দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর : ইসলামের দৃষ্টিতে গীবত একটি জঘন্য অপরাধ। এর কারণে মায়া-মমতা, স্নেহ-ভালোবাসা অন্তর থেকে মুছে গিয়ে শত্রæতা সৃষ্টি হয় এবং একে অপরের মাঝে সুসম্পর্ক বিনষ্ট হয়। সুতরাং গীবত একটি গর্হিত কাজ।
গীবত আরবি শব্দ। শাব্দিক অর্থ পরনিন্দা। অসাক্ষাতে অন্যের দোষত্রæটি বর্ণনা করা। ইসলামি পরিভাষায় কারো অসাক্ষাতে তার দোষ-ত্রæটি বর্ণনা করা, যদিও সে দোষত্রæটি তার মধ্যে থাকে, তা গীবত। আল মুজামুল ওয়াসিত অভিধান প্রণেতা বলেন, ‘কোনো ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার দোষ কিংবা এমন বিষয় আলোচনা করা, যা তার উপস্থিতিতে করলে মনে কষ্ট পাবে, তাকেই গীবত বলা হয়।
গীবত সম্পর্কে রাসুল (সা.)-এর স্পষ্ট হাদিস রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয়নবী (সা.) বলেন, তোমরা কি জানো গীবত কি?’ তখন সাহাবায় কেরাম বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুল অধিক জ্ঞাত এরপর রাসুল (সা.) বললেন, ‘তামার ভাই সম্পর্কে এমন আলোচনা করা, যা শুনলে সে দুঃখিত হবে। একজন সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি মনে করেন যে, আমি যা বলছি, তা যদি তার মধ্যে থাকে? রাসুল (সা.) বললেন, তুমি যা বলছো, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলে তা হবে গীবত আর যদি না থাকে, তাহলে তা অপবাদ। ( মুসলিম: ২/৩২২)
মহান রাব্বুল আলামিন এবং রাসুল (সা.) গীবত বা পরনিন্দাকে খুব ঘৃণিত কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। এ কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য মানবজাতিকে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমাদের কেউ একে অপরের পশ্চাদে নিন্দা করো না। কারণ, তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একেই ঘৃণাই করো। সূরা হুজুরাত: ১২)
গীবতকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মৃত মানুষ খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। সুতরাং মৃত মানুষের গোশত খাওয়া যেমন হারাম, তদ্রæপ গীবত করাও হারাম।
রাসুল (সা.) বলেন, মিরাজের রজনীতে আমি এমন এক স¤প্রদায়ের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, যাদের নখ ছিলো ধারালো। তা দিয়ে তারা তাদের মুখমুল ও শরীরের গোশত আছড়াচ্ছিলো। আমি জিবরাইল (আ:) কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তখন তিনি বললেন, এরা সে সকল লোক, যারা মানুষের গীবত করতো এবং তাদের সম্মান নষ্ট করতো।
হজরত আবু বরয়া আল আসলমি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, হে ঐ সকল লোক! যারা মুখে ঈমান এনেছে অথচ অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি, তোমরা গীবত করো না এবং অন্যের দোষত্রæটি অন্বেষণ করো না। কারণ, যে তাদের দোষত্রæটি অন্বেষণ করবে, মহান রাব্বুল আলামিন তার দোষ অন্বেষণ করবেন। আর আল্লাহ পাক যার দোষত্রæটি অন্বেষণ করবেন, তাকে অপদস্থ করে ছাড়বেন। ( আবু দাউদ: ২/৩২৯)
আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ:)- এর উপর এ মর্মে ওহি অবতীর্ণ করেছিলেন যে, গীবত থেকে তওবাকারী ব্যক্তি হবে বেহেশতে গমনকারীদের সর্বশেষ। আর যে ব্যক্তি এ কাজে সর্বদা লিপ্ত থেকে মৃত্যুবরণ করবে, সে হবে জাহান্নামিদের মাঝে প্রথম।
হজরত আনাস ( রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি কারো গীবত করে ফেলে এবং তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ না পায়, তাহলে গীবতকারী আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে এভাবে আল্লামুম্মাগফির লানা ওয়া লাহু হে আল্লাহ! আমাদের এবং তাকে ক্ষমা করে দাও। মেশকাত: ৪১৫)
গীবত জঘন্য হওয়া স্বত্তে¡ও ফকীহ ও মুহাদ্দিসগণ ছয়টি ক্ষেত্রে জায়েয বলেছেন।
(১) মাজলুমের অভিযোগের ক্ষেত্রে: বিচারক বা যে তার বিচার করবে তার কাছে অত্যাচারীর জুলুমের বিবরণ দেওয়া।
(২) প্রকাশ্যে পাপাচারীর: যেমন, মদ্যপান, ডাকাত, পতিতা, ঘুষখোর, চোরাচালানী, রাষ্ট্রদ্রোহী ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে তার দোষ বর্ণনা করা জায়েয।
(৩) ফতওয়া চাওয়া: কোনো মুফতিকে এ কথা বলা অমুক আমার ওপর অত্যাচার করে অথবা পিতা বা ভাই বা স্বামী এরুপ করে, তার সম্পর্কে হুকুম কি?
(৪) কোনো অপকর্ম প্রতিহত করার ক্ষেত্রে: অপকর্ম প্রতিহত করা কিংবা কোনো পাপিকে সৎপথে আনার জন্য এমন ব্যক্তির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা, যে তা প্রতিহত করতে পারবে বলে আশা আছে।
(৫) মুসলিম কোনো অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্যে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কারো দুরাচারী দুর্বৃত্তের দোষ প্রকাশ করে দাও, যাতে মানুষ তার অনিষ্ট থেকে সতর্ক থাকতে পারে।
(৬) কারো পরিচয় দানের ক্ষেত্রে: যেমন, কোনো লোক লেঙরা, খোড়া, অন্ধ, বেটে, টেরা ইত্যাদি উপাধিতে পরিচিত। তখন তার পরিচয়ের জন্য এ সকল উপাধি ব্যবহার জায়েয। তবে তাকে খাটো বা অপমানিত করার জন্য এসব উপাধি প্রয়োগ করা হারাম।
অতএব, আমরা গীবত বা পরনিন্দা পরিহার করি এবং মহান রাব্বুল আলামিন ও তার রাসুল (সা.)-এর আদেশ পালনে সচেষ্ট হই। আমিন!
উত্তর দিচ্ছেন : আহমদ আবদুল্লাহ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।