Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ময়লা পানিতে সয়লাব ডিএনডি এলাকা

ডিএসসিসি’র ড্রেনেজ কাজের ধীরগতিতে দুর্ভোগ বেড়েছে

| প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : ডিএনডি বাঁধের অভ্যন্তরের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে এখনও পানি নামেনি। রাস্তাসহ অলিতে-গলিতে এখনও পানি জমে আছে। কোনো কোনো এলাকায় এখনও রিকশা চলছে। বৃষ্টির পানির তোড়ে ভেসে যাওয়া ড্রেন থেকে ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানি জমে আছে এলাকাগুলোতে। তাতে পরিবেশ দূষিত হয়ে নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে। উপদ্রব বেড়েছে মশার। চিকুনগুনিয়া আতঙ্কে ভুগছেন অনেকেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনও নারায়ণগঞ্জের মিজমিজির পাইনাদী, সিআইখোলা, কালাহাতিয়ার পাড়, নতুন মহল্লা, মজিববাগ, রসুলবাগ, নয়াআটি, নিমাইকাশারী, তুষার ধারা, বক্সনগর, হাজীগঞ্জ, গিরিধারা, সাহেবপাড়া, বাঘমারা, সাদ্দাম মার্কেট, জালকুড়ি, হাজীনগর, শহীদ নগর, সবুজবাগ, ভূঁইঘর, দেলপাড়া, ডগাইর, ঢাকার ডেমরা থানার মাতুয়াইল, সানারপাড়, টেংরা, কোদালদাহ, নয়াপাড়া ও ধনকুন্ডা, কদমতলী থানার রসুলপুর, রায়েরবাগ, জিয়া স্মরনী, পলাশপুর, পাটেরবাগ, দনিয়া, কোদারবাজার, মুরাদপুর, শ্যামপুর থানার নি¤œাঞ্চল, জুরাইন, ধেলাইপাড়সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে এখনও পানি নামেনি।
দনিয়া এলাকায় পানি নামতে পারছে না ড্রেন বন্ধ রাখার কারণে। দনিয়া বর্ণমালা স্কুল রোডের মাথায় পপি হাসপাতালের সামনে ড্রেনের কাজের দোহাই দিয়ে স্যূয়ারেজ লাইন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে গোয়ালবাড়ি মোড়ের পানি নামতে পারছে না। জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী থেকে শনিরআখড়া পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সমান্তরালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ৮ মাস আগে। অত্যন্ত ধীর গতিতে চলা এই কাজের জন্য দনিয়া এলাকার রাস্তা এবং ড্রেনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে বহুদিন ধরে। এ কারনে গোটা দনিয়া, পাটেরবাগ ও মুরাদপুর এলাকায় নেমে এসেছে বিপর্যয়। এ প্রসঙ্গে দনিয়া ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোস্তাফিজুর রহমান মঞ্জু বলেন, পপি হাসপাতাল থেকে একটা ড্রেন গোয়ালবাড়ি মোড় পর্যন্ত আসবে। এই কাজ শুরু হয়েছে অনেক আগে। ঢালাই কাজের জন্য ড্রেনের লাইন বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন কয়েকদিন কাজ করে বন্ধ রেখেছে। এতে করে এলাকার পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে। দনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জুম্মন মিয়া বলেন, একটানা বৃষ্টির কারনে পুরো ইউনিয়ন তলিয়ে গিয়েছিল। বৃষ্টির মধ্যেই আমি লোকজন নিয়ে ড্রেনগুলো পরিস্কার করেছি। পানি যাতে দ্রæত নেমে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। তারপরেও পানি নামতে দুদিন লেগেছে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন ড্রেনের কাজ করছে। কাজটা সম্পন্ন হলে এই এলাকার সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে। কিন্তু কাজ হচ্ছে খুব ধীর গতিতে।
নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা ডেমরার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ডিএনডি বাঁধ। এই বাঁধের অভ্যন্তরে এখন প্রায় ২০ লাখ মানুষের বসবাস। বাঁধের অভ্যন্তরে বিস্তীর্ণ এলাকা গত কয়েক দিন আগের টানা বৃষ্টিতে তরিয়ে গিয়েছিল। এখনও কোনো কোনো এলাকা থেকে পানি নামেনি। ভুক্তভোগিরা জানান, লাখ লাখ মানুষ বাস করলেও ডিএনডি বাঁধের অভ্যন্তরের পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এতে প্রতি বছরই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকে না। নারায়ণগঞ্জ শিমরাইল পাম্প হাউজের একজন কর্মকর্তা জানান, বৃষ্টির পর থেকে পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। ডেমরার মাতুয়াইল এলাকার মেডিকেল রোডে গিয়ে দেখা গেছে, এখনও মেডিকেল রোডটি পানির নিচে তলিয়ে আছে। মাতুয়াইল শিশু স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট থেকে একটু সামনে গেলেই দেখা যায় বিস্তীর্ণ এলাকা পানির নিচে ডুবে আছে। সেখানকার আদর্শনগরের এক বাসিন্দা জানান, সাদ্দাম মার্কেট দিয়ে যে রাস্তাটি উঁচু হওয়ায় সেটি তলিয়ে যায় নি। এলাকার মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে। তবে অলি-গলির পানির না নামায় এখনও মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে ময়লা-আবর্জনাযুক্ত জমে থাকা পানি থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। সেই দুর্গন্ধে মধ্যেই মানুষ বাস করছে। পরিবেশ দূষিত হয়ে এরই মধ্যে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। দেখা দিয়েছে চিকুনগুনিয়া। অনেকের মধ্যে এখন এই মহামারি আতঙ্ক বিরাজ করছে।
অন্যদিকে, ঢাকার জুরাইনের অনেক অংশ, মুরাদপুর, পাটেরবাগ, কোদার বাজার, বৌবাজার, নোয়াখালিপট্টি, আলমবাগ, মেরাজনগর, জোড়া খাম্বা, গ্যাসরোড, রসুলপুর, নূরপুর, জাপানীবাজারসহ অনেক এলাকার অলি-গলিতে এখনও ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত পানি জমে আছে। ভুক্তভোগিদের মতে, ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে মুরাদপুরের জিরো পয়েন্ট থেকে কোদারবাজার পর্যন্ত রাস্তাটি গত এক বছর ধরে ময়লা পানির নিচে তলিয়ে আছে। টানা বৃষ্টিতে এই রাস্তার আশপাশের সব এলাকা ডুবে গেছে। এখন বৃষ্টি নয়, ড্রেনের ময়লা পানিতে পুরো এলাকা সয়লাব। অথচ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন অধিভূক্ত এই এলাকাতেই নির্বাচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বাড়ি। নিজেকে তিনি ‘আদর্শ কাউন্সিলর’ দাবি করে থাকেন। মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা বশির উদ্দিন বলেন, কাউন্সিলর নিজেকে ক্ষমতাধর হিসাবেও দাবি করেন। অথচ এলাকার সমস্যা সমাধানে তার কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না। এটা আমাদের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
১৯৬৫-৬৮ সালে ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা থানা এলাকার ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর এলাকা নিয়ে ডিএনডি বাঁধটি নির্মিত হয়। ১৯৮৮, ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় সারা দেশ পানিতে ডুবলেও ডিএনডি বাঁধ ছিল বন্যামুক্ত। এরপর ডিএনডিতে বাড়িঘর, মিলকারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক পড়ে যায়। বর্তমানে ডিএনডি’র অভ্যন্তরে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের বসবাস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডিএনডি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