Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল-কুরআনে নৃবিজ্ঞানের তাত্তি¡ক বিশ্লেষণ

| প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান
মহাগ্রন্থ আল কুরআন এমন এক বিষ্ময়কর গ্রন্থ, যাতে সকল জ্ঞান বিজ্ঞানের মূলতত্ত¡ নিহিত আছে। নৃবিজ্ঞান একটি আধুনিক বিদ্যা হওয়া সত্তে¡ ও কুরআনে এ বিদ্যার মৌলিক ধারণা বর্ণিত হয়েছে। প্রচলিত অর্থে নৃবিজ্ঞানের পরিচয়, দৈহিক নৃবিজ্ঞান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য, নৃবিজ্ঞানের সঙ্গে, সমাজবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক, নৃবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, জাতিতত্ত¡, ফোকলার এবং প্রাগৈতিহাসিক প্রতœতত্তে¡র পারস্পরিকতা, উপনিবেশবাদ ও আর্ন্তজাতিকতাবাদ, নৃবিজ্ঞান ও ধর্ম ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা ও এ সম্পর্কে কুরআনের দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনার উদ্দেশ্যে আলোচ্য প্রবন্ধটি প্রণীত হয়েছে। বর্ণনা ও বিশ্লেষনমূলক পদ্ধতিতে রচিত এ প্রবন্ধ থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, আল কুরআন নৃবিজ্ঞানের যে ধারণা দিয়েছে তা পরিপূর্ণ ও মানব জীবনের সকল দিককে আন্তর্ভুক্তকারী। কুরআনের সঙ্গে নৃবিজ্ঞানের সম্পর্ক বিষয়ক লেখা যেহেতু বিরলদৃষ্ট, সেহেতু প্রবন্ধে বর্ণিত জ্ঞানের নতুনত্বের দিকে পাঠককে অগ্রসর করবে এবং জ্ঞানের নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা দেবে বলে আমি মনে করি।
নৃবিজ্ঞান মানবজ্ঞান শাখার একটি বিস্তৃত গভীর পরিসরকে ধারণ করে আছে। মানুষ এবং মনুষ্যকর্মের বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যালোচনা নৃবিজ্ঞানে করা হয়। সে জন্য জীববিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, জাতিতত্ত¡, ফোকলোর, প্রাগৈতিহাসিক প্রতœতত্ত¡, ধর্ম, সংস্কৃতি, উপনিবেশবাদ ও আর্ন্তজাতিকবাদের সঙ্গে ও নৃবিজ্ঞানের সংশ্লিষ্টতা অবশ্য বিবেচনাযোগ্য। মানুষের দৈহিক গঠন, মানুষের উৎপত্তি, বিকাশ বিবর্তন নিয়ে নৃবিজ্ঞান যেমন কাজ করে; তেমনি মানুষের সংস্কৃতিবিকাশের মননধর্মিতার পঠন পাঠনও নৃবিজ্ঞানের জ্ঞান পরিধিকে সমাচ্ছন্ন করে আছে। মানবজ্ঞানের প্রকৃত লক্ষ্য তো আসলে একটি সত্য গন্তব্যে উপনীত হওয়া। প্রকৃত প্রজ্ঞার মাধ্যমে মানুষ তার সৃষ্টিকর্তাকে জানতে পারে; মহাবিশ্ব এবং বিশ্বের সৃষ্টি বৈচিত্র্যময় উদ্দেশ্য সম্পর্কে ও মানুষ জ্ঞাত হতে পার্ েমানুষের জ্ঞান সন্ধিৎসা সেই সত্য উদঘাটনের দিকে ক্রমধাবমান হলে জ্ঞানের ও প্রকৃত চরিতার্থতা মানুষ লাভ করে। মানুষের দৈহিক গঠন থেকে শুরু করে মানবপ্রজাতির উৎস বিকাশ ও স¤প্রসারণসহ মানুষের জাতিবিদ্যা ও মানব সংস্কৃতির বিস্তৃতির ব্যাপক গভীর সুন্দরতার কথা কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য ভাষ্য থেকে আমরা জানতে পারি। নৃবিজ্ঞানের সঙ্গে ইসলামি জ্ঞানতাত্তি¡কতার সম্পর্কও ঘনিষ্ঠতা এভাবেই প্রতিভাত হয়।
