পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৩৭ বছরে সুন্দরবনের ৭০টি বাঘের মৃত্যু বাঘের সংখ্যা জানতে আরো দু’ বছর লাগবে
আবু হেনা মুক্তি, খুলনা থেকে : দ্যা কিং অব সুন্দরবন বা বাঙালী জাতির শৌর্য-বীর্যের প্রতীক রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনে এখন বিপন্নের তালিকায়। বাঘের আশ্রয়স্থলে হস্তক্ষেপ, চোরা শিকারীদের উপদ্রপ, খাদ্যের অভাব এবং খাদ্য শৃঙ্খলে প্রভাব, বাঘ-মানুষ দ্ব›দ্ব, সুন্দরবনে জলবায়ু পরির্তনের প্রভাব, সর্বোপরি বাঘের প্রতি জীঘাংসা পরায়ন মনোভাব এবং বনবিভাগের গুরুত্বহীনতায় অনিন্দ্যসুন্দর হিংস্র এই প্রাণীটিকে বিপন্ন করে তুলেছে। তবে গত ৩৭ বছরে চোরা শিকারী ও বনদস্যুদের হামলা, গ্রামবাসীর পিটুনি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সুন্দরবনের ৭০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বাঘের হামলায় প্রাণ হারিয়েছে দুই শতাধিক মানুষ।
এদিকে এবারও “বাঘ আমাদের গর্ব, বাঘ রক্ষা করব” বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ব বাঘ দিবস উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে গতকাল শনিবার সকালে বাগেরহাট শহীদ মিনার পাদদেশ থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্র বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন শেষে জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে এসে শেষ হয়। কিন্তু বাঘ প্রেমিকরা এ আয়োজনকে সুন্দরবন উপকুলীয়াঞ্চলে বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্পের মধ্যে বছর ব্যাপী গণসচেতনতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। পরে দুপুরে বাগেরহাট জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, সুন্দরবন সুরক্ষায় বর্তমান সরকার বিদেশীদের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সুন্দরবন না থাকলে বাগেরহাট-খুলনা নয় মঠবাড়িয়া ও গোপালগঞ্জও থাকবে না। সুন্দরবনের বাঘের কমছে না সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুন্দরবনের বাঘ অনেক নিরাপদে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মোহাম্মদ সফিউল আলম চৌধুরির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তৃতা করেন, সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসতিয়াক আহমদ ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুস সামাদ।
সূত্রমতে, বাঘের চামড়া পাচার ও উচ্চমূল্যে বিক্রির উদ্দেশ্যে চোরা শিকারীরা নির্বিচারে বাঘ মেরে ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনের বৈরী পরিবেশ বাঘের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সর্বোপরি সরকারের উদাসীনতায় প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না। বন্যসম্পদ রক্ষার করার অঙ্গীকার মেনে নিশ্চিত করা হচ্ছে না বাঘের নিরাপদ এবং উপযুক্ত আবাসস্থল। এসব কারণে গত ১৫ বছরে সুন্দরবনে ৮৬ শতাংশ বাঘ কমেছে। বাঘ কমে যাওয়ার এই সংখ্যা এতোটাই উদ্বেগজনক যে, আগামীতে বাংলাদেশে বাঘ বিলুপ্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সুন্দরবন একাডেমির উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম খোকন দাবি করেছেন, ২০০১ সালে সুন্দরবনে বাঘের অস্তিত্ব ছিল ৪৪০টি, ২০১৬ সালে সে সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ১০৬। এই সংখ্যা বর্তমানে ‘ডাবল ডিজিটে’ রূপ নিয়েছে। অর্থ্যাৎ ১০০-এর নীচে নেমে গেছে। যদিও সর্বশেষ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে ২০১৫ সালে বনবিভাগ থেকে জানানো হয়, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা মাত্র ১০৬। ২০০৪ সালে বন বিভাগের জরিপে পায়ের ‘ছাপ’ গণনা করে বলা হয়, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ৪৪০। তার মধ্যে পুরুষ ১২১টি, বাঘিনী ২৯৮টি ও বাচ্চা ২১টি।
বনবিভাগের এক সূত্র মতে, সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গলের ‘হোম রেঞ্জ’ মোটামুটিভাবে ১৪-১৬ বর্গকিলোমিটার। অর্থাৎ একটি বাঘ স্বাধীন প্রাণী হিসেবে উল্লেখিত এলাকার মধ্যে নিজের আধিপত্য বিস্তার করে যেখানে অন্য কোন বাঘের বা প্রাণীর আধিপত্য বা হস্তক্ষেপ চলে না। সূত্র বলছে, বিশ্বের অন্যান্য এলাকার বাঘের হোম রেঞ্জ তুলনায় সুন্দরবনের ১৪-১৬ বর্গকিলোমিটারের ‘হোম রেঞ্জ’ খুবই ছোট। নেপালে বাঘের হোম রেঞ্জ ২৫-৩০ বর্গকিলোমিটার। রাশিয়ায় সাইবেরিয়ান বাঘের হোম রেঞ্জ ৪০০ বর্গকিলোমিটার। এই বিবেচনার সুন্দরবনের হোম রেঞ্জ ছোট হওয়ায় ধারণা করা হয়, বিশ্বে সুন্দরবনে বাঘের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশী এবং তা’ মোটামুটি স্থিতিশীল।
অপরদিকে, সুন্দরবনে আট শতাধিক ক্যামেরায় তোলা ছবি পর্যালোচনা করে বাঘের সংখ্যা নিরুপণের চেষ্টা চলছে। প্রকৃত বাঘের সংখ্যা জানতে আরো দু’ বছর লাগবে বলে জানানো হয়েছে। বন কর্মকর্তারা জানান, এর মাধ্যমে সুন্দরবনে বাঘের হ্রাস-বৃদ্ধি, চলাচলের ঘনত্ব এবং জীবনাচরণের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। প্রথম ধাপের সার্ভে শেষে শুরু হবে খুলনা, শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের কাজ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনার কাজ মার্চে শেষ হয়েছে। গত বছরের ১ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে এ পদ্ধতিতে সুন্দরবনে বাঘ পরিবীক্ষণ শুরু হয়। সুন্দরবনের শুধুমাত্র সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪০২টি স্টেশনে গাছ ও খুঁটির সঙ্গে ৮০৪টি ক্যামেরা বসিয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার গণনার কাজ করা হয়।
বাঘ মনিটরিং সার্ভে প্রকল্পের পরিচালক ও খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে ছবি তোলার কাজ শেষ হয়েছে। এখন তা ল্যাবে সফটওয়ারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অ্যানালাইসিস করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা এসব ছবি পর্যালোচনা করছেন। এর মাধ্যমে সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘের বিচরণ ও ঘনত্ব সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। তবে খুলনা, শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে সার্ভে কাজ সম্পন্ন হলে গোটা সুন্দরবনে বাঘের মোট সংখ্যা জানা সম্ভব হবে। এ কাজ শেষ করতে আরও প্রায় দু’বছর সময় লাগবে।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বশির আল মামুন জানান, বন বিভাগের হাতে থাকা তথ্য মতে, এই অঞ্চলে ছয়টি শিকারী দল বাঘ হত্যায় তৎপর রয়েছে। ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চোরা শিকারী ও বনদস্যুদের হামলা, গ্রামবাসীর পিটুনি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সুন্দরবনের ৭০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।