পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এহসান আব্দুল্লাহ : সংঘর্ষ, কোন্দল, নারী-কেলেংকারী, অপহরণ,মাদক ব্যবসা, শিক্ষক লাঞ্ছনা আর আধিপত্য বিস্তার এ যেন ছাত্রলীগের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। প্রতিদিনই দেশের কোন না কোন স্থানে এইসব ঘটনায় শিরোনাম হয় মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্যবাহী এ ছাত্র সংঘঠনটি। আর প্রতিটি ঘটনার পরই দায়সারা বক্তব্য ও লোকদেখানো বহিষ্কার এর মাধ্যমে চলে এ সংগঠনের শাস্তি প্রদানের পর্ব। অথচ পরবর্তীতে বিভিন্ন অনুসন্ধানে দেখা যায় এই বহিষ্কৃত নেতারাই ভবিষ্যতে দলের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন অথচ বাদ পড়েন ত্যাগ স্বীকার করা কর্মীরা। ফলে শাস্তির তোয়াক্কা না করেই পুনঃঅপরাধে জড়িয়ে পড়েন এইসব নেতা কর্মীরা।
সম্প্রতি কর্মীদের এইসব উচ্ছৃঙ্খল কর্মকান্ডের পাশাপাশি উঠে এসেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিলাস বহুল জীবন যাপনের খবর। গত বুধবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক সাধারণ সভায় উঠে আসে এইসব তথ্য। কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সায়েম খান তার নির্ধারিত বক্তব্য দিতে গিয়ে এইসব তথ্য তুলে ধরে তার জবাব চান ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে। এক পর্যায়ে তাকে বক্তব্য দিতে বাধা দেয়া হয় এবং বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। সভায় সায়েম খান বলেন, আপনারা (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) এত টাকা বাসা ভাড়া দেন সেই টাকা পান কোথায়? আপনাদের টাকার উৎস কি? তিনি ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মানাধীন শেখ রাসেল টাওয়ার এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন এর নিকট হতে চাদা তোলার ও অভিযোগ তোলেন এবং তার কাছে এ সম্পর্কিত তথ্যপ্রমাণ আছে বলে জানান। সায়েম খানের এইসব অভিযোগের জবাবে সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন বলেন ছাত্রলীগের জন্য নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আমাদের মাসে দুই লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা দেন। তখন সায়েম খান বলেন সেই টাকাতে তো আমার ও ভাগ আছে, আমার ভাগ কোথায়? সভায় ছাত্রলীগ নেতাদের এইসব বিলাসী জীবন যাপনের প্রতি প্রশ্ন তুলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের রোষানলেও পড়তে হয়েছে তাকে। এর আগে ১৩ জানুয়ারি হেলিকপ্টারে করে ঈশ্বরদীতে এক সম্মেলনে যোগ দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে প্রতিদিনই শিরোনাম হচ্ছে ছাত্রলীগ। এইসব নিয়ে খোদ সরকার দলীয় নেতারাই বিব্রত বোধ করছেন। ২০০৯ সালের ৩ এপ্রিল ছাত্রলীগের এইসব কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে সংগঠনটির ‘সাংগঠনিক নেত্রী’র পদ থেকে ইস্তফা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরআগে আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২৫ ফেব্রæয়ারী ২০১৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ছাত্রলীগকে খারাপ খবরের শিরোনাম না হতে পরামর্শ দেন এবং ২৪ জানুয়ারী ২০১৭ সোহরোওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত ছাত্রলীগের পুনর্মিলনীতে ছাত্রলীগকে শপথ পাঠ করিয়ে খারাপ খবরের শিরোনাম না হতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ করেন। কিন্তু তারপরেও থেমে নেই এ সংগঠনের খারাপ খবরে শিরোনাম হওয়ার দৌড়। বরং নিত্য নতুন ঘটনায় তারা প্রতিনিয়তই খারাপ খবরের শিরোনাম হয়ে চলছে। সর্বশেষ ২০ এপ্রিল ২০১৭ তে প্রধানমন্ত্রীর ভূটান সফরশেষে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে সংগঠনের বিভিন্ন নেতিবাচক কার্যকলাপ নিয়ে শাসান আওয়ামী লীগের এই সাধারন সম্পাদক।
এত পরামর্শ ও সাবধান বাণীর পরও চলতি বছরের শুরু থেকেই ছাত্রলীগের অপকর্ম শুরু হয় পুর্বের মতোই। এবছরের ৭ জানুয়ারী কেন্দ্রীয় এক নেতার হাতে ঢাবির এক শিক্ষক লাঞ্ছিত হবার ঘটনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাদের খবরের শিরোনাম হওয়ার বছর। ২১ জানুয়ারী আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের দু গ্রæপের সংঘর্ষে আহত হয় বেশ কয়েকজন এবং জব্দ করা হয় বিপুল দেশীয় অস্ত্র। ৯ ফেব্রæয়ারি রাজধানীর গুলিস্তানে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদের সময় মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন ও ওয়ারী থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান পিস্তল উঁচু করে গুলি ছোড়েন। ১৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে কক্ষ দখল করতে রাতভর তান্ডব চালায় ছাত্রলীগ। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাংবাদিককেও মারধর করেন তারা। এর আগে গত বছরের শেষের দিকে এবং চলতি বছরের শুরুর দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ২০টির মতো সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ। এ বছরের ৮ এপ্রিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুড়তে এলে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি ও তার দুই কর্মী। এঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই সাংবাদিককেও আহত করে। ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিংপুল নির্মাণকাজ বন্ধ করতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় ছাত্রলীগ, এসময় তারা রাস্তায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায়। এতে অন্তত ২৫ জন আহত হন। ২০ এপ্রিল বহিষ্কৃত এক ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দেয়ানোকে কেন্দ্র করে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এতে পুলিশ সহ ২৮ জন আহত হয় এবং শাটল ট্রেন বন্ধ করে দেয়া হয়। ছাত্রলীগ নেতাদের চাকরি দেয়ার দাবিতে গত ৩ মে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবীকে ১৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ১৪ জুন টেন্ডার দখলকে কেন্দ্র করে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হক ও সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দাসের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সর্বশেষ ১২ জুলাই বুধবার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের দুইগ্রæপে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের কর্মীরা দা-কিরিচ ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়। ১২ জুলাই মাদারীপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করার দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে ও দুইগ্রæপে সংঘর্ষে জড়ায় মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগ এবং ১৩ জুলাই সিলেট এমসি কলেজে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় কলেজ ছাত্রলীগের হোসেইন গ্রæপ ও টিটু গ্রæপ। উভয় পক্ষই অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে কলেজে মহড়া দেয় পরবর্তীতে টিটু গ্রæপের অনুসারীরা কলেজের হোস্টেলে ভাংচুর করে।
ছাত্রলীগের এইসব কর্মকান্ড নিয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ইনকিলাবকে বলেন, এরা কেউ ছাত্রলীগ না। ছাত্রলীগের ছেলেরা এইসব কাজ করেনা। এইসব কাজ ছাত্রলীগের পদধারী নেতারা এবং ছাত্রলীগের নামধারী কর্মীরা করছে বলার পর তিনি বলেন এরা কেউ ছাত্রলীগ না। এছাড়াও তারকাছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন অপকর্মের কথা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন এরা কেউই ছাত্রলীগ না। কে ছাত্রলীগ আর কে ছাত্রলীগ না তা আমি আর সাধারণ সম্পাদক বলবো।
এব্যাপারে জানার জন্য ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনকে মুঠোফোনে ফোন দেয়া হলে তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।