পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মামলা জটের আশঙ্কা : দেড় বছর যাবত নিয়োগ বন্ধ : বিচারপতি নিয়োগের দাবি আইনজীবীদের
মালেক মল্লিক : উচ্চ আদালতে বিচারপতির সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে সুুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে মোট ৯২ জন বিচারপতি রয়েছেন। এর মধ্যে আপিলে ৬ জন ও হাইকোর্টে ৮৬ বিচারপতি রয়েছেন। চলতি বছর আপিল বিভাগের দু›জন বিচারপতি অবসরে যান। একজন বিচারপতি মুত্যুবরণ করেন। সর্বশেষ গত ৭ জুলাই অবসের যান আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। হাইকোর্টে গত দুই বছরে অবসরে যান দশজন বিচারপতি। চলতি বছর অবসরে যাবেন আরো ২ জন। প্রধান বিচারপতির আটজন অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ প্রেরণ করলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি এখনো। এমন অবস্থায় উচ্চ আদালতে বিচারপতি সংকট দেখা দিয়েছে। উভয় বিভাগে চার লক্ষাধিক মামলা বিচার কার্যক্রম চালাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারকের প্রয়োজন বলে মনে করেন আইনজীবীরা। কিন্তু দেখা যায়, দেড় বছরে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের কোন বিচারকই নিয়োগ হয়নি। তাদের মতে, এতে করে ব্যাহত হচ্ছে উচ্চ আদালতের বিচারকার্য। বাড়ছে মামলার জট ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি। বিচারিক সেবার মান বৃদ্ধি ও মামলার জট নিরসণে দ্রুত বিচারক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন।
সংবিধানে উচ্চ আদালতে বিচারকের কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করা নেই। প্রধান বিচারপতির পরামর্শ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট সময়ে সময়ে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সংখ্যা নির্ধারিত না থাকলেও বর্তমান সরকারের সময় হাইকোর্টে ১০৪ জন বিচারক কমর্রত ছিলেন। বর্তমানে হাইকোর্ট অঙ্গনে কমর্রত রয়েছেন ৮৬ জন। সেই হিসেবে এখন কম রয়েছেন ১৬ জন বিচারক। যদিও মামলা দায়েরের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যরিস্টার শফিক আহমদে ইনকিলাবকে বলেন, বিচারপতি সংকট ঠিক এটা বলা যাবে না। জনসংখ্যার অনুপাতে অপরাধ যেমন বাড়ছে মামলাও বাড়ছে। তবে আমার মনে হয় দ্রুত সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া উচিত। যদি লজিস্ট্রিক সার্পোটসহ সব ঠিক থাকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, বিচারক নিয়োগে (্আইনজীবীরা) আমরা তো কিছু বলতে পারি না। এটা সরকারের বিষয়। বিচারিক সেবা বৃদ্ধি করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন। এতে করে মামলার জট ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমছে। দ্রুত পর্যাপ্ত সংখ্যাক বিচারক নিয়োগ দেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্রে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের মোট বিচারপতি নয়জন। এর মধ্যে চলতি বছর গত ১লা জানুয়ারী বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আপিলে থাকেন আটজন বিচারপতি। গত ১৪ মার্চ মো. নিজামুল হক অবসরে যান। এতেত করে সাতজন থাকেন দায়িত্ব পারন করেন।। গত ৭ জুলাই বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বিদায় নেন। এখন আপিলে ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন।
বছর শুরুতে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি ছিলেন ৯০ জন ছিলেন। এর মধ্যে গত বছর ১৫ ডিসেম্বর বিচারপতি জে এন দেব চৌধুরী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদ, বিচারপতি শামীম হাসনাইন, কামরুল ইসলাম সিদ্দীকী অবসের যাবেন। এ বছর শেষে দিকে বিচারপতি মো. মিজানুর রহমান ভুঁঞা, বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক অবসরে যাবেন। এতে করে বছর শেষে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি থাকবেন ৮৪ জন। উভয় বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়াবে ৯০তে।
বর্তমানে আপিল বিভাগে ১৩ হাজার ৬৭২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বছরের শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট উভয় বিভাগে মামলা ছিল চার লাখ ২৭ হাজারের বেশি। আইনজীবীরা মনে করেন, শূন্য পদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেয়া এবং আরো একটি বেঞ্চ গঠন করলে মামলা নিষ্পত্তির হার আরো বৃদ্ধি পেত। হ্রাস পেত মামলার জট। এজন্য আইন প্রনয়ণে কথাও বলেছেন তারা। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারাও বহুবার সৎ ও দক্ষ বিচারকে নিয়োগের দাবি জানিয়েছে আসছে। স্বয়ং প্রধান বিচারপতিও বিচার বিভাগের সেবার মান বৃদ্দির জন্য সরকারের সুনজর কামনা করেছিলেন। গত ২৪ ডিসেম্বর বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‹যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখ মানুষের জন্য ১০৭, কানাডায় ৭৫, যুক্তরাজ্যে ৫১, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ এবং ভারতে ১৮ বিচারক রয়েছেন। অথচ বাংলাদেশে ১০ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ১০ জন বিচারক আছেন। জনসংখ্যা এবং মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ করা এখন সময়ের দাবি।
সূত্রে জানা যায়, বিগত বিএনপি সরকার আপিল বিভাগে বিচাপতির সংখ্যা পাঁচ থেকে সাতে উন্নীত করেছিল। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালের ৯ জুলাই এই সংখ্যা ১১ তে উন্নীত করে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও একাধিক বেঞ্চ গঠনের লক্ষ্যে বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হয়। কিন্তু ওই সময় বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো হলেও শূন্য পদে প্রায় দেড় বছর ধরে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে তিনজন বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর শুধু বিচারক কমছেই। আর নিয়োগ নেই।
২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সরকার ১০ জনকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে দু’বছরের জন্য নিয়োগ দেয় সরকার। গত দুই বছরে উচ্চ আদালতে আর কাউকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়নি। যদিও গতবছরের আগস্টে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে সেপ্টেম্বরে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় থেকে হাইকোর্টে নিয়োগের জন্য আটজনের নাম প্রস্তাব করে সুপারিশ পাঠানো হয়। এ তালিকা আইন মন্ত্রণালয় হয়ে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে বলে জানা যায়। তবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে এই সুপারিশ প্রেরণ করা হলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি এখনো।
দুটি বেঞ্চ পুনর্গঠন : আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়েছে। গত ৬ জুলাই প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ পুনর্গঠন সংক্রান্ত আদেশ জারি করেন। পুনর্গঠন আদেশ অনুযায়ী আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চে এখন তিনজন করে বিচারক দায়িত্ব পালন করবেন। আপিল বিভাগের দুই নম্বর বেঞ্চে নেতৃত্বে আছেন সিনিয়র বিচারক বিচারপতি মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা। বিচারপতি নাজমুন আরা অবসরে যাওয়ায় পর ওই বেঞ্চে বিচারকের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছিলো দুই’য়ে। পরবর্তীতে ওই বেঞ্চে বিচারক বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিককে আপিল বিভাগের দুই নম্বর বেঞ্চে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের এক নম্বর বেঞ্চে দায়িত্ব পালন করতেন চারজন বিচারক। পূন গঠনের পর এক নম্বর বেঞ্চেও বিচারকের সংখ্যা দাড়াল তিন জন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।