Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টাকা আছে কই

প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৫ পিএম, ৯ মার্চ, ২০১৬

হাসান সোহেল : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে॥ ৮শ’ কোটি টাকা খোয়া যাওয়ার ঘটনা নিয়ে সঠিক তথ্য মিলছে না। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কিছু টাকা পাওয়ার কথা জানিয়েছে। বাকিটাও নাকি আসবে। এখন সবার মনেই প্রশ্ন - টাকা আছে কই? এদিকে আলোচিত ঘটনা সম্পর্কে খোদ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জেনেছেন মাসখানেক পর। কোন ব্যাংক থেকে এই টাকা লোপাট করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দিষ্টভাবে তা এখনো বলেনি। অথচ ইতোমধ্যে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অপরদিকে এ টাকা লোপাটে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো দোষ নেই বলেও উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকও ঘটনার দায় অস্বীকার করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্ভরশীল সূত্র জানিয়েছে, হ্যাকার চক্রটি আরও বড় অঙ্কের অর্থ চুরির চেষ্টা করেছিল। শুধু ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের চতুরতায় বাংলাদেশ তা থেকে বেঁচে যায়। না হলে আরও বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারত। এদিকে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের পক্ষে সাফাই গাইলেও এ দায় বাংলাদেশ ব্যাংক এড়াতে পারে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কারণ সব ধরনের নিয়ম মেনেই এই হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া এই চক্রের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত থাকার সন্দেহ করা হচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কর্মকর্তার পাসপোর্ট জব্দ করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে বেশ কিছু কর্মকর্তার ওপর নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। সূত্র জানায়, যাদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টে কর্মরত।
অনেকের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দুর্বলতায় এ ঘটনা ঘটেছে। ওই শাখার দায়িত্বে থাকা মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমানের তদারকির অভাবকেও দায়ী করেছেন অনেকে। এদিকে এই শাখার গোপনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন সুইফট কোড কীভাবে জালিয়াত চক্র জানল। একই সঙ্গে আগের দিনের ট্রানজেকশনের তথ্য পরের দিন সকালে রিকনসিলেশন করা হয়। সে সময়ও বিষয়টি কেন ধরা পড়ল না। এছাড়া ট্রানজেকশনের তথ্য স্ক্রিনে দেখালেও (ফিলিপাইনে টাকা চলে গেছে) বাংলাদেশ কেন ধরতে পারেনি বিষয়টি। অথচ ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকই বাংলাদেশকে অর্থ চুরির ঘটনা জানিয়েছে। একই সঙ্গে আরও বড় ধরনের জালিয়াতি থেকে রক্ষা করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সাফাই গাওয়া প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে বলেন, কর্মকর্তাদের গাফিলতি বা যোগসাজশ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা জরুরি। এ জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা দরকার। একই সঙ্গে তদন্ত কমিটিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে যে তফাত পরিলক্ষিত হচ্ছে তাও খতিয়ে দেখা দরকার বলে উল্লেখ করেন প্রবীণ এই অর্থনীতিবীদ। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের একান্ত গোপনীয় তথ্য হ্যাকিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি হলেই বিষয়টি বের হবে।
এদিকে রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির ঘটনা চাউর হওয়ার পর থেকে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক জরুরি বোর্ড সভা এবং ব্যাংকার্স সভা ডেকেছে। বোর্ড সভা মাসের মাঝামাঝি হলেও মাসের প্রথম ১০ দিন শেষ হতে না হতেই জরুরি সভা ডেকেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রিজার্ভের টাকা ফেরত আনাসহ করণীয় ঠিক সকরতেই এই সভা করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতনদের নিয়ে ব্যাংকার্স সভা ডেকেছে। ব্যাংকার্স সভায় সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাংকগুলোকে কঠোরভাবে হুশিয়ারি করা হয়েছে। অনলাইনে সব ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রেও কঠোর নজরদারির জন্য বলা হয়েছে।
অপরদিকে ব্যাংক রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর মোট চুরি হওয়া টাকার হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চুরি হওয়া মোট অর্থের পরিমাণ ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে জানা গেছে। যার মধ্যে শ্রীলঙ্কায় পাচারকৃত ২০ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি বাকি ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারও পুরোপুরি উদ্ধার করা যাবে বলে আশার আলো দেখছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির ঘটনার এখন পর্যন্ত হ্যাকারদের উপরই সন্দেহের তীর। আর অচিরেই এই অর্থ ফেরত আনা হবে। সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে তফসিলী ব্যাংকগুলোর সাথে জরুরি বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি জানান, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে গচ্ছিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কায় এবং ৮১ মিলিয়ন ডলার ফিলিপাইনে স্থানান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় সেখানে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা হয়েছে। আর ফিলিপাইনে স্থানান্তরিত অর্থ উদ্ধারে চেষ্টা চলছে, সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে সহযোগিতা করছে।
