পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯১% : জিপিএ-৫ ৩৭ হাজার ৯৬৯ : শীর্ষে কারিগরি বোর্ড : কুমিল্লা বোর্ডে অর্ধেক ফেল : কমেছে পাসের হার : জিপিএ-৫ : শতভাগ পাসের প্রতিষ্ঠান
স্টাফ রিপোর্টার : চলতি বছর এইচএসসি, আলিম ও সমমানের ফলাফলে কমেছে পাসের হার, জিপিএ-৫ ও শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। বেড়েছে শূণ্য পাস করা প্রতিষ্ঠান। ফলাফলের সব সূচকেই অবনতি হয়েছে এবার। আগের বছরের তুলনায় কমেছে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ও পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। সার্বিকভাবে দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থী। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৫৮ হাজার ২৭৬ জন। এবার পাসের হার কমেছে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ কমেছে ২০ হাজার ৩০৭ জন।
পাসের হার, জিপিএ-৫ এর সংখ্যা কমার সাথে সাথে এবার কমেছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবং বেড়েছে শূণ্য পাসের প্রতিষ্ঠান। এবার ১০টি শিক্ষা বোর্ডেই শতভাগ পাস করেছে ৫৩২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতবছরের তুলনায় এই সংখ্যা কমেছে ৩১৬টি। ২০১৫ সালেও শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান ছিল এক হাজার ১৩৩ টি। একজনও পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা রয়েছে ৭২টি। গতবারের তুলনায় এই সংখ্যা বেড়েছে ৪৭টি। গত কয়েকবছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ফলাফলের শীর্ষে মাদরাসা বোর্ড থাকলেও এবার ছন্দপতন হয়েছে। চলতি বছর প্রকাশিত ফলাফলে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এছাড়া ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে কুমিল্লা বোর্ডে। এই বোর্ডে অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। এই বোর্ডে এবার পাসের হার ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৬৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। স্বাভাবিকভাবে সার্বিক ফলাফলে সবার নিচে রয়েছে কুমিল্লা বোর্ড।
পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, উত্তীর্ণ, জিপিএ-৫ এবং অনুত্তীর্ণের সংখ্যায় ছাত্ররা বেশি হলেও গড় পাসের হার বেশি ছাত্রীদের। সার্বিক ফলাফলে ছাত্রদের পাসের হার ৬৭ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী বেশি হওয়ায় ছাত্ররা জিপিএ-৫ পেয়েছে বেশি। ৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৭৫ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাস করেছে ৪ লাখ ২২ হাজার ৩৯০জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৫৩৫জন। অন্যদিকে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৫৯৫ জন ছাত্রীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৩২১জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭ হাজার ৪৩৪ জন।
এ বছর এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৬৩ হাজার ৩৭০ জন। যা গতবছরের তুলনায় ৪০ হাজার ২৭০ জন কম। এর মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ এক হাজার ৭১১ জন। পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৯৭ হাজার ৪৩৯ জন। পাসের হারে এবার শীর্ষে রয়েছে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। কয়েকবছর ধারাবাহিকভাবে শীর্ষ স্থান অর্জন করে আসলেও এবার দ্বিতীয় স্থানে নেমে গেছে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড। এবার কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং মাদরাসা বোর্ডে ৭৭ দশমিক ০২ শতাংশ। গতবছর মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৮ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে ছিল ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ। পাসের হারে গতবারের মতো এবারও সবার নিচে রয়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড। বরিশাল ছাড়া বাকি সব শিক্ষা বোর্ডেই এবার কমে গেছে পাসের হার। বরিশাল বোর্ডে পাসের হার বেড়েছে শূণ্য দশমিক ১৫ শতাংশ।
