পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : নকশা ও অনুমোদন ছাড়াই ঢাকায় নির্মিত হচ্ছে শত শত বহুতলবিশিষ্ট ভবন। আইনের প্রয়োগ না থাকায় এই প্রবনতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে করে ড্যাপের আওতাভুক্ত এলাকাগুলোতে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে গড়ে উঠছে শত শত বহুতল ভবন। নিয়ম না মানায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো নিয়ে বিরোধেরও শেষ নেই। মামলা, পাল্টা মামলা থেকে শুরু করে মারামারি, হানাহানি লেগেই আছে। ভুক্তভোগিরা জানান, নকশা ও অনুমোদন ছাড়া বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়ে রাজউকে অভিযোগ করে কোনো ফল মেলে না। অনেক চেষ্টা তদবির করার পর রাজউক একটা নোটিশ পাঠিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করে ফেলে। এ বিষয়ে রাজউকের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে রাজউক এসব বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে না পারলেও ‘নিয়ম না মেনে করা’ সব ভবনকেই একদিন নিয়মের আওতায় আনা হবে। এদিকে, ঢাকার ১৭টি ইউনিয়ন নতুন করে সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়ার পরেও এসব ইউনিয়নে রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই ভবন নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে। দিন-তারিখ পরিবর্তন করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সমানে ভবনের নকশার অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। অথচ ২০১১ সালের পর থেকে কোনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবনের নকশা অনুমোদন করতে পারবেন না বলে রাজউকের এক প্রজ্ঞাপণে বলা হয়েছে। ড্যাপের আওতাভুক্ত এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে রাজউকের নকশা অনুমোদন বাধ্যতামূলক। ঢাকার ১৭টি ইউনিয়নে এই নিয়ম না মেনে হাজার হাজার ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এমনকি এই ১৭টি ইউনিয়ন দুই সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত হওয়ার পরেও রাজউকের নিয়ম মানা হচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নামমাত্র একটা নকশার অনুমোদন নিয়ে খেয়াল খুশি মতো ভবন নির্মাণ করছে। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে ৫০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় বলে ভুক্তভোগিরা জানান। মাতুয়াইল ইউনিয়নের বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী বলেন, তিনি ২০১২ সালে ৮ তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। সে সময় তিনি ভবনের নকশার কোনো অনুমোদন নেন নি। ভবন নির্মাণের সময় পেছনের দিকে কোনো জায়গা না ছাড়ায় একজন এ বিষয়ে রাজউকে লিখিত অভিযোগ করেন। রাজউক তাকে নোটিশ পাঠালে তিনি ছুটে যান ইউনিয়ন পরিষদে। এরপর টাকার বিনিময়ে ‘ব্যাকে ডেটে’ একটা নকশার অনুমোদন করিয়ে নেন। শেষ পর্যন্ত সেই নকশা দেখিয়ে রেহাই পান। তবে ভবন নির্মাণের সময় পেছনের দিকে দুই ফুট জায়গা শেষ পর্যন্ত ছাড়তে হয়েছে তাকে। শ্যামপুর, দনিয়া ইউনিয়নে গত কয়েক বছরে কয়েক হাজার বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে নকশা ও অনুমোদন ছাড়াই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই দুই ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক ডেভেলপার কোম্পানী ৮/৯ তলা ভবন নির্মাণ করে ফ্ল্যাট ও এ্যাপার্টমেন্টের ব্যবসা করছে। অথচ তারাও রাজউকের নিয়ম মেনে ভবন নির্মাণ করছে না। বেশিরভাগ ভবনই নকশা ও অনুমোদনবিহীন। ভুক্তভোগিরা জানান, নকশা ও অনুমোদন না নেয়ার কারণে বেশিরভাগ ভবনই নির্মাণ করার ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন মানা হয় না। ভবনের সামনে পেছনে জায়গা ছাড়া তো দুরের কথা আশপাশের জমি ও রাস্তা দখল করে ভবন নির্মাণ করা হয়। এই দখল নিয়ে চলে দেন দরবার। প্রথমে থানা