ফিলিপাইনের পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার বিষয়ে শুভঙ্কর সাহা বলেন, চুরি হওয়া কিছু অর্থ ব্যাংকিং মাধ্যমে মজুদ আছে, কিছু অর্থ নগদ করা হয়েছে। তবে দেশটির অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের আমাদের চুক্তি আছে। তাদের সহায়তায় পুরো অর্থটাই আমরা ফেরত পাব বলে আশা করছি। তারা খুব গুরুত্বের সাথে এটা নিয়ে কাজ করছে। সেদেশের আদালতও এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষেই রায় দিয়েছে।
বৈঠকের বিষেেয় তিনি বলেন, আমরা আজকে সব ব্যাংককে নিয়ে বসেছি, কারণ সব ব্যাংকেরই বৈদেশিক লেনদেন আছে, অনেক ব্যাংকেরই বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকের অনেক অ্যাকাউন্টের সাথে লেনদেন আছে। এজন্য সাইবার সিকিউরিটি অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে যা যা করণীয় সে বিষয়ে মতবিনিময় করেছি ও নির্দেশনা দিয়েছি। বিশ্বব্যাংকে আইটি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে আসা রাকেশ আস্তানা বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি গভর্নেন্স নিয়ে একটি প্রকল্পে কাজ করছেন। এ বিষয়ে সহায়তা চেয়ে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকেও আবেদন পেয়েছি। ব্যাংকিং সেক্টরের স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কাজ করতে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ে জারিকৃত সার্কুলার মেনে চলতে বলা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, রিজার্ভের বিষয়ে তদন্ত চলছে। যেসব অ্যাকাউন্টে রিজার্ভের অর্থ স্থানান্তরিত হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে ফিলিপাইনের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষ সেসব অ্যাকাউন্ট আদালতের অনুমতি নিয়ে জব্দ করেছে। এছাড়া কারা কারা এর সাথে জড়িত সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যেক লেনদেনের কিছু নিয়ম আছে। যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের হয়ে অর্থ স্থানান্তরের আবেদন পাঠানো হয়, তখন তাদের অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তা যাচাই করার বিধান রয়েছে। সেটা তারা করেছে কিনা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এর আইনগত দিকগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। রিজার্ভের অর্থ চুরির বিষয়ে এক মাস যাবৎ সরকার বা অর্থমন্ত্রীকে অবহিত না করা সম্পর্কে আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, তদন্তের স্বার্থে যখন জানানো প্রয়োজন তখন জানানো হয়েছে। তদন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এ আশঙ্কায় অনেককেই জানানো হয়নি।
এসময় উপস্থিত বিশ্বব্যাংকের সাবেক আইটি বিশেষজ্ঞ রাকেশ আস্তানা জানান, আমরা এখনো তদন্তের মধ্যে আছি। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত বলা যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যতটুকু দেখেছি মনে হয়েছে এটা আনঅথোরাইজড ট্রানজেকশন। বাইরে থেকেই এ হ্যাকিং করো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কারও যোগসাজশ আছে কিনা তা বলা যাচ্ছে না।
সূত্র মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আরও বড় অঙ্কের অর্থ চুরির চেষ্টা করেছিল বিদেশি হ্যাকাররা। প্রথমে চারটি অর্ডারের মাধ্যমে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ১০ কোটি ডলার হাতিয়ে নিতে সফল হয় চক্রটি। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই অ্যাকাউন্ট থেকে এর পর একই কায়দায় আরও কয়েকটি অর্ডার দেওয়া হয়। এসব অর্ডারের মাধ্যমে দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ ৩০ কোটি ডলার চুরির চেষ্টা করা হয়।
সূত্র আরও জানায়, পেমেন্ট সিস্টেমে এত অল্প সময়ে বড় অঙ্কের বেশ কয়েকটি অর্ডারের বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে ফেডারেল রিজার্ভ বাকি অর্থ পরিশোধ বন্ধ রাখে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ঢাকা থেকে এ ধরনের পেমেন্ট অর্ডার দেওয়া হয়নিÑএমন তথ্য জানানোর পর বাকি অর্থ চুরির চেষ্টা প্রতিহত করা সম্ভব হয়। অবশ্য এর আগেই ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম চারটি অর্ডারের বিপরীতে ১০ কোটি ডলারের পেমেন্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে পরে আড়াই কোটি ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব হয়েছে। বাকি অর্থ উদ্ধারে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক