পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : পদত্যাগ করলেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে অযোগ্য ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। গতকাল পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি মামলায় নওয়াজের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার কিছু সময় পর তিনি পদত্যাগ করেন। এ নিয়ে তিন বারের প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় দফা মেয়াদপূর্তির আগেই ক্ষমতা হারালেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো নওয়াজের পদত্যাগের খবর নিশ্চিত করেছে।
বিচারপতি আসিফ সাইদ খোসার নেতৃত্বে সুপ্রিমকোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে রায় ঘোষণা করেন। সর্বোচ্চ আদালত বলছে, পার্লামেন্ট এবং আদালতের প্রতি সৎ ছিলেন না প্রধানমন্ত্রী, তিনি দায়িত্ব পালনে অযোগ্য বিবেচিত হয়েছেন। আমিরাতভিত্তিক অফশোর কোম্পানি এফজেডই-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা গোপন করার কারণে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।
রায় ঘোষণার খানিক বাদেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে একটি নোটিশ জারি করা হয়। জারিকৃত নোটিতে বলা যায়, সর্বোচ্চ আদালতের রায় তাকে অযোগ্য ঘোষণা করলেও তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তবে তিনি পদত্যাগ করেছেন।
এ মামলায় শুনানি হয়েছিল আদালতের দুই নম্বর কক্ষে। রায় ঘোষিত হয়েছে এক নম্বর কক্ষে। পাকিস্তানের স্থানীয় সময় গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রায় ঘোষণার কথা থাকলেও তা আধ ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয়। বেলা ১২টার খানিক পরে বিচারপতি আসিফ সাইদ খোসা রায় ঘোষণা করেন। সর্বসম্মতিক্রমে ঘোষিত রায়ে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ পার্লামেন্ট ও আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি তার দফতরের জন্যও উপযুক্ত বলে গণ্য হননি’। সংবাদমাধ্যম জানায়, এ রায়ের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার পদ ধরে রাখার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছেন।
তদন্তে বেরিয়ে আসা সব তথ্য-প্রমাণাদি ছয় সপ্তাহের মধ্যে রেফারেন্স আকারে অ্যাকাউন্টিবিলিটি কোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। পাকিস্তানের শীর্ষ দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটি ব্যুরো জেআইটি’র (যৌথ তদন্ত দল) তদন্তের ভিত্তিতে ওই রেফারেন্স তৈরি করে অ্যাকাউন্টিবিলিটি কোর্টে পাঠাবে। ওই তথ্য-প্রমাণাদির ওপর ভিত্তি করে নওয়াজের পাশাপাশি তার মেয়ে মারিয়াম, ছেলে হাসান ও হুসেন নওয়াজ, জামাতা ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সফদার এবং অর্থমন্ত্রী ইশাক দারের বিরুদ্ধেও মামলা হবে। ৬ মাসের মধ্যে বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ওই মামলার চূড়ান্ত রায় দিতে বলা হয়েছে অ্যাকাউন্টিবিলিটি আদালতকে। সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কিনা বিচারপতিদের একজন তা পর্যবেক্ষণ করবেন। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইশাক দারকেও গতকাল তার পদের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং রাঘববোয়ালদের আর্থিক কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস করে সাড়া ফেলে আলোচিত ‘পানামা পেপারস’। ফাঁস হওয়া ওই গোপন নথিতে অর্থ পাচারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ছেলের নাম উঠে আসায় নিজ দেশে চাপের মুখে পড়েন তিনি। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালতে গড়ায়। বিরোধী দলগুলো থেকে তার পদত্যাগ দাবি করা হয়। ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর নওয়াজ শরীফ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে অবৈধ বিনিয়োগের অভিযোগ তদন্তে একটি কমিশন গঠন করে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। বহুল আলোচিত পানামা পেপারস ফাঁসের পর বিরোধী দল পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই), জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত দেয় আদালত।
