পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ‘তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়/ নিঠুর দহনে করুণ রোদনে তিলে তিলে তার ক্ষয়’ প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা কালজয়ী কণ্ঠশিল্পী মোঃ আবদুল জব্বার তাঁর এই গানের মতোই যাপিত জীবনে বর্তমানে নিপতিত। বরেণ্য সংগীতশিল্পীর দুটি কিডনি অকার্যকর; অবস্থা সংকটাপন্ন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসারত শিল্পী ডায়ালাইসির উপর বেঁচে আছেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শিল্পী ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করে প্রবাসী সরকারের তহবিলে দিয়েছেন। কণ্ঠের যাদু দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন। এই শিল্পী অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারছেন না। দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ শিল্পী নিজের গাওয়া গানের মতোই ‘এক বুক জ্বালা নিয়ে’ হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন। অর্থভাবে তার আরেক গান ‘বিদায় দাও গো বন্ধু তোমরা’র মতোই আমরা যেন তাকে বিদায় দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। আর হাসাপাতালের শুইয়ে বোধশক্তিহীন শিল্পী ‘নীরব পৃথিবী দুয়ারে তোমার’ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছেন।
ষাট ও সত্তর দশকের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মোঃ আব্দুল জব্বার। মা-মাটি-মানুষের শিল্পী। অসাধারণ কণ্ঠ এবং গায়কী। শত শত দেশাত্মবোধ এবং চমৎকার গান নিঃসৃত হয়েছে তাঁর কণ্ঠ থেকে। তার গান শুনলে শ্রোতামাত্রই নস্টালজিয়ায় ভোগেন। দরদী কণ্ঠের এই শিল্পীর স্ত্রী হালিমা জব্বার জানান, তার স্বামী আবদুল জব্বারের অবস্থা খুবই খারাপ। ক্রমান্বয়ে তার অবস্থার অবণতি ঘটছে। অথচ তার দিকে তাকানোর যেন কেউ নেই। আবদুল জব্বারের চিকিৎসার জন্য দু’একটি সংগঠন ও কিছু ব্যক্তি এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু চিকিৎসার জন্য যা অতি নগণ্য। দুইটি কিডনী প্রতিস্থাপনে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। আইসিইউতে নেয়ার আগে আবদুল জব্বার বাঁচার আকুতি জানিয়ে ক্ষীণ কণ্ঠে বলেছেন, ‘আমি আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই। আর এজন্য আমার কিছু টাকা দরকার। কিছু টাকা দিয়ে আমায় সহযোগিতা করুন।’ তাঁর এই আকুতি কি আমাদের কারো কানে পৌঁছাচ্ছে না? আব্দুল জব্বারের চিকিৎসায় সরকারের গাফিলতির অভিযোগ এনে তার স্ত্রী হালিমা জব্বার বলেন, ‘সরকার তাকে বাঁচানোর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাদের অবস্থা এমন যে, শিল্পী বুড়ো হয়ে গেছেন। এখন মরলেই কী, বাঁচলেই কী!’
একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের রণাঙ্গনে বীর কণ্ঠযোদ্ধা আবদুল জব্বারের সুর বন্দুকের মতো বেঁজেছে। তার সুরের যাদুতে উজ্জীবিত হয়ে লাখো মুক্তিযোদ্ধা একের পর এক অপারেশন করে শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করেছে। ভারতের মুম্বাইয়ে প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনমত তৈরিতেও নিরলসভাবে কাজ করেছেন। স্বাধীন বাংলা বেতারে গান করেছেন। তিনি গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’সহ অসংখ্য গণসঙ্গীত গেয়ে ১২ লাখ টাকা জোগার করে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ তহবিলে দান করেন। সেই শিল্পী অর্থাভাবে এখন ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। আবদুল জব্বারের কপাল মন্দ গোলাপি এখন ট্রেনে সিনেমার মতো; কারণ আমরা চোখ থাকতে যেন অন্ধ হয়ে গেছি। অকুতোভয় কণ্ঠযোদ্ধা আবদুল জব্বার টাকার অভাবে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন; অথচ দেশের শিল্পী সমাজ, কবি সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা নীরব দর্শক। হালিমা জব্বার সাংবাদিকদের জানান, বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্যের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সহায়তার আশ্বাসের বাস্তবায়ন আর হয়ে ওঠেনি। জানা যায়, কণ্ঠযোদ্ধা আবদুল জব্বারের চিকিৎসার জন্য দরকার প্রায় এক কোটি টাকা। চিকিৎসক জানিয়েছেন, দিনকে দিন তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছে চিকিৎসক। দুঃখজনক হলো আব্দুল জব্বারের পরিবারের সে সামর্থ নেই। যারাই শিল্পীকে দেখতে হাসপাতালে যান তাদের সামনে শিল্পীর ছোট ছেলে বাবু জব্বার কাঁদতে কাঁদতে বলেন, চোখের সামনে চিকিৎসার অভাবে বাবা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। অর্থাভাবে কিছুই করতে পারছি না। আমরা নিম্ন মধ্যবিত্তরা এরকম ব্যয়বহুল চিকিৎসা কিভাবে করাবো? আমাদের যেটুকু ছিল তা দিয়ে এখানেই চিকিৎসা করানোর সামর্থ ছিল না। কিছু কিছু মানুষ সহায়তা করেছে তা দিয়ে ৩ মাস চিকিৎসা চালিয়েছি। এখন সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখছি না। কিছুই করার নেই একজন অক্ষম সন্তানের মতো চোখের সামনে টাকার অভাবে বাবার মৃত্যু দেখা ছাড়া।
মুক্তিযোদ্ধারা সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ট সন্তান। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে। সেই মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছেন কণ্ঠশিল্পী আবদুল জব্বার। দু’দিন আগেও মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি বীর প্রতিক অসুস্থ হওয়ায় তাকে কুড়িগ্রাম থেকে প্রথমে রংপুর সিএমএইচ-এ; পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। শুধু তারামন বিবি নয়; দেশের বিশিষ্টজন, গুণীজন এবং অবহেলিত সুবিধা বঞ্ছিত মানুষ অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসার জন্য এগিয়ে আসে সরকার। কিছুদিন আগেও শিল্পী লাকি আখন্দসহ অসংখ্য শিল্পীর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে সরকার। সাবিনা ইয়াসমীনের চিকিৎসায় কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। নতুন জীবন পেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন এখনো কণ্ঠের যাদু ছড়িয়ে যাচ্ছেন। গত মাসেও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০১৫ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শিল্পী, কলাকুশলীদের কল্যাণে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী ওই ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘দেশের শিল্পী-কলাকুশলীদের অনেকেই জীবনের শেষ সময়ে এসে অর্থাভাবে ভোগেন, সঠিক চিকিৎসা পান না। এটা দুঃখজনক। তাদের কল্যাণে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে দু’টি ফান্ড রয়েছে। সে ফান্ডকে আরও বড় পরিসরে করতে চাই; যাতে কোনো শিল্পীকে কারও কাছে হাত পাততে না হয়। ওই ফান্ড থেকেই সহায়তা দেওয়া যায়। প্রায়ই খবর আসে, শিল্পীরা চিকিৎসা করাতে পারছেন না, টাকা-পয়সা নেই। আর যেন কোনো শিল্পীকে কষ্ট পেতে না হয়। অর্থাভাবে, চিকিৎসার অভাবে যাতে মারা যেতে না হয়; সে ব্যবস্থা আমি করে যেতে চাই।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মহৎ উদ্যোগ। অথচ দায়িত্বশীল কেউ আবদুল জব্বারের দিকে তাকাচ্ছেন না। প্রশ্ন হলো আবদুল জব্বার মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁর কণ্ঠ দেশের সম্পদ। কিন্তু তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলয়ের শিল্পী-বুদ্ধিজীবী-সংস্কৃতিসেবীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন বলেই কি তার দিকে তাকানো হচ্ছে না? নাকি রাজনৈতিক বিদ্বেষের কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবদুল জব্বারের ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হওয়ার খবর পৌঁছানো হচ্ছে না?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।