হাতিয়ে নেওয়া অর্থ উদ্ধারে বিভিন্ন পর্যায় থেকে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো পর্যায়ে গাফিলতি ছিল কি-না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সম্প্রতি এ কাজের জন্য পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাইবার বিশেষজ্ঞ রাকেশ আস্তানা ও তার দলকে। তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন। এ বিষয়ে র‌্যাবের একটি বিশেষজ্ঞ দলও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও রাকেশ আস্তানার সঙ্গে বৈঠক করেছে। এদিকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া এই চক্রের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত থাকার সন্দেহে ৮ কর্মকর্তার পাসপোর্ট জব্দ করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে বেশ কিছু কর্মকর্তার উপর নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে হ্যাকড হওয়া টাকার সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশের বিষয়ে কিছু কর্মকর্তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু কর্মকর্তার পাসপোর্টও জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কিছু কর্মকর্তারা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেজন্য তাদের পৃথক নজড়দারি করছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অর্থ চুরির বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক দাবি করেছে, তাদের পেমেন্ট সিস্টেম হ্যাক হয়নি। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকটির মুখপাত্র অ্যান্দ্রে প্রিস্ট বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কোনো প্রমাণ নেই। এ অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে তাদের সিস্টেমে অনুপ্রবেশ বা হ্যাকের কোনো ধরনের ঘটনা ঘটেনি। তার দাবি, ফেডারেল রিজার্ভের পেমেন্ট সিস্টেমের কোনো পর্যায়ে ‘নিয়মবহির্ভূত’ কিছু হয়নি।
যদিও গত মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ ঘটনার জন্য ফেডারেল রিজার্ভকেই দায়ী করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের কাছে টাকা রেখেছি। তারাই এ জন্য রেসপনসেবল। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের দোষ নেই। এ দায় ফেডারেল রিজার্ভের, যারা এটা হ্যান্ডেল করেন, তাদের কোনো গোলমাল হয়েছে। তাদের কোনো দায়িত্ব নেই, এটা হতেই পারে না। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম দিকে বিষয়টি গোপন রাখলেও গত সোমবার টাকা চুরির বিষয়টি বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছে।
সূত্র মতে, ফিলিপাইনের ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ইনকোয়েরে’র গত ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ থেকে ১০ কোটি ডলার মানি লন্ডারিং হয়েছে। ওই খবরে আরও বলা হয়, দেশটির মাকাতি শহরে অবস্থিত রিজার্ভ কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের একটি শাখার মাধ্যমে ওই অর্থ ফিলিপাইনে আসে। চীনা হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা সেখানকার কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়। হ্যাকার দল এ অর্থ প্রথমে ফিলিপাইনে পাচার করে। সেখান থেকে চুরি হওয়া অর্থের এক অংশ পাচার করা হয় শ্রীলঙ্কায়। ওই অর্থ ফিলিপাইনে স্থানান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত হলে সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়। তারা ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুদিনে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দেশটির অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) সঙ্গে বিশেষ বৈঠক করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ফিলিপাইনের মানিলন্ডারিং ইউনিট বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ একাউন্ট থেকে একসঙ্গে ১০১ মিলয়ন মার্কিন ডলার চুরি হয়ে যায়। এক মাস পর গণমাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এ জালিয়াতির তথ্য প্রকাশিত হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এর সত্যতা নিশ্চিত করে। এদিকে সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় এক বিদেশি নাগরিকসহ কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের সত্যতাও বেরিয়ে আসে। বিদেশি নাগরিকের দেয়া বিভিন্ন তথ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছিল ব্যাংকিং খাতে। এ ঘটনার রেশ শেষ হতে না হতেই রিজার্ভ থেকে টাকা চুরির মতো আরও একটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটল, যা কিনা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • Hamid ১০ মার্চ, ২০১৬, ১০:৫৯ এএম says : 0
    তদন্ত কমিটি হলেই বিষয়টি বের হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mozammel ১০ মার্চ, ২০১৬, ১১:০২ এএম says : 0
    বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন সুইফট কোড কীভাবে জালিয়াত চক্র জানল।?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টাকা আছে কই

১০ মার্চ, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