পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : বিদেশী কূটনীতিকদের অনেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতিকে উস্কানিমূলক ও অপমানজনক বলে বিবেচনা করছেন। বিশেষ করে বিদেশীদের সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প যেভাবে ভীতি ছড়াচ্ছেন তাতে তাদের এই মনোভাবের কথা তারা মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের কাছেও তুলে ধরেছেন। সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তারা এ কথা স্বীকার করেছেন।
ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, ল্যাটিন আমেরিকা ও এশিয়ার কূটনীতিকরা সম্প্রতি বিভিন্ন ঘরোয়া কথাবার্তার সময় তাদের অভিযোগ তুলে ধরছেন। বিশেষ করে ট্রাম্পের বক্তব্যের ধরন ও অতি উগ্র কথাবার্তা নিয়ে তাদের আপত্তির কথা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা একথা বলেছেন।
একজন কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প যেভাবে তার বাগাড়ম্বরপূর্ণ কথাবার্তা বলছেন তা নিয়ে বিশ্বের অনেক নেতাই উদ্বিগ্ন। কোনো কোনো দেশের কূটনীতিক ট্রাম্পের ব্যাপারে তাদের আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কর্মকর্তারা অবশ্য সেসব দেশের নাম উল্লেখ করেননি। তবে দুজন কর্মকর্তা বলেন, এসব দেশের মধ্যে ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও মেক্সিকোও রয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, বিদেশী কূটনীতিকদের এভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করা নজিরবিহীন ঘটনা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থীদের নিয়ে ঘরোয়া আলোচনায়ও তারা কোনো মন্তব্য করেন না। বিশেষ করে মার্কিন মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে কখনোই কোনো মন্তব্য করতে চান না। তারা এটা মাথায় রাখেন, যিনিই বিজয়ী হোন না কেন তার সঙ্গেই তাদের কাজ করতে হবে।
ব্রিটেন, মেক্সিকো, ফ্রান্স ও কানাডাসহ কয়েকটি দেশের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সামলোচনা করেছেন। জার্মান অর্থমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল রিপাবলিকান দরের পদপ্রার্থী ট্রাম্পকে শান্তির প্রতি হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। রোববার এক সাক্ষাৎকারে জার্মান মন্ত্রী এই মন্তব্য করেন।
বিদেশী কূটনীতিকদের এই ঘরোয়া অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলা হলে ট্রাম্পের প্রচারণা টিম থেকে সাড়া মেলেনি। জাপান দূতাবাস থেকে এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের দূতাবাসও কোন মন্তব্য করেনি।
মেক্সিকো সেরকারের একজন মুখপাত্র কুটনীতিকদের ঘরোয়া অভিযোগ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেন নি। তবে সে দেশের একজন শীর্ষ কূটনীতিক ক্লডিয়া রুইজ মাসিউ গত সপ্তাহে বলেন, ট্রাম্পের রাজনীতি ও মন্তব্য খুবই বিরক্তিকর ও বর্ণবাদী। অবৈধ অভিবাসন রোধে মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর দেয়াল নির্মাণ করার ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে অবাস্তব কলেও তিনি বর্ণনা করেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, বিদেশী কূটনীতিকরা শতকোটি ডলারের মালিক রিয়েল এ্যস্টেট ব্যবসায়ী ট্রাম্পের বিশেষকরে অভিবাসী ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে উগ্র কথাবার্তায় উদ্বেগ বোধ করছেন। কিন্তু ট্রাম্প কোন কিছুকেই পরোয়া করছেন না। অভিবাসী ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা করেই চলেছেন।
ইউরোপীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের সরকারি প্রতিনিধিরা মার্কিন সরকারী কর্মকর্তাদের কাছে ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষী ঘোষণা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, ট্রাম্পের এ ধরণের উস্কানীমূলক বক্তব্যকে আইএস ও অন্যান্য সহিংস জিহাদী গ্রুপগুলো লুফে নিচ্ছে এবং তারা তরুণদের তাদের গ্রুপে ভেড়াতে ট্রাম্পের এসব উস্কানিমূলক ও বিদ্বেষমূলক কথাবার্তাকে ব্যবহার করছে।
গত ৭ ডিসেম্বর ট্রাম্পের প্রচারণা টিম এক লিখিত বিবৃতি প্রকাশ করে। এতে ট্রাম্প মুসলমানদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কি ঘটছে তা নিয়ে আমাদের দেশের প্রতিনিধিরা চিন্তা ভাবনা না করা পর্যন্ত মুসলমানদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া উচিত। এরপরই এক টিভি সাক্ষাতকারে ট্রাম্প বলেন, বিদেশ ভ্রমনরত আমেরিকান মুসলমানদের দেশে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। তেমনিভাবে মার্কিন সামরিক বাহিনীর মুসলিম সদস্যদের অথবা যুক্তরাষ্ট্রে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আসা মুসলমানদেও তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে। ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছেন যে আন্তর্জাতিক বানিজ্য চুক্তিগুলো তিনি ছিড়ে ফেলবেন এবং মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত মোকাবেলায় বড় ধরণের ভ’মিকা পালনের জন্য মিত্রদের চাপ দেয়া হবে। কূটনীতিকরা উদ্বিগ্ন যে ট্রাম্প বিজয়ী হলে তার অধীনে যুক্তরাষ্ট একঘরে হয়ে পড়বে।
