Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে ডিসিরা ক্ষুব্ধ

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন

| প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : প্রতি বছর সরকারি বরাদ্দ নিয়ে দেশের সব জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মেরামত ও সংস্কার এবং নদী খনন করা হয়। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। তারপরও কিভাবে বাঁধ ভেঙে অসময়ে বন্যা হচ্ছে। এটা আমাদের জানা নেই। বাঁধ মেরামত ও সংস্কার এবং নদী খননে ব্যাপক দুনর্ীিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্ষা মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ মেরামত ও সংস্কার কাজ গুণগতমান সন্তোষজনক হয় না। তাদের দুর্নীতি নিয়ে জেলা প্রশাসকদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কথা শুনতে হয়। সে কারণে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলা প্রশাসকরা। সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভৌত কাজ বর্ষা মৌসুমে না করে শুষ্ক মৌসুমে করার প্রস্তাব দিয়ে এসব কাজে ডিসিদের সম্পৃক্ত করতে দাবি তুলেছেন। এছাড়া হাইকোর্ট অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করলেও নির্বাহী হাকিমদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পক্ষে বলেছেন জেলা প্রশাসকরা। গতকাল বুধবার ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন এসব দাবি করেন জেলা প্রশাসকরা। সিভিল প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিদেশে শান্তি মিশনের কাজের সুযোগ দেয়ার ডিসিদের প্রস্তাব করেছেন নারায়াণগঞ্জের জেলা প্রশাসক। দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও পঞ্চগড় জেলার ডিসিরা বলেন, উত্তরাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানি মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারেরর কারণে পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এ জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, নদী, খাল ও পুকুর খনন ও নদীতে রাবার ড্যাম স্থাপন করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় জেলা পরিষদ, এলজিইডি, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ও কাজের গুণগত মান আরো বৃদ্ধিকল্পে ডিডিএলজিকে এসব প্রকল্পের পরিদর্শনের ক্ষমতাও চান। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, তিস্তা ও ধরলা নদীতে বন্যার সময় মারাত্মক ভাঙন দেখা দেয়।
প্রতি বছর নদীভাঙনের ফলে হাজার হাজার জনসাধারণের ঘরবাড়ি, আবাদি জমি হারিয়ে যায়। এই দুই নদীর ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। রাজশাহী, কুড়িগ্রাম. মাগুরা, নড়াইল, বান্দরবান ও লালমনিরহাটের ডিসিরা জানিয়েছেন, কৃষিকাজের জন্য গভীর নলক‚পের মাধ্যমে ভ‚গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করার কারণে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে কৃষিকাজে পানির সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। এ জন্য দেশের নদীগুলো খনন করার প্রয়োজন। সিলেট জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, সীমান্তের ওপার থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি হয়। ফলে ফসল ও জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কক্সবাজার জেলার ডিসি জানিয়েছেন, বাস্তব কারণে বর্ষা মৌসুমে সম্পাদিত কাজের গুণগতমান সন্তোষজনকভাবে করা যায় না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভৌত কাজ বর্ষা মৌসুমে না করে শুষ্ক মৌসুমে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এসব কাজের সময় ডিসিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। হাসপাতাল, এতিমখানা, সরকারি শিশু পরিবার প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে এবং বিভিন্ন স্থানে দাবিদারবিহীন শিশু পওয়া যায় পারিবারিক প্রশান্তির জন্য ও শিশুদের লালন-পালনের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে অনাথ শিশুদের পারিবারিক আশ্রয়স্থল নির্ধারণের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করার দাবি জানিয়েছেন বরিশালের ডিসি। গতকাল সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে জেলা প্রশাসক সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। প্রতিটি অধিবেশনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সভাপতিত্ব করেন। দ্বিতীয় দিন ৮টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এবং সচিব আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। তারা প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতি জানতে চান এবং মন্ত্রণালয়ের বাধাগুলো নিরসনের দাবি জানান। এরপর প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের সাথে বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করেন ডিসিরা। নাম প্রকশে অনিচ্ছুক এক জেলা প্রশাসক ইনকিলাবকে বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় জেলা পরিষদ, এলজিইডি, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কাজের গুণগতমান বৃদ্ধি করতে ডিসিদের সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি চান ডিসিরা
