Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাকিস্তানে সাহায্য দেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন

| প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ডি ডব্লিউ : যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে সাহায্য প্রদানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। ডি ডব্লিউ-র সাথে এক সাক্ষাতকারে ওয়াশিংটন ভিত্তিক উড্রো উইলসন সেন্টার ফর স্কলারস-এ দক্ষিণ ও দক্ষিণএশিয়া বিষয়ক সিনিয়র সহযোগী ও বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, কোনো মার্কিন প্রশাসন যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পন্থা গ্রহণ করতে চায় সে হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। সাক্ষাতকারটি নিম্নরূপঃ
ডি ডব্লিউ তাহলে মার্কিন সরকার শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে?
কুগেলম্যানঃ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নীতি অবলম্বনের জোর সম্ভাবনা রয়েছে। যদি কোনো মার্কিন প্রশাসন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণ করে সে ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্প সন্ত্রাস বিষয়ে নিজেকে কঠোর হিসেবে প্রদর্শন করতে চান। সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারে তার ঘোষিত ও কঠোর অবস্থান এই যে একে নির্মূল করা প্রয়োজন সে যাই হোক ও যে রূপেই হোক। মনে হচ্ছে কিছু সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ও অন্যদের সন্ত্রাস চালাতে দেয়ার পাকিস্তানের নীতির ব্যাপারে ট্রাম্প ‘জিরো টলারেন্স’ গ্রহণ করেছেন। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সে চাপ উপলব্ধি করছে।
যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন যুদ্ধ সম্প্রসারণ ও পাকিস্তানের জন্য সাহায্য কর্তন করবে বলে জল্পনাকল্পনা রয়েছে। পাকিস্তানের কঠোরতম সমালোচক মনে করেন যে গুরুত্বপূর্ণ অ-ন্যাটো মিত্র হিসেবে পাকিস্তানের মর্যাদা যুক্তরাষ্ট্রের বাতিল করা উচিত অথবা তাকে সন্ত্রাসের মদতদাতা রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। মার্কিন নীতি উপকরণে চরম কঠোর নীতি গ্রহণ করাই ভালো যদিও আমার মনে হয় যে সাহায্য কর্তন ও ড্রোন হামলার পথই নেয়া হবে।
ট্রাম্পের আফগানিস্তান নীতি সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হবে
ডি ডবিøউঃ আপনি কি মনে করেন যে ওয়াশিংটন যাদেরকে তার স্বার্থের প্রতি হুমকি মনে করে সেই হাক্কানি নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য ইসলামী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানকে বাধ্য করতে পারবে?
কুগেলম্যানঃ আমি নিশ্চিত নই যে তারা এটা করবে। আসলে পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ হাক্কানি নেটওয়ার্ক ও লশকর-ই-তৈয়বার মত জঙ্গি সংগঠনের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ দ্বিগুণ ও জোরদার করে যুক্তরাষ্ট্রের আরো লাঠি ও কম গাজর (শাস্তি ও পুরস্কার) ব্যবস্থার জবাব দিতে পারে।
ডি ডবিøউ ঃ যুক্তরাষ্ট্র যদি সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তানের অ-ন্যাটো অংশীদার মর্যাদা বাতিল করে তাহলে আফগান পরিস্থিতির উপর তা কিভাবে প্রভাব ফেলবে?
কুগেলম্যানঃ এটা প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর জন্য সম্পূর্ণ ধ্বংসজনক হবে। কারণ, এ সাহায্র বন্ধের অর্থ হবে সামরিক সাহায্য ও অস্ত্র বিক্রি হ্রাস। পাকিস্তান এ অবস্থায় সউদি আরব ও চীনের বদান্যতার উপর নির্ভর করতে পারে। কিন্তু পাকিস্তান বহু বছর ধরে ওয়াশিংটনের কাছ থেকে পাওয়া সাহায্যকে আসলেই মূল্য দেয়। অ-ন্যাটো অংশীদার হিসেবে পাকিস্তানকে বাতিল করা হলে মার্কিন সাহায্য সন্দেহের সম্মুখীন হবে এবং পাকিস্তানি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের কিছু লোক চিন্তায় পড়বে।
প্রশ্ন হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র কি আসলেই এ ধরনের কঠোর নীতি পরিবর্তনের মধ্যে যাবে? খোলাখুলি বললে আমার তা মনে হয় না, অন্তত এখনই বা মধ্য মেয়াদ পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্র্র আফগানিস্তানে সৈন্য মোতায়েন অব্যাহত রাখবে। আসলে ট্রাম্প প্রশাসন সেখানে আরো সৈন্য পাঠাতে যাচ্ছে। যতদিন আফগানিস্তানে মার্কিন সৈন্য থাকবে ততদিন মার্কিন বাহিনীর সরবরাহ পথের জন্য তাকে পাকিস্তানের উপর নির্ভর করতে হবে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে ইসলামাবাদ এই সরবরাহ পথ বন্ধ করে দেবে। তখন আমেরিকাকে আরো ঘোরা ও ব্যয় বহুল পথ ব্যবহার করতে হবে। আর তা আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধ চেষ্টাকে বর্তমানের চেয়ে আরো কঠিন করে তুলবে।
কোনো সন্দেহ নেই যে ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভূরাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ। কোনো উপায় নেই যে আফগানিস্তানের সাথে সীমান্ত থাকা পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বহীন হিসেবে বিবেচনা করবে। আমেরিকানরা আফগানিস্তানে তাদের সবচেয়ে দীর্ঘ লড়াই করছে। আরো কথা, বিশে^র পরবর্তী পরাশক্তি চীনের সাথে পাকিস্তানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে এবং বিশে^র সবচেয়ে বিপজ্জনক পরাশক্তি রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ক্রমবর্ধমান।
চীন ও রাশিয়া আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায় চায়
ট্রাম্প প্রশাসন যদি পাকিস্তানকে কোণঠাসা করে ফেলে তখন পাকিস্তান কি চীন ও রাশিয়ার দিকে অধিক ঝুঁকবে?
পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নীতি পাকিস্তানকে চীন ও রাশিয়ার আরো কাছে ঠেলে দেবে। তবে এ ঝুঁকিকে অতিরঞ্জিত করা আমাদের উচিত নয়। পাকিস্তান ইতোমধ্যেই রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হয়েছে, বিশেষ করে চীনের। আফগানিস্তানে রাশিয়ার আগ্রহ ও লক্ষ্য , বিশেষ করে চীনের আসলে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পাকিস্তানের অধিক কাছাকাছি। চীন ও রাশিয়া উভয়েই একটি স্থিতিশীল আফগানিস্তান চায় এবং তালিবান শাসনে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। তারা আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাাষ্ট্রের বিদায় চায়। এদিকে তালিবানের সাথে অবশ্যই পাকিস্তানের সম্পর্ক রয়েছে এবং যৌক্তিকভাবেই অস্থিতিশীল আফগানিস্তান তার জন্য লাভজনক। আফগানিস্তানে ভারতের গভীর উপস্থিতিকে জটিলতার শিকার করতে চায় পাকিস্তান।

 



 

Show all comments
  • Obaidur Rahman ২৯ জুলাই, ২০১৭, ৮:১১ এএম says : 0
    মুসলমানরা এক হয় তাহলে আমেরিকা​ কি তার বাবা​ ও কি​ছু করতে পারে না
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