পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাসান সোহেল : আমানতের তুলনায় মাত্র আড়াই শতাংশ মূলধনের মালিক হলেও জনগণের ৬ লাখ কোটি টাকা ভোগদখল করছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ৫শ’ পরিচালক। এই গুটিকয়েক মানুষ ৪০টি বেসরকারি ব্যাংকে জনগণের জমানো পুঁজির ওপর চিরস্থায়ী মালিকানার বন্দোবস্ত করে বসেছে প্রভাব খাটিয়ে।
সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে স্থায়ী করে নিচ্ছে জনগণের মূলধনের ওপর পারিবারিক কর্তৃত্ব। নিজেরা মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংক খাত থেকে ঋণের নামে তুলে নিয়েছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা যা ফিরে আসার নিশ্চয়তা নেই। কারণ তারা এই ঋণ কখনোই শোধ করছে না, নতুন ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ চালু রাখছে। বেনামী ঋণের মাধ্যমে এই লোকগুলো খেয়ে ফেলছে জনগণের পুঁজি। সবাই মিলে আড়াই শতাংশ পুঁজির মালিক হলেও বাকি সাড়ে সাতানব্বই শতাংশ অর্থের মালিক সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকের ওপর ন্যূনতম কর্তৃত্ব রাখারও সুযোগ কেড়ে নিচ্ছে আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে। এতদিন ৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক হলে যে কোন ব্যক্তি ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার সুযোগ থাকলেও আইন পরিবর্তনের মাধ্যমে সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন (সংশোধন) ২০১৭ সংসদে পাশ হলে কেউ ৫০ ভাগ শেয়ারের মালিক হলেও কখনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না। পাশাপাশি উদ্যোক্তারা টানা ৯ বছর পরিচালক পদে থাকতে পারবেন। এক পরিবারের পরিচালক থাকতে পারবেন চারজন। এসব বিধান রেখে গত ৮ মে আইনের সংশোধনী মন্ত্রীসভা অনুমোদন করেছে যা পাশ হওয়ার জন্য সংসদে উত্থাপনের অপেক্ষায় আছে। এমনকি এই আইনের মাধ্যমে পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বের অনাপত্তিপত্রও নিতে চান না বেসরকারি ব্যাংকের এই উদ্যোক্তারা। বর্তমান আইনে এক পরিবার থেকে সর্বোচ্চ দু’জন সদস্য একটি ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন। আর তিন বছর করে পরপর দুই মেয়াদে মোট ছয় বছর পরিচালক থাকতে পারেন। এরপর তিন বছর বিরতি দিয়ে আবারও পরিচালক হতে পারেন।
নতুন ব্যাংক আইনের বিরোধীতা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকে যে পরিচালন মূলধন আছে তার মাত্র ১০ শতাংশ পরিচালকদের, বাকি অর্থ আমানতকারীদের। এ জন্য ১০ শতাংশ মূলধনের মালিকদের সব সময় পরিচালক থাকার প্রয়োজন নেই। ভারতের আইনেও দুই মেয়াদের বেশি থাকার সুযোগ নেই। ‘নতুন ব্যাংক আইন পাশ হলে ব্যাংকিং খাত কয়েকটি পরিবারের হাতে চিরস্থায়ীভাবে জিম্মি হয়ে যাবে’ বলে উল্লেখ করেন সাবেক এই ব্যাংকার।
আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টদের অনেকেই আলাপকালে বলেছেন, বেসরকারি ব্যাংকে মূলধনের প্রকৃত যোগানদাতা সাধারণ জনগণ। এর বাইরে টায়ার-১ ও টায়ার-২ এর জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনের যোগান দিয়ে আসছে রাষ্ট্রায়ত্ব আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ এই ব্যাংকগুলো ৫শ’ ব্যক্তির পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তারা জনগণের মূলধন খেয়ে ফেললেও দোষ হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোর ওপর।
আলাপকালে একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলোকে সরকার যে বাজেট সহায়তা দেয় সেটা মূলধন থেকে দেয় না। সরকার আয়ের একটা অংশ দেয় তার প্রতিষ্ঠানগুলোর উন্নতির স্বার্থে, যেভাবে পিতা তার সন্তানের জন্য ব্যয় করে। আর এর বিনিময়ে এই ব্যাংকগুলো সরকারকে শতাধিক সেবা বিনামূল্যে প্রদান করে। এই সেবাগুলোর বিনিময় মূল্য সরকারের কাছ থেকে নিলে বাজেট সহায়তার কয়েকগুণ বেশি পাওনা দাঁড়াবে ব্যাংকগুলোর। তাই সরকারের কাছ থেকে যে বাজেট সহায়তা নেয় সেটা তার প্রাপ্য অধিকার। আর সরকারি ব্যাংকগুলো মূলধন ভেঙ্গে খাচ্ছে না। এই বক্তব্যের যুক্তি হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের এক শীর্ষ নির্বাহী উদাহরণ টেনে বলেন, একটি ব্যাংককে শুরুতে সরকার ২ হাজার টাকা মূলধন দেওয়ার পর সেটা থেকে ব্যবসা করে যদি ৩ হাজার টাকা মুনাফা করে, এরপর সে ১ হাজার টাকা লোকসান করে ফেললে সেটা কী মূলধন ভেঙ্গে খাওয়া হবে? বরং বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকরা জনগণের মূলধন খাচ্ছেন। কারণ সেখানে আমানতকারীরা যা জমা করছেন তা তাদের কষ্টার্জীত পুঁজি।
অপরদিকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) তাদের পদ টিকিয়ে রাখতে অর্থমন্ত্রীর কাছে ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনে সাপোর্ট দিলেও একাধিক এমডি এর বিরোধীতা করে জানান, সরকারি ব্যাংক খারাপ অবস্থায় পড়ছে সরকার নির্দেশিত কথা শুনতে গিয়ে। আর বেসরকারি ব্যাংক খারাপ অবস্থায় পড়ছে পরিচালকদের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তে। দীর্ঘদিন ব্যাংকে পরিচালক হিসেবে থাকলে অনিয়ম যেমন বাড়বে, তেমনি প্রভাব বিস্তার করা সহজ হবে। এতে আরও বিপাকে পড়বে ব্যাংকগুলো। একই সঙ্গে একই পরিবারের চারজন পরিচালক থাকার প্রথা চালু হলে ‘পারিবার কেন্দ্রিক ব্যাংকিং প্রথা’ চালু হবে। এছাড়া পরিচালক হতে ব্যাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তিপত্র প্রথা বাতিল প্রসঙ্গে এমডি’রা বলেন, ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের হাতে এই ক্ষমতা না রাখা হবে ব্যাংকিং খাতে ‘সুশাসনের’ অন্তরায়।
“ব্যাংক আমানতের মাত্র তিন শতাংশ এর উদ্যোক্তা বা মালিকদের। বাকি ৯৭ শতাংশ অর্থ আসলে সাধারণ মানুষের”- এমন বক্তব্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের কর্মকান্ডে ক্ষুব্ধ এই গবেষক বলেন, ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের দায়িত্ব যেখানে কেবল দিকনির্দেশনা দেওয়া, সেখানে আমাদের দেশে পরিচালনা পরিষদ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনাগত দিকে বেশি মনোযোগ দিতে আগ্রহী। তাদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি ঋণ কার্যক্রমে। কাকে ঋণ দেওয়া হবে, কত ঋণ দেওয়া হবে- এগুলো যেন তাদের মূল কাজ। এতে দেখা যায়, পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবই বেশি ঋণ পাচ্ছে। আবার এক ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্য আরেক ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। এটা আসলে পারস্পরিক। যেহেতু নিজের ব্যাংক থেকে নিতে পারবেন না তারা, পরস্পরের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে একে অপরের ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। এটিকে ‘পরস্পরের পিঠ চুলকাচুলকি’ সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার নজিরও রয়েছে আমাদের দেশে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকের উদাহরণ টেনে আহসান এইচ মনসুর বলেন, “আন্তর্জাতিকভাবে নামকরা বিভিন্ন ব্যাংকের উদ্যোক্তা বা মালিকের নাম সাধারণ মানুষ জানে না। কারণ মুখ্য কেউ থাকে না। সবাই শেয়ারহোল্ডার। সব শেয়ারহোল্ডারের ব্যাংক সেগুলো। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যাবে, প্রায় প্রত্যেক বেসরকারি ব্যাংকের মালিকের নাম সাধারণ মানুষ জানে। শুধু তাই নয়, সাধারণভাবে বলা হয়ে থাকে ‘ওই ব্যাংক অমুকের’। ব্যাংকে ব্যবস্থাপক ও কর্মী নিয়োগেও অনেক ক্ষেত্রে এসব নামের প্রভাব থাকে। এটাই আমাদের ব্যাংকিং সংস্কৃতি এবং এটা বিপজ্জনক।”
ব্যাংক পরিচালকদের চাহিদামতো নতুন ব্যাংক আইন সংসদে পাশ হলে পুরো খাত কিছু পরিবারের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে- এমন বক্তব্য ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের। তিনি বলেন, “এতে আর্থিক খাতে নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। ব্যাংকের নীতিগত বিষয়ে মালিকদের প্রভাব আরও বাড়বে; যা পুরো খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের অন্তরায় হবে।”
‘পারিবারিক নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করার জন্যই বেসরকারি ব্যাংকগুলো শেয়ারবাজারে আনা হয়েছিল’ উল্লেখ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান বলেন, ব্যাংক আইন সংশোধনের মাধ্যমে আবার পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে, ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির কোনো মানে হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।