Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তুফান গ্রেফতার মতিন পলাতক তবুও চলছে ধুন্ধুমার চাঁদাবাজি জুয়া হাউজি মাদক ব্যবসা

জুয়াড়–দের খাওয়ানো হচ্ছে ফ্রী বিরিয়ানী

| প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : গত ১ আগষ্ট যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আলোচিত গড ফাদার তুফান সরকারের বড় ভাই বগুড়ার ‘‘বাপুজী’’ খ্যাত মতিন সরকারের বহিষ্কারাদেশ মিডিয়ায় প্রচারের পর থেকেই উধাও ওই গডফাদারকে ধরতে পারেনি পুলিশ। দলের স্ব-স্ব পদ হারানো তুফান জেলে এবং তুফানের বড় ভাই মতিন পলাতক হলেও তাদের অপরাধ জগতের সব কিছুই আগের মতই চলছে । কিছুটা গোপনে রাখঢাক করে মাদকের কারবার চললেও হাউজি ও জুয়ার আসর আগের মতই জমজমাট ভাবে চলছে। বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্রের কয়েকটি স্থানে সুদৃশ্য শিটের প্লাকার্ড’ এ যদিও লেখা রয়েছে অবৈধ অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ। বাস্তবে কিন্তু বগুড়া শহরে আগের মতোই অটোরিক্সা চলছে। আর শুধু ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সাই নয় সব ধরনের যানবাহনেই চলছে ধুন্ধুমার চাঁদাবাজী।
তুফান সিন্ডিকেটের বাইরের ৫/ ৬টি সিন্ডিকেট অটোরিক্সা ও সবুজ সিএনজি থেকে প্রতিদিন প্রকাশ্যে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করছে। চাঁদাবাজরা বিভিন্ন সংগঠণের ব্যানারে এই চাঁদাবাজি করলেও নিরব রয়েছে প্রশাসন পুলিশ।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই খাতে চাঁদাবাজরা যেসব সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি করছে তার কোনটারই নেই রেজিষ্ট্রেশন বা ব্যাংক একাউন্ট। ফলে প্রতিদিন এই খাতে যেসব চাঁদা ওঠে সেসব চাঁদার পুরোটাই রাতের বেলায় জনাকয় ব্যাক্তির পকেটে উঠছে।
এদিকে মতিন সিন্ডিকেটের সেকেন্ড ইন কমান্ড সুইপার সোহেল ওরফে কিলার সোহেলের নেতৃত্বে চলছে মাদকের কারবার। পলাতক হওয়ার আগে থেকেই মতিন সিন্ডিকেটের আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সব কিছুই পরিচালিত হত কিলার সোহেলের নেতৃত্বে। বগুড়ার প্রতিটি ইউনিয়নেই এই সুইপার সোহেল ওরফে কিলার সোহেল একটি আতংকের নাম !
তাই তার নেতৃত্বে আন্ডারওয়ার্ল্ড পরিচালনায় কোনো সমস্যায় হচ্ছেনা বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে। অন্যদিকে মতিনের অতি বিশ্বস্ত, দেহরক্ষী কাম ম্যানেজ মাষ্টার মামুন জায়গামত যোগাযোগ করে চেষ্টা করছে পরিস্থিতি ঠান্ডা করার।
মতিন সিন্ডিকেটের আরেক গডফাদার (চারমাথার এরশাদ) এরশাদ হোসেনের নেতৃত্বে বগুড়া ও কাহালু থানার মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত মুরোইল নামে একটি জায়গায় চলছে ও জমজমাট হাউজি ও জুয়া। বগুড়ার এই জুয়ার আসর সম্ভবত বাংলাদেশের সবচাইতে বড় জুয়ার আয়োজন। যেখানে শুধু বগুড়া নয় সারা দেশের বিখ্যাত জুয়াড়–রা এসে বগুড়ার নামি দামি আবাসিক হোটেলে দিনের পর দিন অবস্থান করে লাখ লাখ টাকার জুয়া খেলছে। জুয়া স্থলে প্রতিরাতে রান্না হচ্ছে বড় বড় ডেগচিতে বিরিয়ানি/পোলাও/কোনদিন মুরগী কোনোদিন গরু-–খাসির গ্শোত। অর্থাৎ এইটা কিনলে ওই ওটা ফ্রীর মতো জুয়া খেললে বিরিয়ানী ফ্রী’র মতো !
