Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বন্ধু দিবস কোন সংস্কৃতি?

| প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : ‘বিশ্ববন্ধু দিবস’ নামে যে দিবস পালিত হয় সেটা জানা ছিল না। গতকাল দেশে ঘটা করে পালিত হলো বিশ্ববন্ধু দিবস। দিবসটি নিয়ে কয়েকটি মিডিয়া ব্যপক উৎসাহে লেখালেখি-মন্তব্য-সাক্ষাৎকার-বক্তব্য প্রকাশ করে। সিনেমা-নাটকের শিল্পী-সংস্কৃতি সেবীদের বন্ধুত্বের কথাবার্তা ফলাও করে প্রচার করা হয় বন্ধু দিবস উপলক্ষ্যে।
প্রশ্ন হলো এই বন্ধু দিবসের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে কি শেখাতে চাচ্ছি? বন্ধুত্ব অবশ্যই ভাল সম্পর্ক। পশ্চাত্যের দেশগুলোর প্রাইমারী স্কুলেই ছেলেমেয়েদের মধ্যেকার ঢলাঢলি, বন্ধুত্বের নামে শারীরিক সম্পর্কের এই সংস্কৃতি চর্চা কি আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ? বন্ধুত্ব নিয়ে দেশের সংস্কৃতি সেবীদের যে উচ্ছাস-কথাবার্তা প্রচার হলো তাতে নতুন প্রজন্মের জন্য কি শেখার কিছু আছে? আমেরিকার তথাকথিত এই সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে মাতামাতির নেপথ্যের রহস্য কি? ধর্মীয় অনুশাসন, নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত আমেরিকানদের যাপিত জীবন আমাদের সমাজ জীবনে কি প্রয়োজন আছে?
আমরা বাংলাদেশি। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত। ৯২ ভাগ মুসলমানের এই দেশে রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য, কৃষ্টি-কালচার। ঐতিহ্যগতভাবেই আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ সংমিশ্রিত সংস্কৃতি নান্দনিক ও সুন্দর। শিল্প-সংস্কৃতি জাতির প্রাণ। গতকাল যারা পশ্চিমাদের তথাকথিত বন্ধু দিবস পালন নিয়ে নাচানাচি করলেন আমাদের সেই সংস্কৃতি সেবী ও শিল্পীরা দেশজ সংস্কৃতি কতটুকু তুলে ধরছেন? সংস্কৃতি বলতে শুধু রং-তুলির ছবি আঁকা, বাদ্যযন্ত্র, গান-বাজনা, টেলিভিশনে নাটক-সিনেমা নয়। সংস্কৃতি বলতে পশ্চাত্যের রক গান, ধোঁয়া দিয়ে বিকট কণ্ঠে চিৎকার, নাচানাচি নয়; কিংবা বিপরীত লিঙ্গের সাথে খোলামেলা চলাফেরা-আড্ডা দেয়া নয়। আমার দেশের সংস্কৃতি আমার পরিচয় বহন করবে। সেটা না করে সংস্কৃতি সেবী ও চিহ্নিত মিডিয়াগুলো পশ্চিমা সংস্কৃতির চর্চার এতো মনোযোগী কেন? আধুনিকতার নামে ভিনদেশী ইসলাম বিদ্বেষী অপসংস্কৃতি চর্চা অনুসরণ কি নতুন প্রজন্মের কাম্য হতে পারে?
বন্ধু দিবসের উৎপত্তি আমেরিকায়। বন্ধুর মৃত্যুতে আরেক বন্ধুর আত্মহত্যার ঘটনায় বন্ধু দিবসের উৎপত্তি। খবরে প্রকাশ সারা দুনিয়ায় সভ্য দেশ হিসেবে পরিচিত বন্ধু দিবসের দেশখ্যাত আমেরিকায় এখনো ঘণ্টায় ১শ জনের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হন। স্কুল জীবন পার না হতেই শতকরা ৯৬ মেয়ে তার কুমারীত্ব হারিয়ে ফেলেন। ওরাই তো বন্ধু দিবস সংস্কৃতির ধারক-বাহক। ইদানিং আমরা যাদের সংস্কৃতিকে মডেল (!) হিসেবে প্রচার কারছি; সেই ভারতে শতকরা ৪৯% বেশি নারী বিয়ের পূর্বে গর্ভপাত ঘটায়। নারী ধর্ষন শিশু ধর্ষনে রেকর্ড গড়ায়। বন্ধু দিবস পালন করে তারা কি ছেলেমেয়েদের মধ্যে সুন্দর জীবন ও মানবিক মর্যাদা গড়তে পেরেছে? আমেরিকার আধুনিকতার ভারতের প্রগতিশীলতার নামে খোলামেলা বন্ধুত্ব-সংস্কৃতি চর্চা তাদের টিনএজআর’দের ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমারিকায় পারিবারিক বন্ধন নেই বলেই চলে। যাদের পিতামাতা ভাইবোন সামাজিক বন্ধন নেই; ধর্মীয় অনুশাসন-সামাজিক বন্ধনের শিক্ষা তাদের কাছে অবান্তর। সে শিক্ষা তাদের দেয়ার প্রয়োজন মনে করে না। আধুনিকতার রঙিন জীবনের নামে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরাও কি সে পথে হাটছি? তা না হলে দেশীয় সংস্কৃতির বদলে ভারতীয় সংস্কতির চর্চার ওপর জোর দিচ্ছি কেন? কেনই বা আমেরিকার অপসংস্কৃতি বন্ধু দিবস ঘটা করে পালন করছি? এই দিবস পালনে ছেলেমেয়েদের কি বার্তা দিচ্ছি? অনেকেই বলতে শুরু করেছেন ওই বিদেশী অপসংস্কৃতির চর্চার প্রতি ঝুকে পড়া এবং আমেরিকা-ভারতীয়দের অনুসরণ-অনুকরণের কারণেই আমাদের দেশে ধর্ষণ ঘটনা মহামারী আকার ধারণ করছে? শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। প্রশ্ন হলো দেশী সংস্কৃতির বদলে আমরা আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতার নামে নতুন প্রজন্মকে কোন পথে নেব? ছেলেমেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্বের নামে ঢলাঢলিকে কি সুশিক্ষা সভ্যতা বলে?
রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের এই দেশে সংস্কৃতির নামে কি দিচ্ছি আমরা আমাদের প্রজন্মকে? দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতি সেবীরা আমাদের সন্তানদের কি শেখাচ্ছেন? রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে ভারতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসন বেড়ে গেছে। শুধু রাজনীতি নয়, পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চাও কলকাতা-দিল্লী মুখী। দেশে প্রায় ৩২টি টিভি চ্যানেল অথচ দেশের দর্শকরা বিদেশী চ্যানেলমুখী। একটি জরিপে দেখা গেছে আমাদের দেশের একটি স্কুল পড়ুয়া মেয়ে সপ্তাহে গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ ঘণ্টা ভারতীয় চ্যানেলে নাটক-সিরিয়াল-সংস্কৃতির অনুষ্ঠান দেখে থাকে। পরিবারের মহিলাদের শতকরা ৯৯ জন ভারতীয় চ্যানেলে দেখতে অভ্যস্ত। উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের যাপিত জীবনে আনন্দ ও বিনোদনের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। এর জন্য আমরা দেশীয় বিনোদন দেখতে পারি। যেমন বাংলা নাটক, আমাদের সন্তাননদের দিতে পারি বিনোদনমূলক কার্টুন, বিভিন্ন ডুকুমেন্ট, গল্প, কমিকস ও ছোটদের বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান। আমাদের চ্যানেলগুলো দর্শক চাহিদা মেটাতে সে পথে হাটছে না। দেশের কয়েকটি টিভি চ্যানেল মুসলিম শাসকদের জীবন কাহিনী, দেশ শাসন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ইতিহাস ঐতিহ্য, মুসলিম রেঁনেসাস নিয়ে কয়েকটি ধারাবাহিক প্রচার করে। ওই সব ধারাবাহিক দেখার জন্য দর্শক হুমরি খেয়ে পড়েন। তারপরও ইসলাম বিদ্বেষী মানসিকতায় আমাদের টিভির নাটক নির্মাতারা দর্শকদের চাহিদা মতো ইসলাম ও মুসলিম ঐতিহ্য নিয়ে নাটক সিরিয়াল নির্মাণে উৎসাহী হচ্ছেন না। আমরা কি আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতার নামে বিদেশী অপসংস্কৃতির মধ্যেই ঢুবে থাকবো?
ইদানিং দোস্ত শব্দটি আমাদের উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে কমন ডায়লগ হয়ে গেছে। বিজ্ঞানের এই যুগে প্রযুক্তির প্রসারে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে দ্রæত বিস্তৃত হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড সম্পর্ক ও দোস্ত কালচার। এ কালচার আমাদের সমাজের সঙ্গে যায় না। দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় টিভি চ্যানেলে সিনেমা-নাটকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে যা দেখানো হচ্ছে তা অবাধ মেলামেশা ও লজ্জাহীনতার প্রসারের নামান্তর। পাশাপাশি মোবাইল ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার সুযোগে পর্নোগ্রাফির বিস্তার এবং নারী-পুরুষ সংস্পর্শে আসার কারণে লজ্জা ও নৈতিকতার বাঁধন শিথিল হয়ে যাচ্ছে। উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে লজ্জাহীনতার সংস্কৃতি। প্রগতিশীলতা ও আধুনিকতার নামে ক্রমে বিস্তৃত হচ্ছে অবাধ মেলামেশার পরিবেশ। বিদেশী সংস্কৃতি চর্চার কারণে বিয়ে বহির্ভূত যৌনতা বিষয়ে ধর্মীয়, পারিবারিক এবং সামাজিক রীতিনীতি ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে যাচ্ছে। তরুণ-তরুণীদের ভালোবাসা ভালোলাগা আজকাল দ্রæত গড়াচ্ছে শারীরিক সম্পর্ক পর্যায়ে। আমারা সচেতন না হলে নতুন প্রজন্ম এই অনৈতিক নোংরা পথে যাবেই। আমরা কি তথাকথিত আধুনিকতা ও প্রগতিশীলতা চর্চার নামে ভাই ফোঁটা, ভালবাসা দিবস, হোলি খেলা ইত্যাদির চর্চা করে নতুন প্রজন্মকে আমেরিকার-ভারতীয়দের তথাকথিত সভ্য সমাজের মতো নষ্টামীর দিকে নিয়ে যাব? নাকি দেশজ সংস্কৃতি ধর্মীয় মূল্যবোধে শেখাবো সেটা নিয়ে ভাবনার সময় এখনই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