Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বঙ্গোপসাগরে কার্গো বিমান বিধ্বস্ত : তিন ক্রু নিহত

প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৬ পিএম, ৯ মার্চ, ২০১৬

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার অফিস : কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক এলাকার কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে একটি কার্গো বিমান বিধ্বস্ত হয়ে তিনজন ‘ক্রু’ (কলাকৌশলী) নিহত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। কক্সবাজার বিমান বন্দর থেকে উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে চিংড়ি পোনা বহনকারী ওই কার্গো বিমানটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে নাজিরারটেক ও সোনাদিয়ার মাঝখানে সাগরে বিধ্বস্ত হয়। এতে ওই কার্গো বিমানের পাইলট বেঁচে গেলেও অপর তিন কলাকৌশলী নিহত হন। ইউক্রেনের নাগরিক নিহত তিনজনের নাম কালটুরভ জুলুদিমির, প্যাট্রইভান ও পুলিশ নোলরী বলে জানা গেছে। কার্গো বিমানটি চিংড়ি পোনা নিয়ে কক্সবাজার থেকে যশোর বিমান বন্দরে যাচ্ছিল বলে বিমান বন্দর সূত্রে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বিমান বন্দর থেকে উড্ডয়নের পর কয়েক সেকেন্ডের মাথায় আকাশে ঘুরে গিয়ে সাগরের নাজিরারটেক ও সোনাদিয়ার মাঝখানে সাগরে বিধ্বস্ত হতে দেখেন। বিধ্বস্ত হয়েই দুমড়ে-মুচড়ে সাগরে ডুবে যায়। পানির ¯্রােতে বিমানের পাখাসহ বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্থানীয় যুবকরাই প্রথমে উদ্ধার অভিযানে নামে। তারা ২০টির মতো ফিশিং বোট নিয়ে গোটো এলাকায় অভিযান শুরু করে। তারা মাছ ধরার বোটে করে কূল থেকে দূরে অন্তত ১ কিলোমিটার সাগর থেকে প্রথমে দু’জনকে উদ্ধার করে। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহায়তায় তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তারা। ওই দু’জন থেকে হাসপাতালেই একজনের মৃত্যু হয়।
কক্সবাজার বিমান বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ‘ব্লু ভিশন’ নামের ওই কার্গো বিমানটি সকাল সাড়ে নয়টায় বিমান বন্দর থেকে উড্ডয়নের পর পরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। খবর পেয়ে তারা ফায়ার সাভির্স ও নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সহায়তা নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়। দুপুর নাগাদ বিধ্বস্ত ওই বিমানের ভেতর থেকেই নিহত আরো দু’জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় যুবক জামশেদ ও মাহবুব জানান, তারা অন্তত ২০টি মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে উদ্ধারে গেছেন। তবে প্রায় দেড় ঘণ্টা যাবৎ বিমান বন্দরসহ সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ কিছুই জানেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে দমকল বাহিনী, কোস্ট গার্ড ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
স্থানীয় কাউন্সিলর আকতার কামাল জানান, নাজিরারের অদূরে হওয়ায় বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার দৃশ্য এলাকার লোকজন ও জেলেদের নজরে আসে। তাৎক্ষণিকভাবে তারা বোট নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাইলট ও ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ারকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহন্ত জানান, পোনা বোঝাই করে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে রওয়ানা দিয়ে নাজিরারটেকের অদূরে গিয়ে বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। ঘটনার সাথে সাথে তারা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয় বলেও জানান।
ফায়ার সার্ভিস কক্সবাজার স্টেশনের উপ-সহকারী পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন জানান, স্থানীয় কাউন্সিলর আকতার কামালের দেয়া সংবাদের ভিত্তিতে তারা সাগরে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।
দুর্ঘটনার শিকার ‘ব্লু ভিশন’ নামের কার্গো বিমানটি যশোরের উদ্দেশ্যে সকালে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে রওয়ানা হয়। ওই কার্গো সার্ভিসটি পরিচালনা করতেন মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে আশেক উল্লাহ রফিককে ফোন করলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
খবর নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেনের কয়েকটি কার্গো বিমান কক্সবাজার থেকে খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর এলাকায় চিংড়ি পোনা সরবরাহের কাজে নিয়োজিত ছিল। অভিযোগ উঠেছে এসব পুরানো কার্গো বিমানগুলোর কোনো ফিটনেস না থাকলেও বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ এগুলোর অপারেশেনে কোনো আপত্তি করেনি। এছাড়াও ধারণ ক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত পোনা বহন করাও দুর্ঘটনার একটি কারণ হতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বঙ্গোপসাগরে কার্গো বিমান বিধ্বস্ত : তিন ক্রু নিহত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