সাধারণ আটটি বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৬৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। যা গতবছর ছিল ৭২ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এবার পাসের হার কমেছে ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে কেবল বরিশালের পাসের হার বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের ফল বিপর্যয়। গত ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পাস করেছে এই শিক্ষা বোর্ডে। পাসের হারে এই বিপর্যয় সম্পর্কে কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল খালেক বলেন, প্রাথমিকভাবে তাঁরা মনে করছেন, ইংরেজিতে শিক্ষার্থীরা খারাপ করায় ফল খারাপ হয়ে থাকতে পারে। তাঁরা এটি মূল্যায়ন করে দেখবেন। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ বলেন, ‘ইংরেজিতে ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ আরও ৪০টি বিষয়ে কমবেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। এতে করে সার্বিক পাসের হারের ওপর প্রভাব পড়েছে। যে কারণে অন্যান্য বোর্ডের তুলনায় কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার কম।
রেওয়াজ অনুযায়ি ৬০ দিনের মধ্যে এইচএসসি, আলিম ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের বাধ্যবাধ্যকতা থাকায় নির্ধারিত ৬০ দিনের আগে ৫৯তম দিনে এবছরের ফলাফল প্রকাশ করা হলো। বিগত মহাজোট সরকারের সময়ে এটি চালু হওয়ার পর বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়েও এই ধারা অব্যাহত রাখতে পারায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
ফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল (রোববার) সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিজ্ঞান বিভাগ ও মেয়েদের সাফল্যে উৎফুল্লতা প্রকাশ করেন। পাসের হার কমে যাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সঠিক পদ্ধতিতে খাতা মূল্যায়ন করায় পাসের হার কমে গেছে। আগে পরীক্ষক ভালোভাবে খাতা মূল্যায়ন করতেন না। এতে একজন ভালা ছাত্র কম নম্বর পেতো আবার একজন খারাপ ছাত্র বেশি নম্বর পেয়ে যেতো। এতে অনেকেই হাস্যরস করে বলতেন যে, খাতার ওজন দেখে নম্বর দেয়া হয়। অভিযোগ ছিল পরীক্ষকরা মনোযোগ দিয়ে খাতা দেখেন না, সঠিক যাচাই হতো না। এ জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ এক্সামিনেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিট (বেডু) গঠন করা হয়। এটি গত তিন বছর ধরে কাজ করছে। শিক্ষক ও হেড এক্সামিনার ঠিকমতো খাতা দেখছেন কিনা তা তার খতিয়ে দেখে। বেডু কাজ করার পর পরীক্ষার ফলাফলে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এসএসসি পরীক্ষার খাতা বেডু দ্বারা পুনঃমূল্যায়ন করা হয়েছিল। ফলে দেখা গেছে পাসের হার শতকরা ৮ শতাংশ কমেছে। গত চার বছর প্রশিক্ষণ দিয়ে এটা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা চাই সঠিকভাবে মেধার মূল্যায়ন হোক। ফল বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলেন জানিয়ে নাহিদ বলেন, এই ফলাফলের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কারণ নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮ শতাংশ কমে গিয়েছিল। সে তুলনায় এখানে কমেছে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তিনি বলেন, আমরা পাসের হার কমও চাইনা, বেশিও চাইনা। আমরা চাই সঠিক মূল্যায়ন। নতুন মূল্যায়নের ফলে যে পাসের হার তাতে বিস্মিত হওয়ারও কিছু তিনি দেখেন না। প্রশ্নফাঁসকে বড় সঙ্কট উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন,এটা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেস, রাস্তায় পাহাড়া দিয়ে আমরা পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দিচ্ছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কিছু শিক্ষক নামধারী করঙ্কিত ব্যক্তি সেখান থেকেই প্রশ্নফাঁস করছেন। এজন্য আমরা কষ্ট হলেও কয়েকজন শিক্ষককে আইনের হাতে তুলে দিয়েছি।
