Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পাক-চীন অর্থনৈতিক করিডরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রোধে প্রস্তুত পাকিস্তানি সেনারা

| প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল জুবায়ের হায়াত ভারতকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে ভারতের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর বা সিপিইসি-তে নাশকতামূলক তৎপরতা চালাচ্ছে।

পাকিস্তানের নতুন নৌ ক্যাডেটদের কোর্স সমাপনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে করাচি বন্দরে বক্তৃতা দেয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন। জেনারেল হায়াত অভিযোগ করেন, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যকার ৪৬০০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক করিডর ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’। তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য পাক সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বলে তিনি জানান।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মিরের ওপর মালিকানাসহ নানা ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থান করছে। কাশ্মির নিয়ে বিতর্কে এ পর্যন্ত তিনবার এ দেশ দু’টির মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে সন্ত্রাসবাদকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যকার মতপার্থক্য ও উত্তেজনা কয়েক গুণ বেড়েছে এবং দুই দেশই সন্ত্রাসবাদের প্রতি সমর্থন দেয়ার জন্য একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরোপ করায় বার বার সংলাপের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। কাশ্মিরসহ অতীতের বহু বিষয়ে মতপার্থক্যের নিরসন তো হয়নি বরং পাক-চীন করিডর ইস্যুতে ফের নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে যা কিনা আঞ্চলিক সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে। কারণ যেসব বিষয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে তা দ্বিপক্ষীয়। কিন্তু এবার করিডর ইস্যুতে সৃষ্ট বিরোধে চীনও জড়িয়ে পড়েছে।
বিষয়টি এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে চীন ও ভারতের মধ্যেও সীমান্ত বিরোধ রয়েছে এবং এ দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর। এছাড়া, ভারত সরকার আমেরিকা ও দখলদার ইসরাইলের প্রতি ঝুঁকে পড়ায় ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে চীন ঘেরাও হয়ে পড়তে পারে বলে বেইজিং আশঙ্কা করছে। এই উত্তেজনা ও আশঙ্কার মধ্যেই চীন ও ভারত স¤প্রতি সিকিমসহ বিরোধপূর্ণ অন্যান্য সীমান্ত এলাকায় সেনা মোতায়েন করেছে এবং তারা একে অপরের বিরুদ্ধে ভূমি দখলের অভিযোগ তুলেছে।
চীন ও পাকিস্তান পরিকল্পিত নতুন ‘সিল্করোড’ কাশ্মিরের যে এলাকার ওপর টেনে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ভারত এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। কেননা ভারত ওই অঞ্চলকে তাদের মালিকানাধীন বলে মনে করে। এ কারণে নয়াদিল্লি ভারতের জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখাতে চীনের প্রতি আহবান জানিয়ে ‘সিল্করোড’ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। বর্তমানে কাশ্মিরের যে এলাকার ওপর দিয়ে সিল্করোড তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেখান দিয়েই পাকিস্তান ও চীনের অর্থনৈতিক করিডর নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
স¤প্রতি বেইজিং-এ অনুষ্ঠিত ‘ওয়ান রোড ওয়ান বেল্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে নয়াদিল্লি যোগ না দেয়া থেকে বোঝা যায়, যে এলাকার ওপর দিয়ে ওই রোড নির্মাণ করা হবে তাতে ভারতের প্রবল আপত্তি রয়েছে। এই আপত্তির কারণে ভারত শুধু যে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে বিরোধে জড়িয়ে পড়বে তাই নয় একই সঙ্গে ‘সলামাবাদ-বেইজিং অর্থনৈতিক করিডর’ প্রকল্প বাস্তবায়নও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এ কারণে চীন স¤প্রতি কাশ্মির সঙ্কট নিরসনের জন্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে যদিও নয়াদিল্লি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। বলা হচ্ছে, ইসলামাবাদ পাক-চীন অর্থনৈতিক করিডরে যোগ দেয়ার জন্য নয়াদিল্লির প্রতিও আহবান জানিয়েছে যাতে এটাকে দ্বিপক্ষীয় মতপার্থক্য নিরসনের জন্য সুযোগ হিসাবে কাজে লাগানো যায়।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত স¤প্রতি হুমকি দিয়েছেন, ‘তার দেশ চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে একই সময়ে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত রয়েছে’। এরপরই অর্থনৈতিক করিডর বাস্তবায়নের বিষয়ে ভারতের আপত্তিতে চিন্তিত অনেকে। যাইহোক, অর্থনৈতিক সহযোগিতা আন্তর্জাতিক বিরোধ নিরসনে ভূমিকা রাখে। তাই চীন ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক করিডরও আঞ্চলিক সহযোগিতা বিস্তারের সুযোগ এনে দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন। সূত্র : পার্স টুডে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