Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গ্যাসের অভাবে বন্ধ ৩টি ইউনিট

চট্টগ্রামে গরমের তীব্রতা বাড়ার আগেই বাড়ছে বিদ্যুৎ ‘বিভ্রাট’

প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম : গরমের তীব্রতা বাড়ার আগেই বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে বাড়ছে বিদ্যুৎ সংকট। গ্যাসের অভাবে ৪৮০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিনটি বিদ্যুৎ ইউনিট বন্ধ আছে। পানির উচ্চতা কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ মহাপ্রকল্পের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। উৎপাদন খরচ কমাতে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রও দিনের বেলায় বন্ধ রাখা হচ্ছে।
এতে করে গরমের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুৎ সঙ্কট আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগের মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং না থাকলেও রাতে-দিনে দফায় দফায় অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। এতে করে নগরবাসীকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। পরীক্ষার্থীসহ শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘিœত হচ্ছে।
বিশেষ করে সন্ধ্যায় এবং রাতে মহানগরী ও শহরতলীর আশপাশের এলাকায় লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। দিনের বেলায়ও অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ থাকছে না। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির কর্মকর্তারা বিদ্যুতের এই আসা-যাওয়াকে বিদ্যুৎ ‘বিভ্রাট’ দাবি করে বলছেন, ‘এখন চট্টগ্রামে লোডশেডিং নেই।’       
পিডিবি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে নতুন-পুরাতন এবং সরকারি-বেসরকারি মিলে চট্টগ্রামে ১৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৪৭৩ মেগাওয়াট। তবে কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরনো হয়ে যাওয়ায় পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারছে না। ১৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৮টি ইউনিট একযোগে চালু রাখা হলে সর্বোচ্চ এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যায়।
পিডিবি সূত্র জানায়, গ্যাসের অভাবে দীর্ঘদিন থেকে রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট বন্ধ আছে। একই কারণে বন্ধ শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রও। গ্যাস-নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ১৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট হলেও সরবরাহ মিলছে সামান্য। কর্ণফুলী গ্যাস সরবরাহ কোম্পানীর একজন কর্মকর্তা জানান, বহুজাতিক সার কারখানা কাফকো ও রাষ্ট্রায়ত্ত সার-কারখানা সিইউএফএল চালু হওয়ায় পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ দেয়া যাচ্ছে না।
গ্যাসের অভাবে তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকার পাশপাশি কাপ্তাই হ্রদে পানির উচ্চতা কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ মহাপ্রকল্পের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৫টি ইউনিটের মধ্যে এক ও দুই নম্বর ইউনিট থেকে ৪০ মেগাওয়াট করে ৮০ মেগাওয়াট এবং বাকি তিনটি ইউনিট থেকে ৫০ মেগাওয়াট করে দেড়শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না।
তাছাড়া পানির অভাবে দিনের বেলায় কয়েটি ইউনিট বন্ধ রাখতে হচ্ছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী, দোহাজারী ও জুলদায় প্রতিটি একশ’ মেগাওয়াট ক্ষমতার ফার্নেস অয়েল নির্ভর তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যয় কমাতে দিনের বেলায় বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পিক-আওয়ারে উৎপাদন বাড়লেও দিনের বেলায় উৎপাদন কম হচ্ছে। এ কারণে দিনে লোডশেডিংও বেশি করতে হচ্ছে।
নগরীর জুবিলী রোড এলাকায় প্রায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। একই অবস্থা নগরীর আগ্রাবাদ, পাঠানটুলি, চকবাজার এলাকায়ও। নগরীর কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় নিয়মিত এসব এলাকায় লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। আগের মতো ভয়াবহ না হলেও বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলা চলছে। কোন কোন এলাকায় ট্রান্সফরমার বিকল হচ্ছে, আবার সঞ্চালন ব্যবস্থার ত্রুটির কারণেও কোন কোন এলাকায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। পিডিবির হিসাবে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট। তবে চাহিদার বিপরীতে সবসময় পর্যাপ্ত সরবরাহ মিলছে না। এই কারণে কোন কোন এলাকায় সীমিত সময়ের জন্য লোডশেডিং করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের চাহিদা পূরণে জাতীয় গ্রীড থেকে সরবরাহও বাড়ানো হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পিডিবি চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী মো. আজহারুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, চট্টগ্রামে আগের মতো লোডশেডিং নেই। যান্ত্রিক ত্রুটি কিংবা সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে কোন কোন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে, দাবি করে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলছে। গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্যাসের অভাবে বন্ধ ৩টি ইউনিট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