হাইকোর্ট অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করলেও নির্বাহী হাকিমদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পক্ষে বলেছেন জেলা প্রশাসকরা। বুধবার ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কার্য অধিবেশনে তারা দাবি জানালে এতে সায় দেন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও। বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের বিপরীত অবস্থানের মধ্যে গত ১১ মে দেয়া এক রায়ে নির্বাহী হাকিম বা ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। তবে এ বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়ে মন্ত্রীকে প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত অব্যাহত রাখার বিষয়ে ডিসিদের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব ছিল, এ বিষয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, অবকোর্স। সরকার সব সময় অনেক বিষয় বিভিন্ন সংস্থা দেয়া হয়, সেগুলো সরকার বিবেচনা করে, সে ব্যাপারে তারা সমাধান করে। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জাতিসংঘ মিশনে পাঠাতে ডিসিদের প্রস্তাব ছিল, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না- এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘লিখিত প্রেস ব্রিফিং দিয়ে জানানো হবে। বিভাগীয় কমিশনার পদটি প্রথম শ্রেণী করার বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি। বরগুনার ইউএনওকে নাজেহালের বিষয়ে বৈঠকে কোনো কথা বলেননি আশরাফ। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, (বরিশাল ও বরগুনা ডিসি) বদলি করা রুটিন কাজ। জেলা প্রশাসকদের জন্য রাজনৈতিক কোনো নির্দেশনা ছিল কি না- এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে আশরাফ বলেন, এটা তো পলিটিক্যাল বিষয় না। যাদের সঙ্গে কথা বললাম, তারা সবাই সিভিল সার্ভেন্ট। তারা কোনো পলিটিক্যাল পার্টির না, সাংবাদিক কিংবা মিডিয়ারও না। মাঠ পর্যায়ের এই কর্মকর্তাদের সঙ্গে বার্ষিক মতবিনিময়ের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, গতবার কি অ্যাচিভ করলাম, আগামীতে কী প্রকল্প গ্রহণ করলাম, মাঠ পর্যায়ের যারা এখানে আসেন তাদের কাছ থেকেও মতামত নেয়ার সুযোগ হয়। সরকারের সাথে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সেতু তৈরি করা হয়।
আগামী বছর এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না : মন্ত্রী মোশাররফ রাজধানীর জলাবদ্ধতা অবসানে পরিকল্পনা নেয়ার কথা জানিয়ে আগামী বছর এবারের মতো দুর্ভোগে পড়তে হবে না বলে নগরবাসীকে আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শ্রাবণের মাঝামাঝিতে রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে পানিবদ্ধতায় জনদুর্ভোগের মধ্যে গতকাল ডিসি সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে এই আশ্বাস দেন তিনি। মোশাররফ বলেন, আমরা সার্ভে করে দেখেছি, ঢাকা শহরের প্রায় ৪৬ খালের মধ্যে ১৮টি খালের উন্নয়ন করতে হবে। আমি ওয়াসাকে বলেছি, যত বেশি বৃষ্টি হোক না কেন, যাতে তিন ঘণ্টার মধ্যে পানি চলে যায়। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মোশাররফ বলেন, আজকের পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। আমি প্রমিজ করছি, সামনের বছর এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না।
নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে ডিসিদের নির্দেশ বাণিজ্যমন্ত্রীর : নিত্যপণ্যের দাম সব সময় স্বাভাবিক ও মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশনা দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কার্য-অধিবেশন শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের একথা বলেন। তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতি হলেও ভোক্তা অধিদফতর আছে, ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে। জেলায় জেলায় বাণিজ্যকেন্দ্র আছে সেখানে গিয়ে নতুন ট্রেড লাইসেন্স করে যেন ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