পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পলাশ মাহমুদ : বন বিভাগের কর্মকর্তাতের যোগসাজসে শত শত কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি লুটপাট হয়ে যাচ্ছে। গাজীপুর জেলায় বন বিভাগের বহু জমি ইতিমধ্যে বেহাত হয়ে গেছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বখতিয়ার নূর সিদ্দিকের নেতৃত্বে সরকারি সম্পত্তি বেহাতের মাধ্যমে কয়েকশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে হারানো সম্পত্তি পুনরুদ্ধারে বন বিভাগের কোনো তৎপরতা নেই। অন্যদিকে বখতিয়ারের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের প্রভাবে নানা অভিযোগ নিয়েও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বখতিয়ার নূর সিদ্দিকী। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘শত শত কোটি না, আমি হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি অর্জন করেছি। দেখাতে পারলে আমি তাকে রেজিস্ট্রি করে দেব।’
জানা যায়, গাজীপুর সদরে বন বিভাগের ৫২ শতাংশ জমি এখন ‘একুয়্যাটিক রিসোর্স লিঃ’ নামের একটি কোম্পানির দখলে। যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। জমিটি গাজীপুর সদরের সালনা ইউনিয়নের দক্ষিণ সালনা মৌজার অন্তর্ভুক্ত। আর এস (রিভাইসড সার্ভে)তে কোম্পানিটি উক্ত জায়গা নিজেদের নামে রেকর্ড করে। যদিও আর এস-এর পূর্বের এস এ (স্টেট সার্ভে) ও সি এস (ক্যাডিস্ট্রাল সার্ভে)তে তা বন বিভাগের নামে রেকর্ডকৃত।
তা ছাড়া এ জমি ১৯২৭ সালের বন আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী বন বিভাগের সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যা ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত গেজেটে উল্লেখ রয়েছে। ১৯৮৪ সালে ঢাকা থেকে গাজীপুরকে আলাদা জেলা ঘোষণা করার পরও ১৯৮৫ সালেও উক্ত যায়গা বন বিভাগের নামে প্রকাশ হয়। সেসময় গাজীপুর ফরেস্ট সেটেলমেন্ট অফিসার ও ও ডেপুটি কমিশনার সাধারণ নোটিশ ঘোষণা করলেও কেউ আপত্তি করেনি।
এ বিষয়ে একুয়্যাটিক রিসোর্স লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাজী জিয়াউল হাসান বলেন, ‘১৯১২ সাল থেকে এই জমি মালিকানাভুক্ত। একুয়্যাটিক রিসোর্স লিঃ তাদের থেকে খরিদসূত্রে মালিক। তবে পূর্বের মালিকদের নামে সিএস এবং এসএ রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।’
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বখতিয়ার নূর সিদ্দিকীর যোগসাজসে কোম্পানিটি ওই যায়গা তাদের নামে রেকর্ড করায়। আরএস-এর সময় বন কর্মকর্তা বন বিভাগের পক্ষে এস এ এবং সি এস-এর কাগজপত্র তুলে না ধরায় একুয়্যাটিক এর নামে রেকর্ড হয়। তবে বন বিভাগের দাবি জায়গাটি এখনো তাদের দখলে আছে। যদিও উক্ত জায়গা কোম্পানিটি ইতিমধ্যে দখলে নিয়ে নিজস্ব পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। বিনা বাধায় জায়গা দখলের ক্ষেত্রে বখতিয়ার সহযোগিতা করে বলেও সূত্রটি জানায়।
একুয়্যাটিক রিসোর্স লিঃ জায়গা দখলে নিয়ে নিজেদের নামে নামজারী ও খাজনা প্রদানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। নামজারীর আবেদনে তারা সিএস এবং আরএস-এর কাগজপত্র দিতে পারেনি। ফলে বখতিয়ারের পরামর্শে কোম্পানি গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বন বিভাগের নামে আদালতে মামলা করে। বর্তমানে মামলাটি গাজীপুর আদালতে চলমান রয়েছে। এখন মামলায় পক্ষে রায় না পাওয়া পর্যন্ত বন বিভাগ উক্ত জায়গা দখলে নিতে পারবে না।
