Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গজলডোবা বাঁধ খুলে দিল ভারত

| প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো : বর্ষাকালে তিস্তা নদী থাকে টইটুম্বর। তখনই ভারতের উজান থেকে বানের পানি যখন-তখন ছেড়ে দিয়ে ভাটিতে দেশের উত্তর জনপদের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষকে ডুবিয়ে যেন মরতে হচ্ছে! আর বছরের বাদবাকি অধিকাংশ অন্যসময় পানিশূণ্য হাহাকার তিস্তাপাড়ের মানুষকে যেন শুকিয়ে মরতে হবে! এই বুঝি নিয়তি। ভারতের সাথে বহুল আলোচিত অমিমাংসিত সেই তিস্তার পানিবন্টন চুক্তির ভবিষ্যৎ হিমাগারে থাকায় তিস্তাপাড়ের মানুষের কৃষি-খামার, ফল-ফসল আবাদ করে জীবনধারণ এবং পরিবেশের সঙ্কট দিন দিন প্রকট হয়ে উঠেছে।
গতকাল (শনিবার) এবং এর আগের দু’তিন দিনে উজানে তিস্তা নদীতে গজলডোবা বাঁধের ৫৪টি গেইট বা কপাটের সবক’টি খুলে দেয় ভারত। এ কারণে হঠাৎ তিস্তায় পানি খুব দ্রত বেড়ে চলে। গতকাল সর্বশেষ তথ্যে রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদী বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সেই সঙ্গে উত্তরের বিরাট এলাকা এক মাস পর আবারো বন্যা কবলিত এবং তীব্র ভাঙনের মুখোমুখি হলো। এসব এলাকার বন্যার্ত হতদরিদ্র হাজারো মানুষের দুঃখ-কষ্ট সীমাহীন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, গত সপ্তাহজুড়ে অতিবৃষ্টিতে ভারতে পাহাড়ি ঢল ও বন্যা সামাল দিতে গিয়ে গজলডোবা তিস্তা বাঁধের সব গেইট খুলে দেয়া হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে গত ক’দিন ভারতের তিস্তা অববাহিকায় রেড ও অরেঞ্জ অ্যালার্ট জারি থাকে। এ অবস্থায় উজানে ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানিতে উত্তর জনপদের বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। পানির চাপ কমাতে নীলফামারীর ডিমলায় ডালিয়া পয়েন্টে পাউবো তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেইটের মধ্যে বেশিরভাগই খুলে দিয়েছে।
১৯৯৮ সালে তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশে গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করে। যা ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা ব্যারাজের ৬০ কিলোমিটার উজানভাগে অবস্থিত। ভারতে বন্যা হলেই সেই বাঁধের ৫৪টি গেট খুলে দেয়া হয়। তখনই এপাড়ে বন্যা হঠাৎ নেমে আসে। কিন্তু শুকনো মওসুমসহ বছরের অধিকাংশজুড়ে গজলডোবার উজানে পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তিস্তা-মহানন্দা খালের মাধ্যমে ২ হাজার ৯১৮ কিমি এলাকায় পানি মজুদ করা হয়। সেই পানি ভারতের উত্তরাঞ্চলে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, কুচবিহার ও মালদাহ জেলার ২ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের জন্য আটকে রাখা হয়। আর তখন বাংলাদেশের উত্তর জনপদে পানির অভাবে মরুময়তা বিরাজ করে।
গজলডোবা বাঁধের (ব্যারাজ) মাধ্যমে সেই ১৯৯৮ সাল থেকেই তিস্তা নদীর নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে চলে যায়। এই বাঁধের ৫৪টি গেইট বা ফটক আটকে রেখে তিস্তার মূল প্রাকৃতিক প্রবাহ থেকে পানি ভারতের বিভিন্ন জেলায় পুনর্বাহিত করা হচ্ছে। কার্যত তিস্তার পানি গজলডোবা বাঁধের মাধ্যমে বিহারের মেচী নদীর দিকে প্রবাহিত করা হচ্ছে। তাছাড়া ভারতে তিস্তার পানিকে আরও ভিন্ন খাতে পুনর্বাহিত করা ও ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গজলডোবা বাঁধ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