ফেল করা শিক্ষার্থীদের শান্তনা জানিয়ে নাহিদ বলেন, ফেল করা মানেই কিন্তু জীবনের সব শেষ হয়ে যাওয়া না। হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আবেক কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সামনে আবার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ আসছে। সেটাকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে। বিজ্ঞানে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে এবং সাফল্য আসছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার সময় বিজ্ঞানে ছাত্র কমে যাওয়ার বিষয়টি ছিল আতঙ্কের। বিজ্ঞানের ছাত্র বাড়ানো জন্য আমরা ক্যাম্পেইন করেছি, উন্নত ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছি, শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি, প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ফলে এ বছর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী বেড়েছে। এ বছর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২ লাখ ১৪ হাজার ৩৫২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। পাস করেছে এক লাখ ৭৮ হাজার ২২০ জন। পাসের হারে ৮৩ দশমিক ১৪ শতাংশ।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এস এম ওয়াহিদুজ্জামানসহ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সকল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।
এর আগে দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়। গতকাল সকালে শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ গণভবনে ফলাফলের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। পাসের হার কম হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার রেজাল্ট হয়ত পার্সেন্টেজের দিক থেকে কিছুটা কম হতে পারে। যেহেতু পড়াশোনার গুণগত মানের দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে পরীক্ষা পদ্ধতি আরও আধুনিক করা হয়েছে তাছাড়া খাতা দেখাসহ সব দিকে ভালোভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। আমি আশা করি, এই অবস্থা কাটিয়ে উঠব। সার্বিকভাবে এই ফলাফলকে ‘যথেষ্ট ভাল’ হিসেবে বর্ণনা করে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন এবং শিক্ষকদের ধন্যবাদ জানান তিনি। আর যারা কৃতকার্য হতে পারেনি, তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কত পার্সেন্ট পাস করল, কত পার্সেন্ট পাস করলে না; সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। পড়াশোনা করবে, পাস করার জন্য প্রত্যেক ছেলেমেয়ের মধ্যে আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। ভালোভাবে পড়তে হবে। পড়াশোনায় মন দিতে হবে। প্রতিদিনের কোন সময়টা পড়াশোনার জন্য ভালো; সে সময়টা বেছে নিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই বয়সী শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি প্রয়োজন হল সঠিক ‘গাইডলাইন’ দেওয়া। অভিভাবকদের অনুরোধ করব ছেলেমেয়েদের সমস্যাগুলো উপলব্ধি করা, তাদেরকে আরও একটু বেশি সময় দেওয়া। সন্তাদের প্রতি আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে; তাদের কথাগুলো তারা যেন বন্ধুর মতো বাবা-মাকে বলতে পারে, সেরকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ করব। অভিভাবকরা সন্তানদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করলে তারা কখনো বিপথে যাবে না বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে লালমনিরহাট এবং শরিয়তপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন।
৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড : ৮টি সাধারণ বোর্ডের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হার সবচেয়ে বেশি সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ৭২ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম পাস করেছে কুমিল্লা বোর্ডে ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। এছাড়া ঢাকা বোর্ডে ৬৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৭১ দশমিক ৩০ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৭০ দশমিক ০২ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৬১ দশমিক ০৯ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৭০ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং দিনাজপুর বোর্ডে ৬৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এই ৮টি বোর্ডের মধ্যে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৩ হাজার ২৪২ জন। এরমধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছে ২৮ হাজার ৯৩৫ জন। মানবিক, ইসলাম শিক্ষা, সংগীতে পেয়েছে ১ হাজার ৭২৬ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষায় পেয়েছে ২ হাজার ৫৮১ জন।
