পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, পৃথিবীর প্রায় ৫০টি দেশে খ্রিষ্টান, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে আছে। শতকরা ৯৫ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম একটি মীমাংসিত বিষয়। এ বিষয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কর্তৃক ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে পানি ঘোলা করার কোনো সুযোগ নেই। এদেশ সাম্প্রায়িক সম্প্রীতির দেশ। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম কারো পছন্দ না হলে তারা তাদের প্রভুর দেশে চলে যাক। যেকোনো মূল্যে সকল চক্রান্ত প্রতিহত করা হবে।
কসরে হাদী খানকাহ, ইসলামিক বুদ্ধিজীবী ফ্রন্ট, জাতীয় তাফসির পরিষদের যৌথ উদ্যোগে গতকাল পুরানা পল্টনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন শাহ্ সূফী সৈয়দ আব্দুল হান্নান আল হাদী, মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, এডভোকেট শামসুল আলম, মাওলানা ওমর ফারুক যুক্তিবাদী, এডভোকেট মো. মহিব্বুল্লাহসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ‘সংবিধানের ২ এর ক ধারায় সন্নিবেশিত আছে। অন্যান্য ধারার সাথে এ ধারাও সংশোধন বা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। অন্য ধর্মাবলম্বীদের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিলের দাবি ভিত্তিহীন ও অবান্তর।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী যদি যুদ্ধাপরাধীদের আইন অনুযায়ী বিচারকার্য চলে ও মৃত্যুদ- কার্যকর হয় তবে একই ইশতেহারে থাকা ‘কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী আইন পাস হবে না’ এ অংশটি সংবিধানের অন্তর্ভুক্তি করতে অসুবিধা কোথায়?
নেতৃবৃন্দ ইশতেহারের এই অংশটুকু সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপি ও জামায়াত রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বিষয়টি নিয়ে একটি টু শব্দও করছে না। এতে মুসলমানরা স্তম্ভিত। তারা আরো বলেন, রাষ্ট্রধর্ম যে করলো সে এরশাদ সাহেবও নীরব ভূমিকা পালন করছে। তারা এরশাদ সাহেবকে এ বিষয়ে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
মাওলানা লতিফ নেজামী
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে না বলে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রচারিত খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে, স্পর্শকাতর এ বিষয়ে আবেগতাড়িত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে তা গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে দেখা উচিত।
মাওলানা নেজামী বলেন, সংবিধান একটি দেশের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনা ঈমান-আক্বিদার রূপায়ণ। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি। তাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনার রূপায়ণ ও অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি হিসেবেই গণতান্ত্রিক দায় হিসেবে এবং এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজন করা হয়। মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত বাংলাদেশের সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা অনভিপ্রেত।
তিনি বলেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক দেশে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রুনেই, কমোরস, মিসর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, ওমান, কাতার, সোমালিয়া, তিউনিসিয়ায় ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম। ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম ছাড়াও অন্য কয়েকটি ধর্মকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই খ্রিষ্টধর্ম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত। পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি ও স্পেনে প্রধান ধর্ম রোমান ক্যাথলিক। ডেনমার্ক, জার্মানী, সুইডেন ও ফিনল্যান্ডে লুথেরান ধর্ম প্রাধান্য পায়। আর্জেন্টিনা, কোস্টারিকা, মাল্টা, মোনাকো ও সুইজারল্যান্ডের কিছু ক্যন্টন ও ভাটিকান সিটির রাষ্ট্রধর্ম রোমান ক্যাথলিক। সাইপ্রাস ও গ্রিসে ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অ্যান্ডোরা, ডোমিনিকান রিপাবলিক, এল সালভেদর, প্যারাগুয়ে, পেরু, পর্তুগাল ও স্লোভাকিয়ার সংবিধানে ক্যাথলিক ধর্মকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আর্মেনিয়ায় অ্যাপোস্টলিক চার্চ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত। ইহুদি ধর্মই ইসরাইলের চালিকাশক্তি। বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র নেপাল।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলে সংখ্যালঘুদের নিজ নিজ রাষ্ট্র সৃষ্টির আশংকা অমূলক। তাহলে তো রাষ্ট্রধর্ম গ্রহণকারী দেশগুলোতে সংখ্যালঘুদের পৃথক রাষ্ট্র সৃষ্টির আন্দোলন শুরু হতো।
ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে বাতিল করার লক্ষ্যে রিটের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্তে নেমেছে হিন্দু, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। এটা এদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্য সাম্প্রদায়িকতা ও সকল ধর্মের সহ-অবস্থান ও সম্প্রীতি ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।
এডভোকেট মাওলানা মো. মহিব্বুল্যাহ বলেন, সাম্প্রদায়িক সংগঠন ‘হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের’ ইচ্ছানুযায়ী রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেওয়ার গভীর ও ভয়াবহ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের অপচেষ্টা চলছে। এটা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার গভীর নীলনকশা। যদি রিটের রায়ের নামে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বাদ দেওয়ার কোনো ষড়যন্ত্র করা হয়, তা হলে মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশের ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতা কোনোভাবেই তা মেনে নিবে না বরং এটা সরকারের সমর্থনে হচ্ছে বলে সরকারের বিরুদ্ধে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সেন্টিমেন্ট তৈরি করা হবে এবং দেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। তাই অবিলম্বে এই রিট খারিজ করা হবে দেশের ৯০% ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ তা আশা করে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা ও ঢাকা জেলা সভাপতি আলহাজ সৈয়দ আলী মোস্তফা বলেছেন, সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করার চেষ্টা করা হলে মুসলমানরা নীরবে বসে থাকবে না। সারাদেশে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠলে সরকারকে তা রুখে দিতে পারবে না। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ব্যাপারে দায়িত্ব জ্ঞানহীন, গণবিচ্ছিন্ন একটি অশুভ চক্র সব সময় স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে এদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি ও অশান্তির বীজ বপন করতে চায়। ওই চিহ্নিত গোষ্ঠীটি ইসলাম ও মুসলমানদের বুকে ছোবল মারার চেষ্টা করেছে। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল করার জন্য এই অশুভ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। এ ধরনের কোনো চক্রান্ত হলে সারাদেশে আগুন জ্বলে উঠবে। ঈমানদার জনতা ঈমানী পরীক্ষায় ময়দানে নেমে আসলে তাগুতিশক্তি পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।
গতকাল বিকেলে পুরানা পল্টনস্থ কার্যালয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা জেলা শাখার এক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। সেক্রেটারি আলহাজ শাহাদাত হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা জয়েন্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান, মুহা. হাসমত আলী, মুফতি আব্দুল করীম, আলহাজ আবদুর রাজ্জাক বেপারী, মাওলানা নূর হোসাইন, আতিকুর রহমান প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।