পুলিশ, এরপর মামলা-পাল্টা মামলা। এক পর্যায়ে তা মারামারি, হানাহানি পর্যন্ত গড়ায়। দনিয়া এলাকায় এরকম বেশ কয়েকটি নির্মাণাধীন ভবন আছে যেগুলো নিয়ে বিরোধ লেগেই আছে। শুধু বিরোধ নয়, এক সময় এই সব ভবন ঢাকার নিরাপত্তার জন্য হুমকী হবে। নিয়ম না মানায় কোনো কোনো ভবন কম মাত্রার ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়তে পারে। ২০১৫ সালের ১৫এপ্রিল রাজধানীর রামপুরা থানা এলাকায় ঝিলের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা ঝুঁকিপূর্ণ তিনতলা টিনশেড ঘর দেবে গিয়ে ১২ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই ভবনের মালিক ছিলেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা। দুর্ঘটনার পর জানা গেছে, তিন তলা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড অনুসরণতো দূরে থাক রাজউকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার কোনো অনুমোদন নেয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ না থাকায় রাজধানীসহ সারাদেশে এভাবে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে একের পর এক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন গড়ে উঠছে। এতে প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানিও। ১৯৫২ সালে প্রণীত আইনের আওতায় তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা। অথচ ৫ যুগ পরেও আইনটি বাস্তবায়নের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ বা সমন্বিত কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। এতে করে সারা দেশেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ প্রবনতা বেড়েই চলেছে। এ বিষয়ে রাজউকের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই প্রবণতা কমিয়ে আনার জন্য ভবন নির্মাণ সম্পর্কিত আইন, কোড ও বিধি-বিধানসমূহ সঠিকভাবে বাস্তবায়নে ভবন নির্মাণকালে নজরদারি করার পরিকল্পনা করছে রাজউক। রাজউকের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বিএনবিসি মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে।
সূত্রমতে, ঢাকা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) আওতাধীন এলাকায় প্রতি বছর গড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার ভবন নির্মাণের নকশার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর বাইরেও প্রতি বছর শত শত বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কোনো প্রকার নকশা অনুমোদন ছাড়াই। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হওয়া ১৭টি ইউনিয় পরিষদ এলাকায় এই প্রবণতা অনেক বেশি। ২০১১ সালের পর থেকে কোনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ভবনের নকশা অনুমোদন করতে পারবেন না বলে রাজউকের প্রজ্ঞাপণে বলা হয়েছে। সে সময় রাজউকের পক্ষ থেকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সকলকে সাবধান করে দেয়া হয়েছিল যাতে কেউ আর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভবনের নকশার অনুমোদন না করায়। কিন্তু তাতে মোটেও থামেনি এই অনিয়ম। রাজউক সূত্র জানায়, অনুমোদনবিহীন এসব ভবন একদিকে যেমন ঝুঁকিপূর্ণ অন্যদিকে তেমনি বিরোধপূর্ণ। এ ধরণের ভবন নিয়ে রাজউকে প্রতিদিনই লিখিত অভিযোগ জমা পড়ছে। রাজউক এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থাও নিচ্ছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজউকের নোটিশের পরেও ভবন নির্মাণের কাজ থেমে নেই। বরং দ্রæত গতিতে চলছে ভবন নির্মাণের কাজ। ##
জানা গেছে, শুধু নকশা অনুমোদন করলেই চলবে না, ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় বলা আছে- ইমারত নির্মাণকাজ শুরু ১৫ দিন পর পর নির্মাণকাজের অগ্রগতির প্রতিবেদন রাজউকে জমা দিতে হবে। এসব নিয়ম ব্যত্যয় করার দায়ে রাজউক নকশার অনুমোদন বাতিল ও শাস্তি দিতে পারে। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।