মাদরাসা বোর্ড : পাসের হারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মাদরাসা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ০২ শতাংশ। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষায় এবছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৯৬ হাজার ৮০২ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৭৯ হাজার ৬০৩ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৮১৫ জন।
কারিগরি বোর্ড: এই বোর্ডে পাসের হার কিছুটা কমলেও এবার শীর্ষ স্থান অর্জন করেছে। এই বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এ বছর অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৯৭ হাজার ১৪ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৭৮ হাজার ৯০৪ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৬৬৯ জন।
গত ২ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়া পরীক্ষা সারা দেশে ২ হাজার ৫০৮টি কেন্দ্রে ৮ হাজার ৭৭১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ করে।
চট্টগ্রাম বোর্ডে পাশের হার ৫ বছরে সর্বনিম্ন জিপিএ-৫ অর্ধেক
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাশের হার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে। এবার পাশের হারের সঙ্গে কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। পাশের হার ৬১.০৯ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৩৯১ জন। গতবছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৬৪.৬০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২ হাজার ২৫৩ জন শিক্ষার্থী। আইসিটি ও ইংরেজি বিষয়ে ব্যাপক ফেল ও খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তনে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার নিম্নমুখি বলে মনে করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাহবুব হাসান। তিনি গতকাল (রোববার) দুপুরে এবারের ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এতে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বোর্ডে বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার পাশের হারে সর্বনিম্ন। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বোর্ডে পাশের হার ছিল ৭০.০৬ শতাংশ। তিন বছরে তা ৬১.০৯ শতাংশে নেমে এসেছে। আর গতবারের তুলনায় এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। ভারী বর্ষণের মধ্যে ঘোষণা করা হয় এইচএসসির ফলাফল। শিক্ষা বোর্ড এলাকাসহ নগরীর বেশিরভাগ কলেজ প্লাবিত হয়। আর এ কারণে কলেজে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। একদিকে ফলাফল খারাপ অন্যদিকে বৈরি আবহাওয়ার কারণে কলেজগুলোতে ছিলনা উৎসবের পরিবেশ।
এ বোর্ড থেকে এবার ৮২ হাজার ৪১৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৫০ হাজার ৩৪৭ জন। এর মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৬২.৬৫ শতাংশ; ছাত্রদের ৫৯.৫৫ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬২৪ জন ছাত্রী, ছাত্র ৭৬৭ জন। এবার অকৃতকার্য ৩২ হাজার ৬৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে ১৭ হাজার ১৫৩ জন। এবার বিজ্ঞানে পাস করেছে ৭৭.৩৪ শতাংশ, মানবিকে ৪৭.৪৯ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ৬৫.৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। বিজ্ঞানে গতবারের চেয়ে পাসের হার বাড়লেও মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় কমেছে। গতবার বিজ্ঞানে ৭৬.৬৬, মানবিকে ৫১.৬২ ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭০.৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। চট্টগ্রাম বোর্ডের ২৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এবার শুধুমাত্র ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গতবার শতভাগ পাশ কলেজের সংখ্যা ছিল ৫টি। চট্টগ্রামে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা পাসের হারে এগিয়ে আছে। তবে জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়ে এগিয়ে আছে ছেলেরা। এবার চট্টগ্রাম মহানগরে পাশের হার আগের মতো থাকলেও গ্রামের কলেজের ফলাফল বেশি খারাপ হয়েছে। এবার মহানগরীতে পাশের হার ৭৬.৬৮ আর মহানগরীর বাইরে জেলায় ৫৫.৮১ শতাংশ। গতবার মহানগরে পাশর হার ছিল ৭৬.৯৬ শতাংশ, আর জেলায় ছিল ৬০.২৩ শতাংশ। এছাড়া কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায়ও পাশের হার কমেছে। এবার এ চার জেলায় পাশের হার যথাক্রমে ৫৫.৩২, ৪৫.৯৯, ৪৪.৬৩ ও ৫৫.২২ শতাংশ। গতবছর কক্সবাজার জেলায় পাশের হার ছিল ৬৩.৭৪, রাঙ্গামাটিতে ৪৭.৪১, খাগড়াছড়িতে ৫১.৫৭ এবং বান্দরবানে ৬১.৬৪ শতাংশ। চট্টগ্রাম বোর্ডে এবার এক বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ হাজার ১৫৩ জন।