তবে একুয়্যাটিক সিসোর্স লিঃ এর নামে যে আর এস রেকর্ড হয়েছে তা বাতিল করার জন্য বন বিভাগের একটি আবেদনই যথেষ্ট বলে জানিয়েছে আগারগাঁওয়ের বন ভবনের এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘ নিয়ম অনুযায়ী সিএস এবং এসএ যার নামে থাকবে আরএস তার নামে হবে। ভুল করে অন্য নামে আরএস হলে তা সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদনের সাথে সিএস এবং এসএ প্রদর্শন করলেই আরএস বাতিল হয়ে মূল মালিকের নামে নতুন আরএস হবে।’
কিন্তু বন বিভাগের পক্ষ থেকে একুয়্যাটিকের কাছ থেকে উক্ত জমি উদ্ধারে কোনো তৎপরতা নেই। উল্টো বন বিভাগ নিজেই অভিযুক্তের আসনে দাঁড়িয়ে আদালতে একুয়্যাটিকের মামলার জবাব দিচ্ছে। অথচ আরএস সংশোধন করলেই বন বিভাগ জমি ফিরে পাবে। আর ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হিসেবে এটি করার দায়িত্ব বখতিয়ার নূর সিদ্দিকীর। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
এ বিষয়ে বখতিয়ার বলেন, ‘সব মুখস্ত থাকে না। কাগজপত্র না দেখে কিছু বলা যাবে না।’
৫২ শতাংশ জায়গা ছাড়াও বখতিয়ারের বিরুদ্ধে বন বিভাগের বহু সম্পত্তি হাতছাড়া করার অভিযোগ রয়েছে। এসব সম্পত্তি হাতছাড়া করে সে কয়েক শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে বলে দুদকে এক অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই অভিযোগে, বন বিভাগের বিভাগের কয়েক একর জমি কোম্পানির নামে বরাদ্দ দেয়া, বনের কোটি কোটি টাকার সম্পদ বিক্রি, বিভিন্ন কৌশলে সরকারি শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে বখতিয়ার নূর সিদ্দিকী ছাকড়াও সি এফ তপন কুমার বন কর্মকর্তা নাজমুল হাসান, তৌহিদুল আব্দুল জব্বার ও মহিউদ্দিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বন কর্মকর্তার সিন্ডিকেটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সিন্ডিকেটটি গাজীপুরের চন্দ্রা ও কোনাবাড়ী রেঞ্জের আওতাধীন অন্য বন কর্মকর্তাদের সহায়তায় বিভিন্ন ফ্যাক্টরিকে অঘোষিতভাবে জমি দলিল করে দিয়েছেন বলে উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৩ একর জমি অ্যাটলাস গ্রিন প্যাক ফ্যাক্টরি নামে একটি কোম্পানিকে দলিল করে দিয়েছেন।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। উপ-সহকারী পরিচালক মো. সাইদুজ্জামানকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি ইতিমধ্যে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। তদারককারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন দুদক উপ-পরিচালক মলয় কুমার সাহা।
দুদকের অনুসন্ধানে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বখতিয়ার নূর সিদ্দিকীর অঢেল অবৈধ সম্পদের খোঁজ পেয়েছে কর্মকর্তারা। তার স্ত্রীর নামে উত্তরায় ফø্যাট ও দামি গাড়ির তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া নামে-বেনামে গাজীপুরে অসংখ্য পরিমাণ জমি ক্রয় করেছেন ওই বন কর্মকর্তা।
দুদকে অভিযোগের বিষয়ে বখতিয়ার বলেন, ‘দুদকে একটা বিষয় আছে। তবে তারা কি বলে সেটা তাদের থেকে জানেন।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।