নৃবিজ্ঞান হলো মানব সম্পর্কিত বিজ্ঞান। নৃবিজ্ঞান মানুষের দৈহিক ও সংস্কৃতির বিবর্তন প্রক্রিয়ার উদ্ভব, বিকাশ ও উৎকর্ষ বিষয়ে আলোকপাত করে থাকে। অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু শব্দের বাংলানুবাদ আমরা নৃবিজ্ঞান করেছি। গ্রিক অহঃযৎড়ঢ়ড়ং অর্থ মানুষ; খড়মরপ অর্থ পঠন; সেজন্য অহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু অর্থ দাঁড়ায় মানুষ সম্পর্কিত পাঠ। দৈহিক নৃবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হলো, মানুুষের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশাসহ তার দেহ ও মস্তিষ্কের গঠন পর্যালোচনা সমেত সৃষ্টিজগতে মানুষের অবস্থান চিহ্নিত করা। শাব্দিকভাবে বললে বলতে হয়, নৃবিজ্ঞান হল মানবসম্পর্কিত বিজ্ঞান। জাতি ও সংস্কৃতির ধারণা দ্বিবিধ অর্থের ব্যাপারেই নৃবিজ্ঞান মনোযোগী। ঊঃুসড়ষড়মরপধষষু, ধহঃযৎড়ঢ়ড়ষড়মু রং ঃযব ংপরবহপব ড়ভ সধহ. ঞযব পড়হপবঢ়ঃ ড়ভ ৎধপব, ড়হ ঃযব ড়হব যধহফ, ধহফ ঃযধঃ ড়ভ পঁষঃঁৎব, ড়হ ঃযব ড়ঃযবৎ, যধাব ৎবপবরাবফ ংঢ়বপরধষ ধঃঃবহঃরড়হ.
মানুষের জাতিগত বংশধারা, উৎস বিকাশসহ সংস্কৃতি নিয়ে নৃবিজ্ঞান আলোকপাত করে। নৃবিজ্ঞানের প্রধান দুটো বিভাজন হলো, দৈহিক নৃবিজ্ঞানের মধ্যে মানুষের অঙ্গসংস্থান বিদ্যা, মনুষ্য জীবিবিজ্ঞান, মানুষের জীবাশ্মু বিজ্ঞান এবং মানবদেহের পরিমাপ বিদ্যার বিষয় পর্যালোচিত হয়। সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানে মানব জাতিতত্ত¡, তুলনামূলক মানবজাতিতত্ত¡, সামাজিক নৃবিজ্ঞান শিল্পকলা, সাহিত্য, ভাষাবিজ্ঞান ও প্রতœতত্ত¡ বিষয়ে মূল্যায়ন গবেষণা হয়ে থাকে। মানুষের উৎপত্তি সম্পর্কে সূরা আন্নিসায় বলা হয়েছে: হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন. আর বিস্তার করেছেন তাদের দুজন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। পৃথিবীর আদিমানব ও প্রথম নবী আদম আ. থেকে আর সঙ্গিনী হাওয়া এবং আদম আ. ও হাওয়া আ. থেকে পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। যে মানুষ হলো নৃবিজ্ঞানের মুখ্য আলোচ্য বিষয়।
দৈহিক নৃবিজ্ঞান যেহেতু মানুষের উৎপত্তি, বিকাশ ও তার দৈহিক ও তার দৈহিক গঠন পদ্ধতি নিয়ে আলোকপাত করে, সেজন্য নৃবিজ্ঞানের সঙ্গে শরীরবিদ্যা (চযুংরড়ষড়মু) শবব্যবচ্ছেদ বিদ্যা (অহধঃড়সু) ও প্রাণিবিদ্যা (তড়ড়ষড়মু) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মানব জীবাশ্মু বিজ্ঞানে (ঐঁসধহ ঢ়ধষপড়হঃড়ষড়মু) মানুষের প্রস্তরীভুত কঙ্কাল, জৈব শিলা এবং উদ্ধারকৃত ফসিলের যুগ নির্ণয়সহ মানুষের ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র, হাতিয়ার কলাকৌশল অবলম্বন করা হয়। নরদেহের পরিমাপ বিদ্যাকে ইংরেজীতে অহঃযৎড়ঢ়ড়সবঃৎু বলা হয়। এটি মানবদেহে ও তার বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গের আনুপাতিক পার্থক্যই শুধু নির্ধারণ করে না ; বরং বিশ্লেষনও করে।
(চলবে)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