আলিমে জামেয়ার সাফল্য অব্যাহত
এবারের আলিম পরীক্ষায়ও জামেয়া আহ্মদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। মাদরাসার ৩৫৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬১ জন ‘এ’ প্লাসসহ সকল পরীক্ষার্থী পাশ করেছে। উল্লেখ্য, অত্র জামেয়া ১৯৫৪ সালে মহান অলিয়ে কামিল হাফেয ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটির (রহ.) হাতে প্রতিষ্ঠার পর হতে দেশ-জাতি, মাযহাব-মিল্লাতের ব্যাপক অবদান রেখে আসছে। দেশের বৃহত্তম দ্বীনি সংস্থা আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় সুপরিচালিত এ মহান দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বাছাইকৃত ৩০টি মডেল মাদরাসার মধ্যে প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসাবে সরকারীভাবে স্বীকৃতি ও স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত।
এদিকে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মহিলা মাদরাসার ৪২ জন পরীক্ষার্থীর সবাই কৃতকার্য হয়েছে। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩১ জন। ইসলামী আদর্শের আলোকে আলোকিত মানুষ গড়ার অঙ্গীকারে নারী শিক্ষায় অনন্য ভূমিকা পালন করছে এ মাদরাসা।
রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ কমেছে
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসিতে এবার পাসের হারের সাথে কমেছে জিপিএ-৫। এবার পাসের হার ৭১ দশমিক ৩০ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৭৫ দশমিক ৪০। গত বারের চেয়ে পাশের হার ৪ দশমিক ১ শতাংশ কম হয়েছে। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ২৯৪ জন শিক্ষার্থী। যা গত বছরের চেয়ে ৭৭৯ জন কম। কারণ হিসেবে দেখা যায়, এইচএসসি পরীক্ষায় এ বছর ২৭ হাজার ৪৬১ জন পরীক্ষার্থী একটি করে বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফলাফল খারাপ করেছে ইংরেজি বিষয়ে। ইংরেজিতে ধস নামার কারণে এবার পাসের হার কমেছে। গতকাল দুপুরে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তরুণ কুমার সরকার এক সাংবাদিক সম্মেলনে ফলাফল ঘোষণা করেন।
এবার রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ১৯৪টি কেন্দ্রে ৭৪২টি কলেজের এক লাখ ২১ হাজার ৮৩৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে পাস করেছে ৮৬ হাজার ৮৭২ জন। পাসের হার ৭১ দশমিক ৩০ ভাগ। এর মধ্যে ছাত্র পাসের হার ৬৭ দশমিক ৪৬ এবং ছাত্রী পাসের হার ৭৬ দশমিক ০১ শতাংশ। জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্র দুই হাজার ৯৩৯ জন। আর ছাত্রী দুই হাজার ৩৫৫ জন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল ৩৩ হাজার ৯৯২ জন। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৯৪৯ জন ছাত্র এবং ১৪ হাজার ৪৩ জন ছাত্রী। পাসের হার ৮৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। পাস করেছে ২৮ হাজার ৭৪৯ জন শিক্ষার্থী। মানবিক বিভাগে পরীক্ষার্থী ছিল ৬৮ হাজার ৮৮৪ জন। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ০৮ জন ছাত্র ও ৩৪ হাজার ৮৭৬ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। মোট পাস করেছে ৪২ হাজার ৬৪০ জন।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২১ হাজার ৩০৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ছিল ১৪ হাজার ৫৬৪ জন এবং ছাত্রী ছয় হাজার ৭৪২ জন। আর মোট পাস করেছে ১৫ হাজার ৪৮৩ জন। এ বিভাগে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৮৮ ভাগ।
দিনাজপুরে ছাত্রীদের পাশের হার বেশি
