পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
একলাছ হক : প্রচুর ক্যালরি ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল লটকন। ব্যাপক চাহিদা ও অর্থনৈতিক সাফল্যের ফলে নরসিংদীতে দিন দিন বাড়ছে লটকনের চাষ। সেই সাথে বাড়ছে লটকন বাগানের সংখ্যা। জানা যায়, গত বছরের ন্যায় এ বছরও জেলার বেলাব, শিবপুর, মনোহরদী ও রায়পুরা উপজেলায় প্রায় চলতি বছর নরসিংদী জেলায় ১ হাজার ৩৪২ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হয়েছে। বাণিজ্যিক চাষাবাদের আওতার বাইরেও বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে লটকন গাছ রয়েছে যা কৃষি বিভাগের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত করা নেই। নরসিংদীর পাহাড়ি এলাকার কৃষকের অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দিয়েছে এক সময়কার অপ্রচলিত ফল লটকন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজার দখল করতে পারায় এই ফলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় দিনে দিনে সোনালী ভবিষ্যৎ গড়ে উঠছে এখানকার লটকন চাষিদের। নরসিংদীর স্থানীয় বাজারে চলতি মৌসুমে প্রায় ২০ কোটি টাকার লটকন বেচাকেনা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. লতাফত হোসেন। জানা গেছে, প্রায় ৩০ বছর আগে বেলাবো উপজেলার লাখপুর গ্রামের মরহুম হাসান আলী সরকার এলাকায় স্বল্প পরিসরে প্রথম লটকনের আবাদ শুরু করেন। এরপর থেকে বেলাবো ও শিবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লালমাটির এলাকায় লটকন চাষের প্রসার ঘটতে থাকে। লটকনে লাখপতি নরসিংদীর চাষিরা চলতি বছর ১৬ হাজার ৮২৭ মেট্রিক টন লটকনের ফলন পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। নরসিংদীর লাল মাটির সবুজ পাহাড়ী এলাকায় প্রায় ১১৫ গ্রামে লটকনের ব্যাপক চাষ করা হয়। পাশাপাশি রায়পুরা উপজেলার মরজাল, বেলাব উপজেলার আমলাব, উয়ারি-বটেশ্বর, লাখপুর, শিবপুরের জয়নগর, আজগিতলা এবং মনোহরদী উপজেলার গোতাশিয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় এর চাষ হয়। তবে জেলার শিবপুর ও বেলাব উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকনের বাগান রয়েছে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, শিবপুর ও বেলাবো উপজেলার লাল রংয়ের উঁচু মাটিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকায় এখানকার মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়া রায়পুরা ও মনোহরদী উপজেলার কিছু কিছু এলাকার মাটিও লটকন চাষের উপযোগী। গাছের গোড়া থেকে শুরু করে প্রধান কান্ডগুলোতে ছড়ায় ছড়ায় ফলন হয়। মাটি ও জাত ভেদে টক ও মিষ্টি দুই প্রকারের লটকনই এ অঞ্চলে উৎপন্ন হয়। চারা লাগানোর ৩ থেকে ৫ বছর পর ফল আসা শুরু করে। একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে মৌসুমে পাঁচ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। লটকন চাষিরা জানান, অন্যান্য ফলের তুলনায় লটকনের ফলন অনেক বেশি হওয়ায় তারা এর চাষ করেন। বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামের চাঁন মিয়া প্রতি বছর লটকন চাষ করে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা আয় করেন। শিবপুর উপজেলার জয়নগর গ্রামের বাচ্চু মিয়া বছরে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার লটকন বিক্রি করে থাকেন। সোনাতলা গ্রামের আ. মালেক ভুঞা বছরে বিক্রি করেন ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। এ ফলের বেচাকেনাকে ঘিরে জেলার মরজাল ও শিবপুর বাজারে গড়ে উঠেছে লটকনের বৃহৎ বাজার। প্রতিদিন ভোরে দেশের বিভিন্ন জেলার পাইকারি ক্রেতারা এসে এসব বাজার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন লটকন। বেলাব, বারৈচা, মরজাল, চৈতন্য বাজারে পাইকারি ও খুচরা প্রতিদিন লটকন ক্রয়-বিক্রয় হয়। পাইকারি দরে গাছ থেকে প্রতিকেজি লটকন বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৬০ টাকা করে। খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৭০ থেকে ১০০ টাকা করে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২০০৮ সাল থেকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে নরসিংদীর এই সুস্বাদু ফল। বলাবো উপজেলার লাখপুর গ্রামের মো. মানিক মিয়া বলেন, এ বছর আমার বাগানে আশাব্যাঞ্জক ফল পেয়েছি। দামও পেয়েছি সন্তোষজনক, এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫ লাখ টাকায় লটকন জমিতেই বিক্রি করে দিয়েছি। উয়ারি-বটেশ্বর গ্রামের আহসানউল্লাহ বলেন, প্রচুর চাহিদা, লাভজনক ও সহজে লটকনের আবাদ করা যায় এবং গাছের রোগবালাই কম হওয়ায় এ এলাকায় মানুষ এর ব্যাপক চাষাবাদ করে। চাষী এবং ব্যবসায়ীদের দাবি এ অঞ্চলের লটকন চাষাবাদে সরকারি পৃষ্টপোষকতা, সরবরাহ, বাজার ব্যবস্থাপনা করলে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মূদ্রা আয় করা যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।