গত এপ্রিলে বিরোধী দলগুলোর এ সংক্রান্ত মামলায় বিভক্ত রায় দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। পাঁচ সদস্যের বিচারক প্যানেলের মধ্যে তিনজন নওয়াজের পক্ষে এবং দু’জন তার বিরুদ্ধে রায় দেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারক পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির অভিযোগ থেকে সাময়িক নিষ্কৃতি পেয়ে যান নওয়াজ। পাঁচ বিচারপতি আসিফ সায়্যিদ খোসা, গুলজার আহমেদ, এজাজ আফজাল খান, আজমত সায়্যিদ ও ইজাজুল আহসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। তাদের মধ্যে বিচারপতি খোসা ও গুলজার নওয়াজ শরীফের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। বাকি তিন বিচারপতি যৌথ তদন্ত দল গঠনের পক্ষে রায় দেন। আর সেই দলের তদন্তের পর এবার নতুন রায় ঘোষিত হলো নওয়াজের বিরুদ্ধে।
পাকিস্তানে কোনও বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী কখনও পাঁচ বছরের মেয়াদ পুরো শেষ করতে পারেননি। তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া নওয়াজের মেয়াদ শেষ হতে আর এক বছরেরও কম সময় বাকি ছিল। আর সেই সময় সময় শেষ হওয়ার আগেই তার বিদায় নেওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।
নওয়াজের ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, এটা নওয়াজকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র। ২০১৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ। এর আগের দুইবারও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি তিনি। এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান নওয়াজ। প্রথমবার ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ এবং দ্বিতীয়বার ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতা ছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালেও দুর্নীতির দায়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয় নওয়াজকে।
নওয়াজ পদত্যাগ করলেও তার দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ক্ষমতায় থাকছে। ইতোমধ্যে সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিয়া নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ শরীফকে নয়া প্রধানমন্ত্র নিয়োগ করা হয়েছে। আর দলটির মুখপাত্র জানিয়েছেন, আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে সব ধরনের আইনি ও সাংবিধানিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে রায়ে নওয়াজ শরীফকে কোন পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণার পরপরই একদিকে তার সমর্থকদের মধ্যে যেমন হতাশা দেখা দেয় তেমনি বিরোধীরা উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। গতকাল আদালত প্রাঙ্গণে অনেক মানুষকে বিচারপতিদের রায়কে উল্লাস করে স্বাগত জানাতে দেখা গেছে। বিভিন্ন খবরে জানা যায়, তারা রাস্তায় সেøাগান দিয়ে আনন্দ করে এবং মিষ্টি বিতরণ করে।
প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা ইমরান খানের দল পাকিস্তান তাহরিকে ইনসাফ (পিটিআই)-এর ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মাহমুদ কুরেশি দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক দিন’ বলে বর্ণনা করে বলেন, তদন্তকারীরা ‘প্রবল চাপ উপেক্ষা করে ন্যায় বিচারের পক্ষে কাজ করেছেন’।
রায় ঘোষণার সময় আদালত ঘিরে ৩ হাজার অতিরিক্ত সশস্ত্র পুলিশ এবং আধা-সামরিক ‘পাকিস্তান রেঞ্জার্স’ মোতায়েন করা হয়। যে নাটকীয় ঘটনা মাসের পর মাস ধরে গণমাধ্যমে খবরের খোরাক জুগিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সমর্থন এনেছে এবং তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরাও হয়েছে, এই রায়ের মাধ্যমে সেই নাটক চরম পর্যায়ে চলে গেল।
এই বিভেদ মূলত দলীয় ভিত্তিতেই প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু এ’সব উত্তপ্ত অভিযোগের মাঝে অনেকেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। তবে নওয়াজ শরীফই প্রথম প্রধানমন্ত্রী নন, যাকে পানামা পেপারসে তথ্য ফাঁসের ফলে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আইসল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী এবং তার স্ত্রী একটি অফ-শোর কোম্পানিতে লাখ লাখ ডলারের বিনিয়োগ লুকিয়ে রেখেছিলেন বলে পানামা পেপারসে তথ্য ফাঁস হলে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সূত্র : বিবিসি, ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।