দিনাজপুর অফিস জানায়, ২০১৭ সালের দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার পাশের হার ৬৫ দশমিক ৪৪। ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের পাশের হার বেশি। এবার জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যা গতবারের চাইতে কমেছে। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ তোফাজ্জুর রহমান ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষনা করেন। এবার পাশের হার ৬৫ দশমিক ৪৪। ১লাখ ৭ হাজার ১৮৩জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১লাখ ৫ হাজার ৪০০জন পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬৮ হাজার ৯৭২ জন। এর মধ্যে ৩৫ হাজার ২ জন ছাত্র ও ৩৩ হাজার ৯৭০ জন ছাত্রী। ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের পাশের হার বেশি। ৬৮ দশমিক ২৯ ভাগ ছাত্রী পাশ করলেও ছাত্র পাশ করেছে ৬২ দশমিক ৮১ ভাগ।
এদিকে, এইচএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ১৬টি কলেজের কেউই উত্তীর্ণ হননি। শতভাগ উত্তীর্ণ হয়েছে ১১টি কলেজ। রোববার ২০১৭ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণার মূল্যায়নে দেখা যায়, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৬টি কলেজের কেউই উত্তীর্ণ হননি।
যশোর শিক্ষা বোর্ড এবার গতবারের চেয়ে পিছিয়েছে
যশোর থেকে রেবা রহমান জানান, সারাদেশের তুলনায় ভালো করলেও যশোর শিক্ষা বোর্ড এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে গত বছরের চেয়ে পিছিয়েছে। গতবছর ৮৩ দশমিক ৪২ ভাগ পাসের হার নিয়ে দেশসেরা হয়েছিল। এ বছর এই পাসের হার ৭০ দশমিক ০২ ভাগ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তিও কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৪৪৭ জন পরীক্ষার্থী। এ সংখ্যা গতবছর ছিল ৪ হাজার ৫৮৬। গতকাল রোববার দুপুরে প্রকাশিত ফলাফলে এই চিত্র উঠে এসেছে। যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র প্রেসক্লাব যশোরে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশ করেন। এ বছর যশোর বোর্ড থেকে ৯৫ হাজার ৬৯২ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬৭ হাজার ২ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ৩৩ হাজার ৮০৮ জন ছাত্র এবং ৩৩ হাজার ১৯৪ জন ছাত্রী। পাসের হার ৭০ দশমিক ০২। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৪৪৭ জন। বহিষ্কৃত হয়েছে ৫৬ জন।
গত বছর এই বোর্ড থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ৫৭২ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৯২৯ জন। পাসের হার ছিল ৮৩ দশমিক ৪২ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪ হাজার ৫৮৬ জন। পরীক্ষায় বহিষ্কৃত হয়েছিল ৮১ হন। গতবারের তুলনায় এবার পাশের হার কমেছে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও কমেছে ২ হাজার ১৩৯।
২০১৫ সালে এই বোর্ডে ১ লাখ ১৪ হাজার ২৭০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল ৫৩ হাজার ২৩৪ জন। পাসের হার মাত্র ছিল ৪৬ দশমিক ৫৯। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ হাজার ৯৪৫ জন। পরীক্ষায় বহিষ্কৃত হয়েছিল ১২৯ জন। শিক্ষাবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর যশোর বোর্ডে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৬ হাজার ৪৯৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ হাজার ৩১১ জন। পাসের হার ৮১ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৫৪৩ জন। মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৫৮ হাজার ২৩৭ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৭ হাজার ২৩১ জন। পাসের হার ৬৩ দশমিক ৮৪ ভাগ। এই বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৮৩ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ২০ হাজার ৯৫৯ জন ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে পাস করেছে ১৬ হাজার ৪৬০ জন। পাসের হার ৭৯ দশমিক ২৯ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়ে ৪২১ জন ছাত্র ছাত্রী। যশোর বোর্ড সার্বিক ফলাফলে এবছর দেশের অন্যান্য বোর্ডের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, ২০১৫ সালে ফল বিপর্যয়ের কারণে গতবছর অনেক শিক্ষার্থী একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছিল। এই অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের ফলাফলের কারণে গতবছর পাসের হার অনেক বেশি ছিল। বিপরীতে গতবছর অনুত্তীর্ণের হার কম থাকায় এবার অনিয়মিত পরীক্ষার্থী কম ছিল। এজন্য গতবছরের তুলনায় পাসের হার কিছুটা কম। কিন্তু নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পাসের হারের সাথে তুলনা করলে এবারও যশোর বোর্ডের ফলাফল ভাল।
