দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রশ্ন: আল্লাহ প্রাপ্তির জন্য শরীয়ত মারেফাত দুটোই কি আবশ্যক
উত্তর : হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলামানের জন্য ইলম অর্জন করা ফরজ’। (ইবনে মাজাহ : ২২৪)। এ হাদিসের ব্যখ্যায় ইমাম মালেক (রহ.) বলেন, ‘ইলম দুই প্রকার। শরীয়ত ও মারেফাত। যে ব্যক্তি শরিয়ত শিখল কিন্তু মারেফাত শিখলনা সে ফাসেক। আর যে মারেফাত শিখল কিন্তু শরিয়ত শিখল না সে কাফের।’ (আল ইতকান : ২/১৮৭)। ইমাম মালেকের বক্তব্যের ব্যখা করে বিজ্ঞজনরা বলেন- শুধু শরীয়তের দ্বারা ব্যক্তি আমলের হুকুম-আহকাম জানতে পারে কিন্তু এর নিগূঢ় রহস্য অনুধাবন করতে পারে না। ফলে এমন ব্যক্তির দ্বারা সহজেই রিয়া, আত্মম্ভরিতাসহ যে কোন ধরণের সূ² গোনাহ সংঘঠিত হয়ে যেতে পারে। এর ফলে সে ইবাদত করেও ফাসেক তথা পাপীর খাতায় নাম লেখাবে। আবার যে শুধু মারেফাত শিখল কিন্তু শরিয়ত শেখেনি সে যখন কাশফসহ বিভিন্ন স্তরে উন্নতি হতে থাকবে তখন শয়তানের ধোঁকা থেকে নিজেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে না। যার শেষ পরিনাম তাকে কুফরির পথে নিয়ে যাবে। অতীতে এমন অসংখ্য বুজুর্গ তরিকতের বিভিন্ন মানজিলে শয়তান কর্তৃক প্রতারিত হয়ে ইমান আমল সব হারিয়েছেন। তাই ইমাম মালেকের (রহ.) কথাই চিরসত্য ও যুক্তিযুক্ত। শরীয়ত ছাড়া মারেফাত আবার মারেফাত ছাড়া শরিয়ত দুটোই ব্যক্তির জন্য চরম ক্ষতিকর। যার স্বীকৃতি মেলে সুফিয়ান সাওরী (রহ.) এর কথায়। তিনি বলেন, ‘শায়খ আবুল হাশেম সুফির সাক্ষাত না পেলে ইবাদতে রিয়ার অনেক সূ² বিষয় আমার অজানা থেকে যেত।’ (নাফখাতুল ইনস : ২২)।
শুধু ইমাম মালেক বা সুফিয়ান সাওরী-ই নয়, সব হকপন্থী সুফি-দরবেশ একবাক্যে স্বীকার করে গেছেন শরিয়ত ব্যতিত তাসাউফ চর্চার কোন মূল্য নেই। আবার শরীয়তের বিষয়ে বিজ্ঞ আলেমরাও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য সমসাময়িক তরিকতের ইমামদের কাছে বায়াত গ্রহণ করেছেন। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য! একদল মানুষ শরিয়তকে মারেফতের প্রতিদ্বন্দী করে ফেলেছে। আবার আরেকদল মারেফাতকে শরিয়াতের বহির্ভূত মনে করে নিয়েছে। মূলত, শরীয়ত-মারেফাত এ দুটোর সমন্বয়ের নামই ইসলাম। এ সম্পর্কে সুফি আবুল কাশেম আল কুশাইরী (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি শরীয়তকে মারেফাতের প্রতিদ্বন্দী মনে করে সে আমাদের সুফিদের কাছে পরিত্যক্ত। আর যার মারেফাত শরিয়তের বিপরীত হয়, বুঝতে হবে মারেফাত কী সে তা বুঝতে পারেনি।’ শায়খ আবু তালেব মাক্কী বলেন, ‘ইলমে শরীয়ত ও ইলমে তাছাউফ- এ দুটো একটি অপরটি থেকে আলাদা হতে পারে না। বরং শরীয়ত-মারেফাত দুটো পরস্পরের পরিপূপক। যেমন ইমান-ইসলামের পরিপূরক। আবার ইসলাম ইমানের পরিপূরক। (মিরকাতুল মাফাতিহ ১/২৫৬)।
সুফি ও দর্শণের ইমাম হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মাদ গাজালী (রহ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ এহইয়াউল উলুমুদ্দিনে শরিয়ত ও তাছাউফের তত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর বলেছেন- শরিয়ত ও মারেফাত ভিন্ন কোন জিনিস নয়। এদুটোর তুলনা দেহ ও প্রাণের মত। প্রাণহীন দেহ যেমন মূল্যহীন তেমনি শরিয়ত ছাড়া মারেফাতও মূল্যহীন।’ এরপর তিনি লেখেন, ‘আমার বক্তব্যের পেছনে কোরআন-হাদিস ও সাহাবীদের এত বেশি আসার আছে যে তা সব উল্লেখ করলে স্বতন্ত্র গ্রন্থ হবে, যা কয়েকখন্ডেও সমাপ্ত করা যাবে না।’ (এহইয়াউল উলুমুদ্দিন : ৩/২০-২১) শায়খ জাকারিয়া আনসারী বলেন, ‘ইসলামের দুটো রুপ আছে। একটি হলো বাহ্যিক। যার নাম শরিয়ত। অপরটি আভ্যন্তরীন। যার নাম মারেফাত। তাই এ দুটোর যে কোন একটি বাদ দিয়ে ইসলামের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। (শরহে রিসালা : ৪৩)।
মোদ্দাকথা, শরীয়ত ও মারেফাত এ দুটো থেকে গাফেল থাকার সুযোগ যেমন নেই তেমনি একটি বাদ দিয়ে অপরটি নিয়ে মেতে থাকাও সংগত নয়। বিজ্ঞ ফকিহ আল্লামা শামী (রহ) বলেন, ‘শরিয়ত-মারেফাত পরস্পর অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। আল্লাহ প্রদত্ব সিরাতাল মুস্তাকিমের বাহ্যিক দিক হলো শরীয়ত আর ভেতরের দিক মারেফাত। আল্লাহ প্রাপ্তির জন্য এ দুটোই আবশ্যক। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৩০৩)। আল্লামা তাহের আলাউদ্দিন গিলানী (রহ.) বলেন, ‘তাছাউফবিহীন শরিয়ত দাম্ভিকতার অপর নাম। আর শরিয়তবিহীন তাছাউফের অপর নাম পথভ্রষ্টতা।’ (তাছাউফের আসল রুপ : ৫৫)। তাই আসুন! আমরা সবাই শরিয়ত এবং মারেফাতের সমন্বয়ে ইসলামী জিন্দেগী যাপন করে আল্লাহ প্রাপ্তির পথে এগিয়ে যাই।
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি আনিসুর রহমান জাফরী
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।