ন্যাটোর একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইউরোপীয় কূটনীতিকরা অবিশ্বাস সন্দেহ সংশয় নিয়ে ট্রাম্পের উত্থান সম্পর্কে অব্যাহতভাবে জিজ্ঞেস করছেন এবং তাদের মধ্যে এখন আতঙ্ক বাড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যখন তাদের অস্তিতের সংকটের মুখে রয়েছে তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরকার এই বাঁক পরিবর্তন নিয়ে তারা অধিকতর উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে অথচ এ সময়ে তাদের যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন হয়ে দেখা দিয়েছে।
মার্কিন সরকারের আরেক সিনিয়র কর্মকর্তা বলছেন, মাঝারি ও নি¤œস্তরের বিদেশী কূটনীতিকদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে। সিনিয়র কূটনীতিকরা এ সম্পর্কে মুখ খুলছেন না। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশী কূটনীতিকরা কখানো কৌতূহল আবার কখানো মজার ছলে তাদের মনোভাব ব্যক্ত করছেন। কখনো কখনো তারা উদ্বেগও প্রকাশ করছেন বিশেষ করে অভিবাসী ও শরণার্থীদের বিরুদ্ধে যেভাবে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে এবং একই সঙ্গে বিদেশীদের সম্পর্কে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে তাতে তাদের উদ্বেগের বিষয়টি আর গোপন খাকছে না।
রিপাবলিকান বৈদেশিক নীতি বিশেষজ্ঞ শতাধিক প্রবীণ ব্যক্তিত্ব অতিসম্প্রতি অঙ্গীকার করেছেন যে তারা ট্রাম্পের বিরোধীতা করবেন। খোলা চিঠিতে তারা বলছেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবগুলো মার্কিন নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার জেনারেল ফিলিপ ব্রিডলাভ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন আমেরিকার মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, এবার আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে ইউরোপীয় মিত্ররা অসংখ্য প্রশ্ন উত্থাপন করছেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি ইউরোপীয় মিত্ররা আগে যা দেখেছে তা থেকে এবারের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। এবার মানুষের মধ্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের আলোচনা তারা দেখছে। যা তাদের উদ্বিগ্ন করে তুলছে।
প্রকাশ্যে কোন কূটনীতিক মুখ না খুললেও কয়েকজন বিদেশী কূটনীতিক স্বীকার করেন যে ট্রাম্পকে নিয়ে তাদের সরকারের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। গত জানুয়ারিতে একজন ব্রিটিশ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন যে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ‘ট্রাম্প যেসব কথাবার্তা বলছেন, আমার দৃষ্টিতে তা কেবল ভুলই নয়, বরং তার এসব বক্তব্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই ও চরমপন্থীদের পরাজিত করার আমাদের প্রচেষ্টাকে অধিকতর কঠিন করে তুলছে।’
চীনা পণ্যের উপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের ট্রাম্পের প্রস্তাব নিয়ে চীন উদ্বিগ্ন কি না প্রশ্ন করা হলে একজন চীনা কর্মকর্তা তাদের দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সাম্প্রতিক এক বিবৃতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষন করেন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইন বিশেষ কোনো প্রার্থী সম্পর্কে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে তিনি বলেন, আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের দায়িত্ব রয়েছে।
ইরান, ইরাক, সউদী আরব ও ভিয়েতনামসহ অনেক দেশের প্রতিনিধিদের ট্রাম্প প্রকাশ্যেই আক্রমণ করছেন। অবশ্য এসব দেশের প্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজী হন নি। কয়েকজন আমেরিকান বৈদেশিক নীতি বিশেষজ্ঞও স্বীকার করেছেন যে বিদেশী কূটনীতিকরা তাদের কাছেও অভিযোগ করেছেন। কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স থিংক ট্যাংক’র সিনিয়র ফেলো ইলিয়ট আব্রামস বলেন, আমি সেসব কূটনীতিকের সাথে কথা বলেছি তাদের সবাই ট্রাম্পের চিন্তাভাবনা নিয়ে বিস্ময় ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষকরে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ নিয়ে ট্রাম্পের চিন্তাভাবনা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। ইলিয়ট আব্রামস সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত যুক্তরাস্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলে মধ্যপ্রাচ্য বিষয় দেখভাল করতেন। সূত্র : সিএনএন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।