আর এ বছর যশোর বোর্ডে পদার্থ বিজ্ঞান, ইংরেজি, গণিত, মনোবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞানের একটি করে পত্রের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা ভাল করতে পারেনি। এজন্য দু’টি পত্রের ফলাফল মিলে তারা উত্তীর্ণ হলেও জিপিএ প্রাপ্তিতে এর প্রভাব পড়েছে। তারপরও যশোর বোর্ডে সারাদেশের তুলনায় ভাল ফলাফল করেছে। আগামীতে এ ধারার আরও অগ্রগতি হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
৪ কলেজ থেকে কেউই পাস করেনি
যশোর শিক্ষাবোর্ডে এইচএসসিতে ৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেনি। এর মধ্যে মাগুরায় প্রতিমন্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত বীরেন শিকদার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজও রয়েছে। এবারের এইচএসসি ফলাফলের চিত্র তুলে ধরে যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র এ তথ্য জানান। পাশাপাশি এই বোর্ড থেকে মোট ৪১টি প্রতিষ্ঠানের সবাই এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়েছে।
তথ্য অনুযাযী, মাগুরার মহম্মদপুরে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের নামে প্রতিষ্ঠিত বীরেন শিকদার আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবছর এইচএসসি পরীক্ষায় ৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। কিন্তু এদের কেউই উত্তীর্ণ হয়নি। মাগুরার দক্ষিণ নওয়াপাড়া সম্মিলনী কলেজ থেকেও ৪ জন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই ফেল করেছে। এছাড়া ঝিনাইদহের ডিজিপিএল মডেল কলেজ থেকে ৩ জন এবং মেহেরপুরের মরকা জাগরণ কলেজ থেকে ২ জন এইচএসসি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হলেও কেউই উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
রাজশাহী বোর্ডে এবারও এগিয়ে বগুড়া
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে জানান, ঘোষিত এইচএসসি পরিক্ষার ফলাফলে ভালো করেছে শিক্ষা নগরী বলে পরিচিত বগুড়া। এবার রাজশাহী বোর্ডের অধীনে ৮ জেলা থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার ৬ শ ১৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ২শ ৯৪ জন। এর মধ্যে বগুড়ার চারটি প্রতিষ্ঠান থেকেই জিপিএ- ৫ পেয়েছে ১ হাজার ৩ শ ২৫ জন। অর্থাৎ ফলাফলে এগিয়ে থাকলো বগুড়ায়! যে প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো ফল করেছে সেগুলো হল সরকারি আজিজুল হক কলেজ,ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ,বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ি ,সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে ১ হাজার ৫শ ২৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস কে ছে ১ হাজার ৫ শ ৭জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ শ’ ৮৬ জন। ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ শ’ ৬৫ জন। এই কলেজের ৮শ’৪২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৮শ ৪০ জন। বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২শ৭৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১শ ৪১ জন।
কাদির মোল্লা সিটি কলেজ থেকে ২৯৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে জানান, নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ অতীত গৌরব অক্ষুন্ন রেখেছে। সদ্য ঘোষিত এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে এ কলেজ থেকে ২৯৩ জন ছাত্র ছাত্রী জিপিএ-৫ পাবার গৌরব অর্জন করেছে। পাশের হার শতকরা ৯৯.৭৩ ভাগ।
কলেজের প্রিন্সিপাল ড. মশিউর রহমান মৃধা জানিয়েছেন, চলতি বছর এই কলেজ থেকে চলতি বছর ৭৪০ জন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় ৪৩৭ জন, ব্যবসা শিক্ষায় ১৫২ জন এবং মানবিক শাখায় ১৯১ জন। চলতি বছর ফলাফলে মাত্র ২ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। বাকীরা সব সুন্দর ফলাফল অর্জন করেছে। জিপিএ-৫ অর্জনকারীদের মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান শাখায় ২৫০, ব্যবসায় শিক্ষায় ২২৭ জন এবং মানবিক শাখায় ১৬ জন।
