দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
আতিকুর রহমান নগরী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
বি.দ্র: উপরোক্ত যাকাতের হিসাবানুযায়ী আপনার নিকট যত লক্ষ টাকা, যত হাজার টাকা, যত শত টাকা বা যত টাকা-পয়সা থাকবে আপনি এর যাকাত বের করতে হিমশিম খেতে হবেনা।
মুসলমান ভাই-বোনেরা! কৃপণতা করবেন না। সম্পদ আপনার একার নয়। কৃপণ ব্যাক্তি আল্লাহ তা’লার শত্রæ। দানশীল ব্যাক্তি আল্লাহর প্রিয়পাত্র।
ব্যবসায়ী মালের যাকাতের মাসআলা: ব্যবসার মাল যদি নেসাব পরিমাণ হয় অর্থ্যাৎ সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রোপা অথবা সমপরিমাণ নগদ অর্থ হয় তবে সে মালের উপর যাকাত ফরয। শতকরা আড়াই টাকা হিসাবে যাকাত আদায় করতে হবে।
যাকাত সংক্রান্ত মাসআলা: সোনা হোক বা রূপা, সবধরনের ব্যবসায়ী মালে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে বিক্রয় মূল্যই গ্রহণযোগ্য ক্রয় মূল্য নয়। যেমন কারো নিকট যাকাতের যা মাল বর্তমানে আছে তার ক্রয় মূল্য ১ লক্ষ টাকা। কিন্তু বিক্রয় মূল্য ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। উক্ত মালের ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার উপরই যাকাত ওয়াজিব।
যাকাত প্রদানের স্থান সমূহ: মিসকিনকে যাকাত প্রদান করতে হবে। মিসকিন ফকির বলতে সেসব মুসলিম নর-নারী বুঝায় যাদের নিকট জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি যেমন: অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা নেই অথবা আছে তবে তা প্রয়োজন মেটাবার নয়।
ঋণগ্রস্থ মানুষ যার নিকট ঋণ পরিশোধ করার উপায় নেই। সেসব নিস্বঃ নওমুসলিম যাদের মন জয় করা মুসলমানদের দরকার। আল্লাহর পথের মুজাহিদগন যারা দুস্থ এবং নিঃস্ব হওয়ার কারনে জিহাদে অংশগ্রহণ থেকে বিরত। অথবা সেসব হাজীগন যাদের টাকা-পয়সা ও পাথেয় শেষ হওয়ার কারনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করতে অপারগ।
মাসআলা: যাকাতের এই খাত সমূহ ব্যতিত অন্যস্থানে ব্যয় করা বৈধ হবেনা। যেসব দ্বীনি মাদ্রাসা গুলোর ‘লিল্লাহ ফান্ড তথা গরীব ফান্ড’ রয়েছে তাতে যাকাতের অর্থ দেয়া জায়েয অন্যথায় জায়েয হবেনা।
মাসআলা: যাকাতের টাকা দিয়ে মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জিন, মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী, হাসপাতালের ডাক্তার এবং অন্যান্য কর্মচারীবৃন্দের বেতন/ভাতা আদায় করা জায়েয হবে না। (জাওয়াহিরুল ফাতওয়া ১ম খন্ড হতে সংকলিত)
যাকাত ফরযের দার্শনিক ভিত্তিঃ যাকাত ইসলামের ৩য় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। নামাজের পরেই যাকাতের স্থান। নামাজ হল শারিরীক ইবাদত যা ধনী-গরীব নির্বিশেষে সকল মুসলমানের উপর ফরয। আর যাকাত হল আর্থিক এবাদত যা কেবল নেসাব পরিমাণ মালের অধিকারী ব্যক্তির উপর ফরয।
ইসলামী শরিয়ত ধনীদের জন্য যাকাতকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফরয রূপে নির্দ্দিষ্ট করেছে। যাতে নামাজ সহ অন্যান্য শারিরীক এবাদতের মত এই আর্থিক এবাদত দ্বারা ঈমানে সজিবতা, আত্মার পরিচ্ছন্নতা এবং আল্লাহর নেয়ামতের শোকর গোজারীর প্রবণতা জাগে এবং তদ্দারা আল্লাহর নেকট্য অর্জিত হয়, তাঁর দয়াদান আরও বৃদ্ধি পায়। ইসলাম যাকাতের বিধান প্রবর্তন করে। ধনী ও গরীব লোকের মধ্যে এমন এক সামঞ্জস্য স্থাপন করেছে যে, অবস্থাপন্ন মুসলমানগণ যদি সামগ্রিকভাবে যাকাত আদায় করে, তবে মুসলমান সমাজে একদিকে লাগামহীন পঁজিবাদের কবর রচনা হয়, আর অন্যদিকে ক্ষুদার্ত, বস্তুহারা মানুষদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। ফলে মানব জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে এমন এক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয় যাতে বর্তমান যুগের শ্রণীগতদ্বন্দ সংঘাতের অস্তিত্বই বাকি থাকে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।