Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকুন

কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৫ পিএম, ১০ মার্চ, ২০১৬

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং যেকোনো ধরনের দেশী-বিদেশী হুমকি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আরেকটি ডিভিশন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘দেশমাতৃকার সংবিধান ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধভাবে অভ্যন্তরীণ বা বহিঃহুমকি মোকাবিলায় আপনাদের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে’। তিনি গতকাল সকালে কক্সবাজার জেলার রামুতে নবগঠিত ১০ পদাতিক ডিভিশনের ২ পদাতিক ব্রিগেডসহ ৭টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সক্ষমতা ও নৈপুণ্য আরো বৃদ্ধির লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জাম এই বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় আমাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তের সুরক্ষায় লেবুখালীতে আরও একটি ডিভিশন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। এভাবে দ্রæত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অধিকতর যুগোপযোগী করে গড়ে তুলবো ইনশা আল্লাহ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের সম্পদ। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। তাই সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে পেশাগতভাবে আপনাদের আরো দক্ষ ও কল্যাণমুখী হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সেনা সদস্যদের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ব, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘১০ পদাতিক ডিভিশনের গঠন সম্পূর্ণ করতে আজ এই ডিভিশনে ২টি ইনফ্যান্ট্রি ব্রিগেডসহ ৭টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলিত হলো। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নবগঠিত ব্রিগেড ও ইউনিটসমূহের প্রত্যেক সদস্য দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই ডিভিশনের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের এই দিনটি অত্যন্ত আনন্দ ও পরিপূর্ণতার দিন। এক বছর আগে আমি যখন ১০ পদাতিক ডিভিশনের পতাকা উত্তোলন করি, সে সময় এখানে প্রয়োজনীয় কোন স্থাপনা ছিল না। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এই নবগঠিত গ্যারিসনের যে সম্পূর্ণ রূপ আমি দেখলাম তা আমাকে আশ্বস্ত করেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ এলাকায় সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই অঞ্চলে প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রামু সেনানিবাসে একটি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল প্রতিষ্ঠারও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু উন্নত ও পেশাদার সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেছিলেন। জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা নদী সমগ্র দেশকে তিন অংশে বিভক্ত করেছে। এজন্য সেনাবাহিনীকেও এভাবে ৩টি স্বতন্ত্র ও দক্ষ কমান্ডে নিয়োজিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা ১৯৯৬ সাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রত্যেক সদস্যের নৈতিক ও মননশীলতার বিকাশ ও পেশাগত উৎকর্ষের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরই আলোকে আমরা ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি), মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), আমর্ড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ (এএফএমসি), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর পীস সাপোর্ট অপারেশন্স এন্ড ট্রেনিং (বিআইপিএসওট), এনসিও’স একাডেমী, বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টাল সেন্টার (বিআইআরসি) প্রতিষ্ঠা করি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে পুনরায় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর জাতির পিতার ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতি বাস্তবায়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা সেনাবাহিনীর জন্য ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করি। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের নিরাপত্তা ও তদারকীর জন্য ১টি কম্পোজিট ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে।
সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে আমাদের সাফল্য বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একইভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নেও আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।’ নতুন এই ১০ পদাতিক ডিভিশনের উন্নয়নে এ ডিভিশনের সদস্যরা কঠোর পরিশ্রম করছেন এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি এরই ধারাবাহিকতায় আপনারা পেশাদারিত্বের মাধ্যমে ১০ পদাতিক ডিভিশনকে অপারেশনাল, প্রশাসনিক এবং প্রশিক্ষণে একটি অনুকরণীয় ডিভিশনে পরিণত করার এই প্রয়াস অব্যাহত রাখবেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি এবং ভারত এবং মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিজয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমুদ্র সম্পদ রক্ষা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার লক্ষ্যে সরকার রামুতে সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেছে।
এর আগে সকালে হযরত শাহজালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে রামু সেনানিবাসের প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক এবং ১০ম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারোয়ার হাসান প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। একটি সুসজ্জিত দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী ১০ম পদাতিক ডিভিশনের নির্মিত বীর সরণি, অজেয় স্মৃতি ফলক, বীরাঙ্গন বহুমুখি শেড এবং আলীকদম সেনানিবাসে মাতামুহুরী নামে একটি কম্পোজিট ব্যারাক উদ্বোধন করেন। তিনি রামু সেনানিবাসে ৪টি এসএম ব্যারাকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং পরিদর্শক বইতে স্বাক্ষর করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অবঃ) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, উর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বিগত এক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এটি দ্বিতীয়বার সফর কক্সবাজারের রামুতে। এরআগে ২০১৫ সালের ১ মার্চ তিনি কক্সবাজার সফরে আসেন এবং রামুর রাজারকুল ইউনিয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন উদ্বোধন করেন। দুই হাজার একর ভূমির উপর রামু সেনা নিবাসের কাজ এগিয়ে চলেছে।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশন ও আশপাশের এলাকা। নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে যেন উৎফুল পুরো কক্সবাজার জেলাবাসী। কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল জানিয়েছেন, এ সফর কক্সবাজারবাসীর জন্য উন্নয়নের মাইলফলক হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কক্সবাজারকে ঘিরে উন্নয়নের  মহা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তাই প্রতি বছর একবার করে তিনি কক্সবাজার সফরে আসছেন। বেলা আড়ইটার দিকে প্রধানমন্ত্রী রামু হেলিপ্যাড থেকেই সরাসরি ঢাকার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার ত্যাগ করেন।
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যটন জোরদার এবং পর্যটন নগরীর সঙ্গে বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নয়নে কক্সবাজার বিমান বন্দরকে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করতে তার সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ভ্রমণকারীরা যাতে আরো ভালো সেবা পেয়ে স্বচ্ছন্দে পর্যটন নগরীতে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত করা হবে। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ গতকাল কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার কক্সবাজার জেলার উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জেলার মহেশখালীতে ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। একই স্থানে একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা আরো বলেন, জেলার অন্যান্য এলাকার সঙ্গে মহেশখালীর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য একটি সেতু নির্মাণের সমীক্ষার কাজ চলছে। শেখ হাসিনা বলেন, এ সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে জেলায় ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী জেলায় লবণের উদ্বৃত্ত উৎপাদন সম্পর্কে বলেন, লবণ রফতানির জন্য বাজার খুঁজে বের করতে হবে। তিনি প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা এবং অন্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক বীর বাহাদুর উসৈ সিং, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও স্থানীয় সংসদ সদস্যবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হুমকি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকুন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