ফলাফল বিপর্যয় কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের পিছু ছাড়ছে না
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে জানান, ফলাফল বিপর্যয় পিছু ছাড়ছে না কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের গত বিশ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কম পাশের হার নিয়ে আবারো সমালোচনার জায়গায় উঠে এসেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। এসএসসির ফলাফল বিপর্যয়ের রেশ কাটতে না কাটতে এইচএসরি ফল বিপর্যয়ের ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পড়েছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। এবছর কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাক্ষ্রণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্রীপুরসহ ৬টি জেলার ৩৬৩টি কলেজ থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ১লাখ ৩৭২জন ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছিল। এদের মধ্যে পাশ করেছে মাত্র ৪৯হাজার ৭০৪জন। গড় হিসেবে সর্বনিম্ন ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ পাস করেছে। যা কুমিল্লা বোর্ডের ফলাফলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের ইতিহাস। গতকাল দুপুরে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ফলাফলের সারসংক্ষেপ সীট বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করেন। কুমিল্লা বোর্ডের গত ৫বছরের ফলাফলে দেখা গেছে ২০১২ সালে পাশের হার ৭৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৬১ দশমিক ২৯ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৭০ দশমিক ১৪ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৫৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৬৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। গত ৫ বছরে পাশের হার যেভাবে উঠা নামা করেছে এবারের ফলাফল চিত্রে একবারে গণেশ উল্টে গেছে। কেবল পাশের হারই নয়, এবারে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও কমেছে। এবারে বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৭৮জন। গতবছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৯১২জন। এবারে বোর্ডে কোন পরীক্ষার্থীই পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে তিনটি। আর শতভাগ পাশ করেছে ৯টির মধ্যে কুমিল্লায় রয়েছে চারটি। এদিকে ফল বিপর্যয়ে হতাশ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এইচএসসিতে প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ায় তাদের সেই স্বপ্ন ধমকে গেলো। বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন চুরমার হলো অন্তত পৌনে এক লাখ শিক্ষার্থীর। বোর্ড কর্তৃপক্ষ সকল বোর্ডের তলানিতে থাকা ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ পাশের হারকে কোনভাবেই বিপর্যয় বলে স্বীকার করতে নারাজ।
নেছারাবাদে ফজিলা রহমান মহিলা কলেজ শীর্ষে
নেছারাবাদ (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নেছারাবাদে এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় ১০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। উপজেলার ৯টি কলেজ এবং ২টি স্কুল এন্ড কলেজের মধ্যে ফজিলা রহমান মহিলা কলেজ থেকে ৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়ে ফলাফলে শীর্ষে রয়েছে। পাসের হার শতকরা ৭৬.২৩ ভাগ। শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ থেকে ৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। পাসের হার শতকরা ৫০ ভাগ । এছাড়াও সরকারী স্বরূপকাঠি কলেজে থেকে-১ জন ,শহীদ স্মৃতি বি এম কলেজ থেকে ১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে ।
নাটোর জেলায় শীর্ষস্থানে কাদিরাবাদ স্যাপার কলেজ
নাটোর জেলা সংবাদদাতা জানান, নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার কাদিরাবাদ স্যাপার কলেজ বরাবরের মত এবারেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জেলায় সবচেয়ে ভাল ফলাফল করে শীর্ষ স্থান দখল করেছে। এখানে ৫১৬জন পরীক্ষা দিয়ে ৫১২জন পাশ করার পাশাপশি জিপিএ-৫ পেয়েছে ২০১জন। এর মধ্যে বিজ্ঞানে ১৮০ জন, ব্যবসা শিক্ষায় ১২জন এবং মানবিকে ৯জন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।