এবং পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। দালালদের একাংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় তাদের দৌরাত্ম্য বজায় রাখে। আবেদনকারীদের ৪১.৭ শতাংশ দালাল বা অন্যের সহযোগিতা নিয়েছেন; তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ দালালের সহযোগিতা নিয়েছেন। দীর্ঘ লাইন, বারবার আসা ইত্যাদি এড়িয়ে চলা, নিয়ম-কানুন সম্পর্কে না জানা; দালালের সহযোগিতা ছাড়া আবেদনপত্র জমা দিলে কর্তৃপক্ষের জমা না নেয়া, নির্ধারিত সময়ের পূর্বে পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য এবং সময়ের অভাব দালালের সহযোগিতা গ্রহণের কারণ হিসেবে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হেেয়ছে। দালালদের সহযোগিতা নিয়েছেন এমন সেবাগ্রহীতাদের ২১.৬ শতাংশ বলেছেন যে, দালালের সহযোগিতা না নিলে কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্র জমা নেয় না। এ ছাড়া, সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে যারা দালালের সহযোগিতা নিয়েছেন তাদের ৭৫.১ শতাংশ এবং যারা সহযোগিতা নেয়নি তাদের ৭২.২ শতাংশ সময়মতো পাসপোর্ট পেয়েছেন। যদিও দালালরা নির্ধারিত সময়ের আগে পাসপোর্ট করিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে অর্থ নেন, কিন্তু গবেষণায় সে ব্যাপারে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, পাসপোর্ট কার্যালয়গুলোর ভেতরের কিছু কর্মকর্তাদের প্রশ্রয় না থাকলে দালালদের দৌরাত্ম্য থাকত না। তিনি বলেন, পাসপোর্ট খাতে অনিয়মের সবচেয়ে বড় কারণ হলো সাধারণ মানুষের অভিগম্যতায় বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা। পুলিশ ভেরিফিকেশন ও আবেদন ফরম সত্যায়নের বিধানটি রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে বিশ^াসহীনতার একটি ঔপনিবেশিক সংস্কৃতিরই বহি:প্রকাশ বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি পাসপোর্ট সেবায় ইতিবাচক কিছু পরিবর্তন সাধিত হলেও সেবার মান এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। পাসপোর্ট অফিসগুলোতে দালালচক্র এখনো সক্রিয়। এ ছাড়া পুলিশ ভেরিফিকেশন এবং আবেদন ফরম সত্যায়ন করতে সেবাগ্রহীতারা হয়রানির শিকার হচ্ছে। কোনো প্রয়োজন না থাকা সত্তে¡ও পুলিশ ভেরিফিকেশন ও আবেদনত্র সত্যায়নের নিয়ম চালু রেখে সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে ড. জামান এ নিয়ম দু’টি বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
উপস্থাপিত সুপারিশ গুলো হচ্ছে- পাসপোর্টের আবেদনপত্র পূরণ আরো ব্যবহার-বান্ধব এবং ফি জমা দেয়ার ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অন্তর্ভুক্তি, আবেদনপত্র পূরণের নিয়মাবলি এবং সেবা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য নির্দেশিকা ও সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলোর উত্তর অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং বিনামূল্যে বিতরণ, বিদ্যমান পুলিশ প্রতিবেদন সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সাথে মাসিক ভিত্তিতে সমন্বয় সভা আয়োজন এবং পাসপোর্ট বিতরণে বিলম্ব এড়াতে নির্ধারিত তারিখের পূর্বে যৌক্তিক কারণসহ এসএমএসের মাধ্যমে অবহিতকরণ। এ ছাড়া, পাসপোর্ট অফিস ও এসবি পুলিশের যেসব অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজশে দালালচক্র তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা এবং দালালের সহযোগিতা নেয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারীদের অফিস সময়ে নির্ধারিত পোশাকের ব্যবস্থা এবং পরিচয়পত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়। পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিধান বাতিল এবং সকল নাগরিকের জন্য বায়োমেট্রিক ডাটা ব্যাংক তৈরির পাশাপাশি স্মার্ট কার্ড তৈরি ও বিতরণ, অপরাধী তথ্যভান্ডার আধুনিক ও যুগোপযোগী করে এই তথ্য ভান্ডারের সাথে পাসপোর্ট অফিস ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের সংযোগ স্থাপন, নাগরিক সংগঠনগুলোর সম্পৃক্ততায় সেবার মান যাচাই ও উন্নতিকল্পে নির্দিষ্ট সময় অন্তর মূল্যায়ন ব্যবস্থার প্রবর্তন; চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে পাসপোর্ট কার্যালয়গুলোতে জনবল, অবকাঠামো ও লজিস্টিকসের সরবরাহ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ, পাসপোর্ট আবেদনে প্রি-এনরোলমেন্ট ও বায়ো-এনরোলমেন্টের তথ্যাদি ব্যবহারে জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্ট কার্ড) সংরক্ষিত তথ্য ব্যবহার পর্যায়ক্রমে শুরু এবং পাসপোর্টের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে ১০ বছর করার সুপারিশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শাহনূর রহমান গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল, সাবেক চেয়ারপারসন এম হাফিজ উদ্দিন খান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।