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির গণশুনানি শুরু
বগুড়ার আলোচিত তরুনী ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন ঘটনায় গঠিত জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত ৩ সদস্যের গণশুনানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্ত কমিটির আহŸায়ক বগুড়ার এডিএম আব্দুস সামাদের স্বাক্ষরে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারী হয়েছে। গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ি গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এডিএম অফিসে ঘটনা সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তিরা লিখিত বা মৌখিক ভাবে জানাতে পারবে। পরবর্তি আদেশ জারীর আগ পর্যন্ত এই গনশুনানি চলবে।
পৌর কাউন্সিলর রুমকির বাসায় নির্যাতনের ভিডিও জব্দ
পৌর কাউন্সিলর রুমকির বাসায় গত ২৭ জুলাই তুফান দ্বারা ধর্ষনের শিকার তরুনী ও তার মায়ের ওপর চালানো শারীরীক যৌন নিপীড়নের দৃশ্য রুমকির মোবাইলে ধারণ করা হয়। ছবি গুলো ধারণ করে রুমকির কিশোরী কন্যা। ভিডিও ধারন করার পর ধর্ষিতা তরুনী ও তার মা’কে এই বলে হুমকি দেওয়া হয় যে, তারা যদি এই ঘটনার পর ২৪ ঘন্টার মধ্যে যদি তারা গোপনে এলাকা ছেড়ে না যায়, তাহলে এর চেয়েও বহুগুন বেশি নির্যাতন করা হবে। পাশাপাশি ধারণকৃত ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হবে।
পুলিশ ওই ভিডিও উদ্ধার ও জব্দ করে তা’ বিচারিক আদালতের মাননীয় বিচারকের কাছে জমা দেয়।
নাপিত জীবনের জবানবন্দীতে যা আছে
এদিকে মামলার আসামী নরসুন্দর (নাপিত) জীবন রবিদাস আদালতে বুধবার সন্ধ্যায় দেয়া স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেছে, কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি ও তুফানের স্ত্রীর নির্দেশে সে তাদের ন্যাড়া করে দেয়। কাউন্সিলর রুমকির বাড়িতেই ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনটি ঘটে। শহরের চকসূত্রাপুরে রুমকির বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তার দেয়া জবানবন্দি ১৬ ধারায় রেকর্ড করেন। এ তথ্য মামলার নথি থেকে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুফানের বাড়ির কাজের মেয়ে শারমিন (১৫) ও মালা (১০) কেও থানায় আনা হয়েছিলো। জিঙ্গাসাবাদ শেষে তাদেরকে বুধবারই তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
চুলকাটা এবং নির্যাতনের ঘটনার চিত্রটি ধারন করা হয়েছিলো ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুমকির মোবাইল ফোন থেকে। আলামত হিসেবে সেগুলো আদালতে দেওয়া হয়েছে।
অব্যাহত প্রতিবাদ
বগুড়ায় কিশোরী ধর্ষন ও মা মেয়ের মাথা মোড়ানোর ঘটনার প্রধান আসামী তুফান সরকারসহ তার সহযোগিদের শাস্তির দাবীতে আজও মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। তারা সকাল ১১টায় শহরের সাতমাথায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে ঘটনার সাথে জড়িতদের ফাসি দাবী করে বলেন, এ বর্বরোচিত ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে নারী নির্যাতন কমবে না।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বগুড়া জেলা শাখা, মানবাধিকার রিভিউ সোসাইটি, এনজিও সংস্থা পেসড মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য দেন, এনজিও নেত্রী মাহফুজ আরা মিভা, আলহ্জ্বা রফিকুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী কানিজ ফাতেমা, মিজানুর রহমান প্রমুখ।
ইন্টারনেটে তুফানকে নির্দোষ প্রমানের মিশন
ধর্ষক, নিপীড়ক, চাঁদাবাজ তুফান সরকারের উচ্ছিষ্ট ভোগীরা ইন্টারনেট প্রচারণার মাধ্যমে তুফানকে নির্দোষ প্রমানের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি ধর্ষিতা তরুনীর পরিবার স্বেচ্ছায় তুফান সরকারের টাকায় বগুড়ায় বসবাস করতো তাদের সংসার তুফানের টাকাতেই চলে এমন ধরনের ধারণা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলছে বলে লক্ষ্য করা গেছে।
জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি
বগুড়ায় চাঞ্চল্যকর তরুনী ধর্ষন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ পুলিশ হেফাজতে থাকা তুফানের স্ত্রী আশা ও শ্বাশুড়ি রুমি বেগমকে আদালেতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। শুনানী শেষে অতিরিক্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শ্যাম সুন্দর রায় রিমান্ডের আবেদন না মঞ্জুর করে জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